Take a fresh look at your lifestyle.

কে এই গায়েত্রী অমর সিংহ?

0

কক্সবাজার পোস্টিংয়ে এসপি বাবুলের পরিচয়, ঘনিষ্ঠতা
নিজস্ব প্রতিবেদক
চাঞ্চল্যকর এসপি বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলা নতুন মোড় নেয়ার সাথে সাথে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন এনজিওকর্মী গায়েত্রী অমর সিংহের নাম। মিতুর স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের সাথে এই এনজিওকর্মী গায়েত্রীর পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কের প্রতিবাদ করায় মিতু হত্যাকান্ডের শিকার হন বলে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের দায়ের করা হত্যা মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

আর মামলার সাথে সাথেই দাবানলের মতো একটি প্রশ্ন চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে কে এই এনজিওকর্মী? পুলিশের তদন্ত এবং মিতুর বাবার কাছ থেকে জানা গেছে সেই এনজিওকর্মীর পরিচয়। তার পুরো নাম গায়েত্রী অমর সিংহ। তিনি বর্তমানে সুইজারল্যান্ড অথবা পূর্ব আফ্রিকার কোনো দেশে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা-ইউএনএইচসিআরের প্রটেকশন অফিসার হিসেবে কর্মরত। তবে তার অবস্থান সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত নয় পুলিশ। মামলার বিষয়ে তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানা গেছে।
দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, গায়েত্রী অমর সিংহ জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা-ইউএনএইচসিআরের ফিল্ড অফিসার হিসেবে কক্সবাজারে কর্মরত ছিলেন। তখনই তার সঙ্গে বাবুল আক্তারের সম্পর্ক হয়। ব্যক্তিগত জীবনে গায়েত্রী বিবাহিত এবং তার একটি ছেলে রয়েছে।
বাবুলের বিরুদ্ধে শ্বশুরের দায়ের করা হত্যা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, বাবুল আক্তার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কক্সবাজার জেলায় চাকরি করার সময় তার সঙ্গে গায়েত্রীর দেখা হয়। সেখানে তাদের মধ্যে একটি সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারা কক্সবাজারের মারমেইড বিচ রিসোর্টে একান্ত সময় কাটিয়েছেন বলেও পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।
সম্পর্কের বিষয়টি জানাজানি হয় ২০১৪ সালে। সেসময় বাবুল সুদানে জাতিসংঘের মিশনে ছিলেন। এ সময় তার বাসায় দুটি বই উপহার পাঠান গায়েত্রী। এছাড়াও বাংলাদেশে রেখে যাওয়া বাবুলের মোবাইলে ২৯টি মেসেজও পাঠান তিনি। সর্বশেষ মিতু হত্যার কয়েকমাস আগে বাবুল একটি প্রশিক্ষণে থাকা অবস্থায় গায়েত্রী তার বাসায় দুটি বই উপহার পাঠান। বই দুটির নাম তালিবান ও বেস্ট কেপ্ট সিক্রেট।
তালিবান বইটির ৩ নম্বর পৃষ্ঠায় গায়েত্রী নিজ হাতে একটি বার্তা লিখে দেন। সেখানে লেখা ছিল, ‘আমাদের ভালো স্মৃতিগুলো অটুট রাখতে তোমার জন্য এই উপহার। আশা করি এই উপহার আমাদের বন্ধনকে চিরস্থায়ী করবে। ভালোবাসি তোমাকে, গায়েত্রী।’
একই বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় গায়েত্রী তাদের প্রথম দেখা, প্রথম একসঙ্গে কাজ করা, প্রথম কাছে আসা, মারমেইড হোটেলে ঘোরাফেরা, রামু মন্দিরে প্রার্থনা, রামুর রাবার বাগানে ঘোরাফেরা এবং চকরিয়ায় রাতে সমুদ্রের পাশ দিয়ে হাঁটা ইত্যাদি স্মৃতির কথা উল্লেখ ছিল।
এছাড়া বেস্ট কেপ্ট সিক্রেট নামের বইয়ের ২য় পাতায় গায়েত্রীর নিজ হাতে লেখা ছিল ‘তোমার ভালোবাসার গায়েত্রী (ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করা)’।
এজাহারে মিতুর বাবা জানান, এসব ঘটনায় বাবুল ও মিতুর পারিবারিক অশান্তি চরমে পৌঁছে। বাবুলের এ ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ডের পপ্রতবাদ করলে তিনি মিতুকে নির্যাতন করেন বলে মিতু মৃত্যুর আগে আমাদের জানান।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে তৎকালীন পুলিশ সুপার ও মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে মামলায় অভিযোগ করেন তিনি। তবে দিন যত গড়িয়েছে মামলার গতিপথও পাল্টেছে। একপর্যায়ে সন্দেহের কেন্দ্রবিন্দুতে আসে স্বামী বাবুল আক্তারের নাম। তদন্তে তার বিরুদ্ধেই হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মঙ্গলবার (১১ মে) ডেকে তাকে হেফাজতে নেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
আর বুধবার (১২ মে) দুপুরে বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন তার শ্বশুর অর্থাৎ মিতুর বাবা। মামলায় আসামি করা হয়েছে আরও ৭ জনকে। তারা হচ্ছেন কামরুল ইসলাম মুছা, কালু, ওয়াসিম, শাহজাহান, আনোয়ার, এহতেসামুল হক ভোলা ও সাকি।

এদিকে স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার প্রধান আসামি বাবুল আক্তারকে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে তাকে আদালতে এনে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার জাহান ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.