Take a fresh look at your lifestyle.

ইসরায়েলি বাহিনীর হত্যার শিকার দেড়শো ফিলিস্তিনি

0

কপোতাক্ষ অনলাইন ডেস্ক
গাজা ও পশিচম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। সোমবার শুরু হওয়া দখলদার বাহিনীর তান্ডবে এ পর্যন্ত দেড়শো ফিলিস্তিনি হত্যার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ১৩৯ জন এবং পশ্চিম তীরে ১১ জনকে হত্যা করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৪০ শিশু ও ২২ নারী রয়েছে। হামলায় আহত হয়েছে প্রায় এক হাজার মানুষ। হামাস পাল্টা প্রতিরোধের চেষ্টায় রকেট হামলা চালালে অন্তত ৮ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে।
গত ৫ দিনের ধারবাহিকতায় শনিবার ভোরে গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এদিন উপত্যকার একটি শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলায় অন্তত ১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়। নিহতদের ৮ জনই শিশু। উদ্ধার তৎপরতা শেষে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় শুক্রবার রাতে ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করলে সেখানেও হামলা হালায় দখলদার বাহিনী। এ সময় ১১ বিক্ষোভকারীকে হত্যা করা হয়।
গত সোমবার থেকে গাজা উপত্যকায় দফায় দফায় হামলা চালিয়ে ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্বরোচিতভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে ইসরায়েলি বাহিনী। শতাধিক বিমান হামলা চালিয়ে সন্তানসম্ভবা নারী, শিশু, সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চালায় দখলদার বাহিনী। বিমান থেকে একের পর বোমা নিক্ষেপ করে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। বোমার আঘাতে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় পুলিশের বিভিন্ন ভবন। এমনকি আবাসিক ভবনেও বিমান হামলা চালায় দখলদার বাহিনী।
পবিত্র লাইলাতুল কদরের রাতেও আল আকসা মসজিদের মুসল্লিদের ওপর হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। বৃহস্পতিবার পবিত্র ঈদের দিনও বিমান হামলার শিকার হয় গাজার বাসিন্দারা। বিমান হামলার পাশাপাশি ইসরায়েলি কামান ও ট্যাংক গোলাবর্ষণ শুরু করলে গাজার হাজার হাজার বাসিন্দা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়।
ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস পাল্টা জবাব দেওয়ার চেষ্টায় সাধ্যমতো রকেট হামলা চালায় দখলদার বাহিনীকে লক্ষ্য করে। হামাসের শতাধিক রকেট হামলায় এখন পর্যন্ত ৮ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে। ইসরায়েলের আসখেলন ও আশদোদ শহরে শুক্রবারও রকেট হামলা চালিয়েছে হামাস। হামাস প্রধান ইসমাঈল হানিয়া বলেছেন, দখলদার বাহিনীর আগ্রাসনের মুখে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে হামাস। ইহুদিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দলের যোদ্ধারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
তিনি বলেন, দখলদার ইসরায়েল যতদিন পর্যন্ত ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ঘৃণ্য অপরাধযজ্ঞ বন্ধ না করবে এবং পবিত্র জেরুজালেম শহর ও আল আকসা মসজিদের ওপর দখলদারিত্বের অবসান না ঘটাবে, ততদিন হামাস যোদ্ধারা প্রতিরোধ লড়াাই চালিয়ে যাবে।
এদিকে, গাজা উপত্যকায় দখলদার বাহিনীর ভয়াবহ তান্ডবের বিপরীতে মুক্তিকামী ফিলিস্তিনিদের পাল্টা প্রতিরোধ ঘিরে পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করেছে। জাতিসংঘ আশঙ্কা করছে এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে তা পূর্ণাঙ্গ মাত্রার যুদ্ধে রূপ নেবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দুই পক্ষকেই উত্তেজনা পরিহারের আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত টোর ওয়ান্সল্যান্ড বলেছেন, দুইপক্ষেই পরিস্থিতি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের দিকে চলে যাচ্ছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গান্টজ অবশ্য বলেছেন, তার দেশের হামলা মাত্র শুরু হয়েছে। অন্যদিকে হামাস প্রধান ইসমাঈল হানিয়া বলেছেন, ইসরায়েল যদি বাড়তে চায় তাহলে আমরা তার জন্য প্রস্তুত। আর তারা থামতে চাইলে আমরা তার জন্যও প্রস্তুত।
অন্যদিকে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি তান্ডবের প্রতি দৃশ্যত সমর্থন জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ইসরায়েলের দিকে যখন হাজার হাজার রকেট ছুটে যায় তখন তাদেরও আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। সাম্প্রতিক সহিংসতা নিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে তার কথা হয়েছে বলেও জানান বাইডেন। তবে নিজ বাড়িঘর থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি বাইডেন। গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচারে বিমান হামলায় নারী, শিশুসহ বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি নিয়েও কথা বলেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এসব উপেক্ষা করে ইসরায়েলের ‘আত্মরক্ষা’র বয়ান হাজির করেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এমন বক্তব্য আসার পর ‘যতক্ষণ প্রয়োজন’ ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
ফিলিস্তিন ইস্যুতে বরাবরই সোচ্চার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান ইসরায়েলি বর্বরতার নিন্দা জানিয়েছেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপে এ নিয়ে কথা বলেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক ইসরায়েলকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া প্রয়োজন। তাদের এখানে হস্তক্ষেপ করা দরকার। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত ইসরায়েলকে একটা শক্ত শিক্ষা দেওয়া। ফিলিস্তিনিদের রক্ষায় একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠনের কথা বিবেচনা করতেও পুতিনের প্রতি আহ্বান জানান তুর্কি প্রেসিডেন্ট। শুক্রবার তুরস্কের ক্ষমতাসীন দল একে পার্টির ভার্চুয়াল সভায়ও এ নিয়ে কথা বলেন এরদোয়ান। তিনি বলেন, যারা চুপ থেকে কিংবা প্রকাশ্যে ইসরায়েলি রক্তপাতকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে, জেনে রাখা উচিত, একদিন তাদেরও পালা আসবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.