Take a fresh look at your lifestyle.

যবিপ্রবি দেশের প্রধান গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত

0

ক্যানসার শনাক্তসহ নয়টি দুরারোগ্য ব্যাধি পরীক্ষা,
বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের ভ্যাকসিন তৈরির উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রতিষ্ঠার মাত্র এক যুগের মধ্যেই দেশের অন্যতম গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চলেছে। বিশ^বিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টারে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নমুনা শনাক্তের পাশাপাশি করোনা ভাইরাসের জীবনরহস্য উন্মোচন করা হয়েছে। একইসাথে কম খরচে করোনা ভাইরাস শনাক্তে ‘সাইবারগ্রিন পদ্ধতি’ উদ্ভাবন করেছে। সরকারি অনুমোদন পেলে সারাদেশের সকল পিসিআর ল্যাবে তার প্রয়োগ ঘটানো সম্ভব এবং এতে সরকারের শত শত কোটি টাকার সাশ্রয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কোভিড পরবর্তী সময়ে ক্যানসার শনাক্তসহ নয়টি দুরারোগ্য ব্যাধির পরীক্ষা এই জিনোম সেন্টারেই শুরুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এখানে একটি অ্যানিমেল হাউসের প্রতিষ্ঠার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এটির নির্মাণকাজ শেষ হলে জিনোম সেন্টারের সহায়তায় যবিপ্রবিতে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের ভ্যাকসিন তৈরি করাও সম্ভব বলে জানান সংশ্লিষ্ঠরা।
সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত স্কোপাস ডেটাবেইস অনুযায়ী, ২০২০ সালে বাংলাদেশে ৪২ শতাংশ গবেষণা প্রবৃদ্ধি করে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় প্রথম স্থান অর্জন করে। একইবছর যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃক প্রস্তুতকৃত বিশে^র সর্বাধিক উদ্ধৃত গবেষকের মধ্যে যবিপ্রবির তিন তরুণ শিক্ষক স্থান পেয়েছেন। যবিপ্রবিতে গবেষণাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত হওয়ায় অধিকাংশ শিক্ষক বয়সে তরুণ হলেও আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত অনেক জার্নালে তাদের গবেষণাপত্র প্রকাশ করে যাচ্ছেন। বর্তমান উপাচার্য এ বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদোন্নতি ও পর্যায়োন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সাময়িকীতে গবেষণাপত্র প্রকাশের শর্ত দেয়ায় গবেষণায় গতি এসেছে বলে জানান শিক্ষকরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন অধ্যাপক বলেন, বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বাংলাদেশের একজন অন্যতম গবেষক। উপাচার্য হিসেবে দাপ্তরিক কাজের চাপ থাকলেও তিনি তার গবেষণাকর্ম অব্যাহত রেখেছেন। ২০২০ সালে তার গবেষণার ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর ৫৭.৮৩৬ যা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এক বিরল অর্জন। তিনি বাংলাদেশ অ্যাকাডেমিক অব সায়েন্সেস-এর একজন স্বর্ণপদক বিজয়ী বিজ্ঞানী ও সম্মানিত ফেলো। তিনি এ বিশ^বিদ্যালয়ে যোগদানের পরপরই যবিপ্রবিকে একটি গবেষণা বিশ^বিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নির্ধারণ করেন। এ লক্ষ্যে যবিপ্রবির শিক্ষকদের গবেষণাভাতা প্রদান শুরু করেন এবং গবেষণার জন্য বিভাগভিত্তিক গবেষণাগারগুলোর উন্নয়নে গবেষণা বরাদ্দ বৃদ্ধি করেন। একইসঙ্গে হ্যাচারি অ্যান্ড ওয়েট ল্যাব, ইউটিএম ল্যাব, অ্যানালিটিক্যাল ল্যাব, জিনোম সেন্টারসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিকমানের ল্যাব প্রতিষ্ঠা করেন। যবিপ্রবিতে একটি অ্যানিমেল হাউসের প্রতিষ্ঠার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এটির নির্মাণকাজ শেষ হলে জিনোম সেন্টারের সহায়তায় যবিপ্রবিতে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের ভ্যাকসিন তৈরি করাও সম্ভব বলে জানান তারা। বিশ^মানের নতুন ল্যাব স্থাপনের জন্য আরও ৫০ কোটি টাকার প্রকল্প সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। সংশ্লিষ্ট একজন অধ্যাপক দাবি করেন ‘গবেষণাকে এ বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মগজে স্থায়ী করে দিয়েছেন বর্তমান উপাচার্য ড. মো. আনোয়ার হোসেন।’ ফলে বিশ^বিদ্যালয়ের র‌্যাংকিং উলম্ফনের পাশাপাশি শিক্ষকরা ব্যক্তিগতভাবে অনেক লাভবান হচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ঠরা জানান, সারাবিশ^ যখন করোনা ভাইরাস অতিমারীতে ঘরবন্দী, বিশ^বিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম যখন বন্ধ, তখন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে করোনা ভাইরাস পরীক্ষায় এগিয়ে আসে যবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ। যবিপ্রবির বর্তমান উপাচার্য একজন অণুজীববিজ্ঞানী হওয়ায় এবং এ বিশ^বিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টারে আরটি-পিসিআর, অটোক্লেভ, এনজিএস মেশিন ও দক্ষ জনবল থাকায় তিনি সরকারকে দ্রুত অনুমতি প্রদানের লিখিত আবেদন জানান। অনুমতিপ্রাপ্তির পর ২০২০ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে যবিপ্রবির জিনোম সেন্টারে করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা শুরু হয়ে চলমান রয়েছে। বিশ^বিদ্যালয়ের এটি নিয়মিত দায়িত্বের অংশ না হলেও দেশমাতৃকার প্রয়োজনে বাংলাদেশের প্রথম বিশ^বিদ্যালয় হিসেবে এই মানবিক বিপর্যয়ে স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসার নজির স্থাপন করে। শুধু করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা নয়, করোনার গতিপথ পরিবর্তনসহ নানা বিষয়ে এ জিনোম সেন্টারে গবেষণা চলমান রয়েছে। বাইরের কোনো ল্যাবের সাহায্য ছাড়াই বিশ^বিদ্যালয়ের নিজস্ব ল্যাবে করোনা ভাইরাসের জীবনরহস্য উন্মোচন করা হয়।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুফল আমরা এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে কিছুটা হলেও পৌঁছে দিতে পেরেছি। আশা করি, কোভিড পরবর্তী সময়ে ক্যানসার শনাক্তসহ নয়টি দুরারোগ্য ব্যাধির পরীক্ষা জিনোম সেন্টারে শুরু করা সম্ভব হবে। আমাদের লক্ষ্য মানবসেবা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর কল্যাণমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন। এ বিশ^বিদ্যালয়টি একটি গবেষণা বিশ^বিদ্যালয় হিসেবে গড়ে উঠবে এবং বাংলাদেশ তথা বিশে^র মধ্যে অন্যতম বিদ্যাপীঠ হিসেবে পরিগণিত হবে।
বিশ^বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী বলেন, শিক্ষা ও গবেষণাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য অবকাঠামোগত সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৩৫ একরের এই বিশ^বিদ্যালয়ের জন্য আরও ৬৫ একর ভূমি অধিগ্রহণসহ মেগা প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছে। চলমান প্রকল্প শেষ হলেই মেগা প্রজেক্ট পেশ করা হবে। সেক্ষেত্রে কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা একটি অপরিহার্য বিষয় বলে তাদের অভিমত।

Leave A Reply

Your email address will not be published.