Take a fresh look at your lifestyle.

সাংবাদিক রোজিনার জামিন আদেশ রবিবার

0

নিজস্ব প্রতিবেদক
কাশিমপুর কারাগারে আটক সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের জামিন শুনানি হলেও আজ (বৃহস্পতিবার) জামিন হয়নি। এ বিষয়ে আগামী রবিবার আদেশ দিবেন আদালত। করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিনের সরকারি নথির ছবি তোলার অভিযোগে হওয়া মামলায় তিনি কারাগারে বন্দি রয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার (২০ মে) দুপুর পৌনে ১টার দিকে ঢাকা মহানগর হাকিম বাকী বিল্লার ভার্চুয়াল আদালতে তার জামিন শুনানি হয়। নথি পর্যালোচনা করে আদেশ দেন বিচারক। শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী এহসানুল হক সমাজি ও প্রশান্ত কুমার কর্মকার।

রোজিনা ইসলামের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেন, মামলার এজাহার ত্রুটিপূর্ণ। আর অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট অনুযায়ী কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়নি। তাই আবেদনকারী জামিন পাওয়ার হকদার।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হেমায়েতউদ্দিন খান হিরন বলেন, এই সরকার সাংবাদিকবান্ধব। সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নয়। এখানে একজন সাংবাদিক অপরাধে জড়িয়ে নিজেকে মুক্ত করতে মুচলেকা দিতে চেয়েছিলেন। আমরা সেই ভিডিও ফুটেজ কোর্টে দাখিলের জন্য সময় চাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, যেহেতু জামিন অযোগ্য মামলা, জামিন দেওয়ার সুযোগ নেই।

এর আগে মঙ্গলবার (১৮ মে) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম রিমান্ড নামঞ্জুর করে জামিন শুনানির জন্য আজ (২০ মে) দিন ধার্য করেন।

ওইদিন শাহবাগ থানার মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) আরিফুর রহমান সরদার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিলেন। বিচারক রিমান্ড নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে তাকে গাজীপুরের কাশিমপুরে অবস্থিত কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে রাখা হয়।

মঙ্গলবার আসামিপক্ষের আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের জামিনের আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক রিমান্ড নামঞ্জুর করেন।

ওইদিন বেলা ১১টার দিকে সিএমএম আদালতে তোলা হয়ে রোজিনাকে। এর আগে তাকে শাহবাগ থানা থেকে আদালতে নেওয়া হয়। সকাল ৮টার দিকে রোজিনা আদালতে পৌঁছান। সে সময় তাকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়।

প্রথম আলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোজিনা ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। তাকে সেখানে একটি কক্ষে ৫ ঘণ্টা আটকে রাখা হয় এবং তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর তার পরিবার তাকে হাসপাতালে নিতে চাইলেও তা দেয়নি পুলিশ। রাতে শাহবাগ থানায় অফিশিয়াল সিক্রেট আইনের (১৯২৩) ৩ ধারায় তার নামে মামলা হয়।

এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, করোনার ভ্যাকসিন ক্রয়, সংগ্রহ সংক্রান্ত গোপনীয় নথি নাড়াচাড়া ও শরীরে লুকিয়ে রেখেছিলেন। এসব নথি জনগণের সামনে এলে অন্যান্য দেশের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে।

তবে সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম দাবি করেছেন, সচিবের সঙ্গে দেখা করার জন্য তিনি পিএস সাইফুল ইসলামের রুমে অপেক্ষা করছিলাম। এসময় পিএস সাইফুল ইসলাম নথিপত্র গায়েবের অভিযোগ তুলে তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। একপর্যায়ে একজন পুলিশ কনস্টেবল ডেকে তার শরীরে হাত দেন। তাকে সাজানো অভিযোগে পিএস আটকে রাখে বলে দাবি করে তিনি বলেন, তিনি কোনো নথিপত্র নেননি। এমনকি মঙ্গলবার আদালত প্রাঙ্গণে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট করার জন্য তার সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধান পরে সাংবাদিকদের জানান, সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম সচিবের পিএসের রুমে ঢুকে মোবাইলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইল-নথির ছবি তোলেন। আর কিছু কাগজপত্র তিনি সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছিলেন। একজন অতিরিক্ত সচিব, পুলিশের একজন সদস্য দেখে তাকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, এটা নিয়ে যেতে পারেন না। তখন পুলিশকে জানানোর পর মহিলা পুলিশ এসেছে। তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপ-সচিব সিব্বির আহমেদ শাহবাগ থানায় সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারি নথিপত্র সরানোর অভিযোগ দায়ের করেছেন।

এদিকে, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে হেনস্তা করা, গ্রেফতার এবং মামলা দায়ের করার প্রতিবাদে সারাদেশে সাংবাদিকসহ প্রগতিশীল নানা সংগঠন প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করছেন। এসব কর্মসূচি থেকে রোজিনা ইসলামের মামলা প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি এবং হেনস্তাকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।

উল্লেখ্য, অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯২৩-এ আইনের ৩ ধারায় বলা হয়েছে, নিষিদ্ধ স্থানে যদি কেউ যায় বা যেতে উদ্যত হয় কিংবা ওই স্থানের কোনো নকশা বা স্কেচ তৈরি করে বা কোনো গোপন তথ্য সংগ্রহ বা প্রকাশ করে তবে সে অপরাধী হবে। ৩ (ক) ধারায় বলা হয়েছে যে, নিষিদ্ধ স্থানের কোনো ফটো, স্কেচ বা নক্সা কেউ প্রকাশ করতে পারবে না। ৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোনো বিদেশি এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে খবর সংগ্রহ করা যাবে না। ৫ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোনো ব্যক্তি গোপনে কোনো সংবাদ পেয়ে থাকলে সেই সংবাদ প্রকাশ করতে পারবে না। কোনো সংবাদপত্র যদি কোনো গোপন সংবাদ প্রকাশ করে তবে প্রতিবেদক, সম্পাদক, মুদ্রাকর এবং প্রকাশক অপরাধী হবেন। এসব কাজে সহায়তা করা অপরাধ বলে গণ্য হবে। ৩৭৯/৪১১ এই ধারার অর্থ হলো, যদি কোনো ব্যক্তি অন্যের অজান্তে কোনো জিনিস চুরি করেন তবে ৩৭৯ ধারায় মামলা দেওয়া হয় ,আর যদি উক্ত মালামালসহ ওই আসামিকে ধরা হয় বা গ্রেফতার করা হয় তবে ৪১১ ধারায় রিকভারি দেখানো হয়, এ ক্ষেত্রে আসামির সাজা হবেই বলে আইনে আছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.