ভারতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের বিপজ্জনক রূপে হোয়াইট ফাঙ্গাসের হানা
কপোতাক্ষ অনলাইন ডেস্ক
করোনার বেড়াজালে আটকে পড়া ভারতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের পর নতুন আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে হোয়াইট ফাঙ্গাস বা সাদা ছত্রাক। মাত্র দুই মাস আগে ভারতে বিরল প্রাণঘাতী ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণ শনাক্ত হলে একে নতুন মহামারি ঘোষণা করা হয়। এরই মধ্যে আবার হানা দিয়েছে হোয়াইট ফাঙ্গাস নামে নতুন আরেক ছত্রাক। এতে আক্রান্ত হতে শুরু করেছে দেশটির বহু মানুষ। দেশটির পাটনা, বিহারে সাদা ফাঙ্গাসের সংক্রমণ দেখা গেছে। আর এই সংক্রমণ ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভারতের চিকিৎসকরা বলছেন, ‘মিউকোরমাইকোসিস’ বৈজ্ঞানিক নামের ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ করোনা থেকে আরোগ্যের পথে বা সুস্থ হয়ে ওঠাদের শরীরে সংক্রমণ ঘটাচ্ছে। মিউকোরমাইকোসিস খুবই বিরল সংক্রমণ। মিউকোর নামে একটি ছত্রাকের সংস্পর্শে এলে এই সংক্রমণ হয়। সাধারণত এই ছত্রাক মাটি, গাছপালা, সার এবং পচন ধরা ফল ও শাকসবজিতে পাওয়া যায়।
ভারতীয় চিকিৎসকরা বলছেন ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’-এর বিপজ্জনক রূপই হলো হোয়াইট ফাঙ্গাস বা সাদা ছত্রাক। এই রোগের প্রভাবে ফুসফুসজনিত সমস্যা তৈরি হতে পারে। পেট, যকৃত, মস্তিষ্ক, নখ, ত্বক এবং গোপনাঙ্গেও ক্ষতি করতে পারে হোয়াইট ফাঙ্গাস।
ভারতের পরস হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট এবং রেসপাইরেটরি মেডিসিনের প্রধান ডা. অরুনেশ কুমার সাদা ফাঙ্গাসের সংক্রমণকে বেশি বিপজ্জনক মনে করছেন। তিনি জানান, এই সংক্রমণ হতে পারে কম প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য। এছাড়া মানুষ এই ফাঙ্গাসের বাহকের সংস্পর্শে আসলে আক্রান্ত হতে পারেন। সেকারণে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন এই চিকিৎসক।
সাদা ফাঙ্গাসে কেবল ফুসফুস নয় বরং শরীরের অন্যান্য অঙ্গ যেমন নখ, ত্বক, পাকস্থলি, কিডনি, মস্তিষ্ক, মুখ আক্রান্ত হতে পারে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, সাদা ফাঙ্গাসের রোগীদের করোনা রোগীদের মতো লক্ষণ দেখা যেতে পারে। আবার দেখা গেল পরীক্ষায় তাদের করোনা ধরা পড়ছে না। সাদা ফাঙ্গাসের সংক্রমণ কেবলমাত্র সিটি স্ক্যান বা এক্সরেতে শনাক্ত করা যায়।
চিকিৎসকেরা আরও জানান, কোভিড-১৯ রোগীদের সাদা ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। কেননা এটি ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। আবার এর লক্ষণও করোনাভাইরাসের লক্ষণের মতোই।
ডা. অরুনেশ কুমার বলেন, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম যেমন ডায়বেটিস, ক্যান্সার রোগী এবং যারা দীর্ঘদিন স্টেরয়েড গ্রহণ করছেন তারা বেশি ঝুঁকিতে থাকায় বিশেষ যতেœর প্রয়োজন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত যেসব রোগী অক্সিজেন সাপোর্ট নিয়েছেন তাদেরও আক্রান্ত করছে এই ফাঙ্গাস।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাতে জানা যায়, দেশটির বিহার রাজ্যে অন্তত চারজন হোয়াইট ফাঙ্গাসে সংক্রমিত হয়েছেন। তবে তারা করোনা আক্রান্ত হননি। কিন্তু করোনার লক্ষণ থাকলেও পরীক্ষায় তা ধরা পড়েনি।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন চার হাজার ২০৯ জন। একইসময়ে নতুন রোগী পাওয়া গেছে দুই লাখ ৫৯ হাজার। এ নিয়ে ভারতে এখন পর্যন্ত মোট প্রাণহানি দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৯১ হাজার ৩৩১ জনে। মোট আক্রান্ত ছাড়িয়েছে দুই কোটি ৬০ লাখ। আশার কথা হচ্ছে দেশটি করোনা পজিটিভের রেট ১২ দশমিক ৫৮ শতাংশে নেমে এসেছে।