Take a fresh look at your lifestyle.

অদম্য শাহিদার গল্প

কারো দয়া ও অনুগ্রহ নয়, আত্মনির্ভরশীল হয়েই এগিয়ে যেতে চান তিনি

0

প্রতিবেদক: শাহিদা খাতুন (৩০)। তার আছে একটি হাত, তিনটি আঙ্গুল। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তাকে থামাতে পারেনি। তিন আঙ্গুলে ভর করেই সর্বোচ্চ ডিগ্রি (মাস্টার্স) অর্জন করেছেন। অসম্ভবকে সম্ভব করেই তিনি প্রমাণ করেছেন অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে অসম্ভব বলে কোন কিছু নেই। কারো দয়া ও অনুগ্রহ নয়, আত্মনির্ভরশীল হয়েই এগিয়ে যেতে চান শাহিদা। প্রতিবন্ধী শিশু ও নারীদের উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চান।

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের মুদি দোকানি রফিউদ্দিনের ছয় সন্তানের মধ্যে চতুর্থ শাহিদা। ১৯৯১ সালে শাহিদার জন্ম হলে গোটা পরিবারে যেন আঁধার নেমে আসে। কারণ, মেয়েটির একটি হাত ও দুটি পা নেই। শাহিদার মা শিমুলিয়ার খ্রিস্টান মিশনে হাতের কাজ করতে সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন শাহিদাকে। সেখানেই মিশনের সিস্টার জোসেফ মেরী তাকে হাতেখড়ি দেন। শাহিদার বয়স পাঁচ বছর হলে সেন্ট লুইস প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে নিয়ে যান। কিন্তু প্রতিবন্ধী হওয়ায় স্কুলের শিক্ষকরা তাকে ভর্তি করতে অস্বীকৃতি জানায়। পরবর্তীতে জোসেফ মেরীর বদৌলতেই সুযোগ হয় স্কুলে পড়ার। কখনও মা-বাবা, কখনও ভাই-বোনের কোলে চড়ে স্কুলে যাতায়াত শুরু হয় শাহিদার। রোদ, বৃষ্টি, ঝড় কোনো কিছুই তাকে স্কুল থেকে দূরে রাখতে পারেনি। এভাবেই ২০০৭ সালে সেন্ট লুইস হাই স্কুল থেকে এসএসসি ও ২০০৯ সালে শিমুলিয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। সর্বশেষ যশোর এমএম কলেজ থেকে ২০১৬ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স পাস করেন। শারিরীক প্রতিবন্ধকতাকে দূরে ঠেলে মাস্টার্স পাশ করেও সরকারি চাকরি না মেলায় হতাশ শাহিদা।
শাহিদা খাতুন বলেন, আমার লেখাপড়াটা সহজ ছিল না। অনেক কষ্ট-সংগ্রাম করে লেখাপড়া শেষ করেছি। ভাই বোনদের মধ্যে আমিই বেশি লেখাপড়া করেছি। নিজে স্বাবলম্বী হতে চাই। চাকরি করে পরিবারকে সহযোগিতা করতে চাই। একটি প্রতিবন্ধী স্কুলে শিক্ষকতা করছি। কিন্তু সেখান থেকে কোন বেতন সুবিধা পাই না। সরকারও স্কুলগুলো এমপিওভুক্ত কিংবা অনুমোদন দেয়নি। ফলে অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। বেশ কিছু সরকারি দপ্তরে চাকরি আবেদন করেছি।
শাহিদা বলেন, মানুষ আমাকে দেখলে বলবে ওর দিয়ে কোন কাজ হবে না। কিন্তু আমি তো জানি আমার দিয়ে কিছু হবে কি না। আমার আত্মবিশ^াস আছে বলেই মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করতে পেরেছি। আমি যোগ্যতার প্রমাণ রাখতে চাই কাজের মধ্যদিয়ে।
প্রতিবন্ধী দেখলেই মানুষ মনে করে তার দিয়ে কাজ হবে না। কিন্তু মানুষ তাকে কাজ দিয়ে বলে না তুমি করে দেখাও। সেই সুযোগ দিলে কিন্তু সে পারবে। আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার।
তিনি আরও বলেন, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে সারাদেশে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় চালু হয়েছে। সরকার যাচাই বাছাই করে স্কুলগুলোর অনুমোদন দিলে প্রতিবন্ধীদের উপহার হত। সেখানে যেমন শিক্ষিত প্রতিবন্ধীদের চাকরি হতো। কর্মসংস্থান হত। আবার প্রতিবন্ধী শিশুরা শিক্ষিত হত। এ বিষয়ে সরকার আন্তরিক হওয়া দরকার।
শাহিদা বলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি হস্তশিল্পের কাজ শিখেছি। বাড়িতে হাতের কাজ করছি। হস্তশিল্পের প্রসার ঘটিয়ে সাবলম্বী হওয়ার জন্য প্রতিবন্ধী নারীদের নিয়ে আমাদের ইউনিয়নের একটি সংগঠন করছি। ২১ সদস্যের এই সংগঠনের উদ্যোগে প্রতিবন্ধী নারীদের উন্নয়নে আমরা কাজ করবো।

Leave A Reply

Your email address will not be published.