Take a fresh look at your lifestyle.

জন লেননঃযার সুরে মেতেছিল সারা পৃথিবী

0
বাবলু ভট্টাচার্য
‘ভাবুন কোনো স্বর্গ নেই/ ভাবুন কোনো দেশ নেই
আপনি বলতে পারেন/ আমি একজন স্বপ্নবাজ
কিন্তু আমি একাই না/ আশা করি একদিন আপনিও
আমাদের দলে যোগ দেবেন এবং/ সেদিন এই পৃথিবীটা এক হয়ে যাবে।’
‘ইমাজিন’ গানের মাধ্যমে এভাবেই নিজের স্বপ্নের কথা জানিয়েছিলেন জন উইনস্টন ওনো লেনন। সংক্ষেপে জন লেনন, বিটলসের লেনন।
জন লেনন যখন জন্ম নেন, অক্সফোর্ড ম্যাটারনিটি হাসপাতালের আশপাশ জুড়ে তখন চলছে জার্মান বিমান হামলা। আকাশ থেকে ক্রমাগত বোমাবর্ষণের মধ্যেই জন্ম হয় ইতিহাসের অন্যতম সেরা সংগীত তারকার।
লেনন তার শৈশবে নৌবাহিনীতে কর্মরত পিতার সান্নিধ্য খুব কমই পেয়েছিলেন। তিনি বেড়ে উঠেছিলেন তার মায়ের বোন মিমি স্মিথের কাছে।
শৈশব থেকেই জড়িয়ে পড়েন গান-বাজনার সঙ্গে। তাঁর প্রথম ব্যান্ড ছিল ‘দ্য কোয়ারিমেন’। এর পর ১৯৬০ সালে বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তোলেন ‘বিটলস’। কিন্তু ১০ বছর পর ১৯৭০ সালে ভেঙে যায় বিটলস। এর পর গায়ক হিসেবে সলো ক্যারিয়ার শুরু করেন লেনন।
১৯৬৯ সালে ইয়োকো ওনোকে বিয়ে করেন।  তারপর নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন জন ওনো লেনন।
জন লেনন আর ‘বিটলস’ জড়িয়ে আছে একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে এবং সে কথাগুলো এখনো মনে আছে অনেকের। ষাটের দশকে একদিকে জন লেননের তরতর করে বেড়ে ওঠা, অন্যদিকে বিটলস গঠন নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। জন লেনন ওই ষাটের দশকেই প্রথমে জড়িয়ে গেলেন প্রগতিশীল ধারার সঙ্গে। তিনি গাইলেন ‘গিভ পিস এ চান্স’ এবং ‘ওয়ার্কিং ক্লাস হিরো’র মতো বিখ্যাত গান।
লেনন বাম আন্দোলন নিয়ে একটি গান লিখেছিলেন এবং গেয়েছিলেন। যে গানের প্রথম লাইন ছিল ‘পাওয়ার টু দ্য পিপল’।
১৯৭২ সালে আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতার দাবিতে চালানো আন্দোলনে গুলি চালানোর সেই রক্তাক্ত রোববার লেননকে বেশ আলোড়িত করেছিল। তিনি এর প্রতিবাদ করেছিলেন। স্ত্রী ইওকো ওনোকে নিয়ে চলে গিয়েছিলেন আয়ারল্যান্ডে। লাল টি-শার্ট পরা লেননের উঁচু হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘আয়ারল্যান্ডের জন্য, ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে।’
বিশ শতকের ষাটের দশক ছিল যুগান্তকারী সময়। চারদিক থেকে এ সময় উঠেছিল পরিবর্তনের ঢেউ। আমাদের দেশে যেমন, তেমনি পশ্চিমেও। ‘দ্য বিটলস’ ব্যান্ড এবং ‘ফোর ফ্যাভস’ নামে খ্যাতিমান চারজনের একজন ছিলেন জন লেনন- যিনি হয়ে ওঠেন কিংবদন্তি।
বিটলসের পল ম্যাকার্টনি ও জন লেননের লেখা অনেক গান সে সময়ে ছিল জনপ্রিয়তার শিখরে। ‘ইন মাই লাইফ, হেল্প!’, ‘ইউ’ভ গট টু হাইড ইউর লাভ অ্যাওয়ে’, ‘নরওয়েজিয়ান উড’, ‘টুমরো নেভার নোজ’, ‘আই অ্যাম দ্য ওয়ালরুস’, ‘স্ট্রবেরি ফিল্ডস ফরেভার’, ‘হ্যাপিনেস ইজ আ ওয়ার্ম গান’, ‘কাম টুগেদার’- এর মতো একের পর এক গান সে সময় তুমুল জনপ্রিয়তা পায়।
কিন্তু ষাটের দশক রাজত্ব করার পরেই ‘বিটলস’ ভেঙে যায় ১৯৭০ সালে।
বিটলস ভেঙে যাওয়ার পর লেনন সংগীতের পাশাপাশি সামাজিক কাজেও অংশ নিতে শুরু করেন। নিজের একক সংগীতজীবনে একে একে উপহার দেন ‘ইনস্ট্যান্ট কর্মা!’, ‘মাদার’, ‘গিভ পিস আ চান্স’, ‘মাইন্ড গেমস’, ‘হ্যাপি ক্রিস্টমাস’, ‘জেলাস গাই’- এর মতো গান।
পরে আয়ারল্যান্ডের ব্রিটিশ আধিপত্যের বিরুদ্ধেও তিনি জোরালো ভূমিকা রাখেন। ষাটের দশকের প্রগতিশীলতার চিন্তা তাঁর মধ্যে বজায় ছিল সত্তরের দশকেও। কিন্তু জন লেননও ষাটের দশকের অনেকের মতোই দিকনির্দেশনাহীন হয়ে পড়লেন। পরবর্তীকালে তিনি তাঁর বাম প্রগতিশীল চিন্তা ও কর্মকাণ্ড নিয়ে ভেবেছেন এবং একপর্যায়ে এ ব্যাপারে চুপচাপই হয়ে গেলেন।
কী থাকত লেননের এ সময়ের গানে? ভেদাভেদহীন মানবসমাজের স্বপ্নের কথা বলতেন তিনি। ভিয়েতনাম যুদ্ধের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। মার্কিন সরকারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক এত খারাপ হয়েছিল যে, তাঁকে আমেরিকা ছাড়তে বলা হয়। পরে অবশ্য লেনন গ্রিন কার্ড পান।
১৯৮০ সালের ৮ ডিসেম্বর রেকর্ডিং থেকে ফেরার সময় আততায়ী মার্ক ডেভিড চ্যাপম্যানের হাতে লেনন খুন হন।
জন লেনন ১৯৪০ সালের আজকের দিনে (৯ অক্টোবর)  ইংল্যান্ডের লিভারপুলে জন্মগ্রহণ করেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.