দিলরুবা খাতুন, মেহেরপুর :
জমিতে সেচ দিয়ে কাদা তৈরি করে ধান লাগানোর মতো করেই মেহেরপুরের কৃষকরা পেঁয়াজের চাষ শুরু করেছেন। কৃষকরা যুগ যুগ ধরে পেঁয়াজ চাষ করে আসছেন শীত মৌসুমে শুকনো মাটিতে। মেহেরপুরের চাষীরা তাদের চাষের ধরণ বদলিয়ে পেঁয়াজ ক্ষেতে আমন ধান আবাদের মতো কাদা তৈরি করে রোপণ করেছেন পেঁয়াজের চারা।
এই পদ্ধতিতে পেঁয়াজের ফলন নিয়ে চিন্তিত হলেও হাল ছাড়েনি কৃষি বিভাগ ও উদ্যোমী চাষিরা। গত ৪ বছর ধরে জেলায় কাদা জমিতে পেয়াজের চাষ হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কাদায় লাগানো রোপন করা পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। শুধু ফলনই নয়, নতুন পদ্ধতিতে চাষ করে বিঘাতে গড়ে ৫০ হাজার টাকা লাভবান হয়েছেন অনেকেই। আগামীতে এই পদ্ধতিতে পেঁয়াজ চাষ বাড়বে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনের উপর জোর দেয়া হয়েছে। সে লক্ষ্যে মেহেরপুর জেলায় এবার নতুন পদ্ধতিতে ২৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করা হয়। বারি পেঁয়াজ-৫ সহ বিভিন্ন জাতের পেঁয়াজ আবাদ করেছে চাষিরা।
জেলার মুজিবনগর উপজেলার সোনাপুর গ্রামের কৃষক ফিরোজ আহমেদ মাস্টার বলেন, মুজিবনগরে শীতকালে ব্যাপক পেঁয়াজ চাষ হয়। তবে সেটি ভারতীয় বীজ থেকে উৎপন্ন ‘সুখ সাগর’ পেঁয়াজ। এ পেঁয়াজ বেশি দিন ঘরে রাখা যায় না। আবার সময় চাহিদা ও দাম না পাওয়ায় চাষিদের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। এবার ‘সুখ সাগর’ পেঁয়াজের পরিবর্তে কয়েকজন কৃষক গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করে ভাল ফলন ও ভাল দামে বিক্রি করে ওই জমিতেই আবার শীতকালীন পেঁয়াজের চাষ করছেন। পেঁয়াজ আবাদের এই ধারায় দেশের পেঁয়াজ সংকট দূর হবে বলে আশা করছেন অগ্রগামী এসব কৃষক।
মেহেরপুর সদর উপজেলার শুভরাজপুর গ্রামের কৃষক ওহাব আলী জানান, তিনি ৫ বিঘা বারি পেঁয়াজ -৫ নতুন পেঁয়াজের চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূল হওয়ায় এই পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকি কম। নভেম্বর থেকেই এই পেঁয়াজ উত্তোলন করা যাবে বলে তিনি জানান। ফলে চাষীরা সারা বছর পেঁয়াজ চাষ ও সংরক্ষণ করতে পারবেন। এতে পেঁয়াজের ঘাটতি যেমন কমবে, তেমনি চাষিরাও সারা বছর ন্যায্য দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারবেন।
মেহেরপুর সদর উপজেলার ইছাখালি গ্রামের পেঁয়াজ চাষী গোলাম মোস্তফা জানান, গতবছর ১৫বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন এই পেঁয়াজ চাষ করে লাভবান হয়েছেন। তিনি এবছর ২০ বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেয়াঁজের চাষ করেছেন। ৯৫ থেকে ১১০ দিনে এই পেঁয়াজ বিঘায় ১২০ থেকে ১৫০ মণ উৎপাদন হয়। গ্রীষ্মকালীন এই পেঁয়াজ প্রতি বিঘায় চাষ করতে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়।
ওয়েভ ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ নাসির উদ্দীন আহম্মেদ জানান, জেলার বিভিন্ন এলাকায় চাষীদের মাধ্যমে ২৫ হেক্টর জমিতে বারী পেঁয়াজ-৫ আবাদ করা হয়েছে। এর ভাল ফলন হবে এবং চাষীরা লাভবান হবে বলে তারা আশাবাদী।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, নতুন পদ্ধতিতে পেঁয়াজ উৎপাদনে মেহেরপুর জেলা কৃষিতে যুগান্তকারী এক পরিবর্তনের মাইলফলক স্পর্শ করেছে। লাভ ও ফলনে কৃষকদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ বেড়েছে। আগামীতে এ জেলায় আরও বেশি পরিমাণ জমিতে পেঁয়াজ চাষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।