Take a fresh look at your lifestyle.

জন্মদিনে স্মরণ : রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ

0

বাবলু ভট্টাচার্য

‘চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়- বিচ্ছেদ নয়
চলে যাওয়া মানে নয় বন্ধন ছিন্ন-করা আর্দ্র রজনী
চলে গেলে আমারও অধিক কিছু থেকে যাবে আমার না-থাকা জুড়ে।’

———- রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ

টালমাটাল সত্তরের দশকে সমাজ ও রাজনীতির উত্থান-পতনে ত্যাগ ও প্রাপ্তি, ধ্বংস আর নির্মাণ, প্রত্যাশা আর আশাভঙ্গের অনিবার্য অস্থিরতার সময়টিতে যারা কলম চালিয়েছিলেন, যারা সেই সময়টাকে আত্মোপলব্ধি ও সৃষ্টিশীল উন্মাদনার দ্বারা এক চিরন্তন প্রতীতি প্রদান করেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ।

প্রেম ও দ্রোহের কবি রুদ্র। পুরো নাম রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ। বাবা শেখ ওয়ালীউল্লাহ আর মায়ের নাম শিরিয়া বেগম।

খেলাধূলায় বেজায় আগ্রহ ছিল রুদ্র’র। মংলায় প্রথম ক্রিকেট দল তৈরি করেন কিশোর বন্ধুদের নিয়ে। তবে খেলাধূলার চাইতেও অধিক আগ্রহ ছিল লেখালেখির প্রতি। তাই ঐ বয়সেই তার কাঁচা হাতে লেখালেখি শুরু হয়ে যায়।

১৯৭২ সালে রুদ্র ঢাকা চলে এলেন। উঠলেন লালবাগে সেজ মামার বাসায়। ‘ওয়েস্ট অ্যান্ড হাইস্কুলে দশম শ্রেণিতে ভর্তি হলেন। বাবার ইচ্ছেতেই মনে মনে ডাক্তার হবার ইচ্ছে জাগে। তাই ঠিক করেন এবার পড়াশোনায় মনযোগ দেবেন। কিন্তু যার সাহিত্যিক হবার কথা তার কি আর টানা পড়াশোনায় মন বসে! ঐ বছরই ‘দৈনিক আজাদ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তার কবিতা ‘আমি ঈশ্বর আমি শয়তান’।

১৯৭৩ সালে একুশের সংকলন ‘দুর্বিনীত’ এর সহযোগী সম্পাদকের কাজ শুরু করেন। সামনে এসএসসি পরীক্ষা থাকায় এতসব কাজের মাঝে পড়াশোনাটাও চলছিল। বাবা-মায়ের দেওয়া নাম শুধুই মুহম্মদ শহিদুল্লাহ হলেও নিজ ইচ্ছেতেই এসএসসি রেজিস্ট্রশনে নিজের নামের সাথ যুক্ত করলেন ‘রুদ্র’, হলেন রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ।

পরীক্ষা ভালোই হলো। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে চার বিষয়ে লেটার মার্কসসহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হলেন। এরপর ঢাকা কলেজে কলা বিভাগে ভর্তি হলেন। এর মাঝেই একদিন বাংলাদেশ বেতারে পাঠ করলেন নিজের লেখা কবিতা ‘এখনো বেঁচে আছি’।

লেখালেখিতেই পুরো ব্যস্ত হয়ে গেলেন। কলেজে যাওয়া প্রায় বন্ধই হয়ে গেল। ১৯৭৪ সালে প্রকাশ পেল তার সম্পাদিত কবিতাপত্র ‘অনামিকার অন্যচোখ এবং চুয়াত্তরের প্রসব যন্ত্রণা’। ‘৭৫ সালে প্রকাশ পেল তারই সম্পাদিত কবিতাপত্র ‘অশ্লীল জোৎস্নায়’- যেখানে তিনি সম্পাদকীয়তে ‘উপলিকা’ নামে ‘না-কবিতা, না-গল্প’ আঙ্গিকের প্রস্তাব করেন।

পুরো কলেজ জীবনে ১৮ দিন ক্লাশে গিয়েছেন আর এইচএসসি’তে ফল পেলেন দ্বিতীয় বিভাগ। ১৯৭৬-এ এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি হলেন।

১৯৭৯ সালে প্রকাশ পায় রুদ্রের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘উপদ্রæত উপকূল’। প্রকাশক আহমদ ছফা, বুক সোসাইটি, বাংলাবাজার। তরুণ পাঠক ও কাব্যপ্রেমীরা এই কাব্যগ্রন্থটিকে রীতিমত লুফেই নেন। এর প্রথম কবিতাটাই হলো ‘বাতাসে লাশের গন্ধ’ যা বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা।

১৯৮০ সালে ‘উপদ্রæত উপকূল’ কাব্যগ্রন্থের জন্য সংস্কৃতি সংসদ থেকে ‘মুনীর চৌধূরী সাহিত্য পুরস্কার’ লাভ করেন।

১৯৮১ সালের ২৯ জানুয়ারি বিয়ে করেন তসলিমা নাসরীনকে। এ বছরই দ্রাবিড় প্রকাশনী থেকে প্রকাশ পায় দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘ফিরে পেতে চাই স্বর্ণগ্রাম’ এবং এটি যুগ্মভাবে ‘মুনীর চৌধূরী সাহিত্য পুরস্কার’ লাভ করে।

১৯৮৪-তে প্রকাশ পায় রুদ্রের তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘মানুষের মানচিত্র’। ১৯৮৬-তে প্রকাশিত হয় রুদ্রের চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ ‘ছোবল’ যা ছিল তৎকালীন স্বৈরাচার সরকারের অমানবিক অত্যচারের বীভৎসতা।

১৯৮৭ সালে তসলিমার সাথে রুদ্রের বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে। নিখিল প্রকাশন তার পঞ্চম কাব্যগ্রন্থ ‘গল্প’ প্রকাশ করে। পরের বছর মুক্তধারা প্রকাশনী থেকে প্রকাশ পায় তার ষষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ ‘দিয়েছিলে সকল আকাশ’…।

১৯৮৯ সালে সৃষ্টি করেন বিখ্যাত গান ‘ভালো আছি ভালো থেকো’ যা পরে তাকে শ্রেষ্ঠ গীতিকারের জাতীয় পুরস্কার এনে দেয়।

বয়স ৩৫ না পেরুতেই ২১ জুন, ১৯৯১ ভোরবেলা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন এই কবি।

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ ১৯৫৬ সালের আজকের দিনে (১৬ অক্টোবর) বরিশাল জেলার আমানতগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন।

লেখক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

Leave A Reply

Your email address will not be published.