Take a fresh look at your lifestyle.

জন্মদিনে স্মরণ : নাচোলের রানী ইলা মিত্র

0

বাবলু ভট্টাচার্য

ইলা মিত্র, উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী। পিতা নগেন্দ্রনাথ সেন ছিলেন সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। ছাত্রাবস্থাতেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন ইলা।

দুর্ভিক্ষের সময় তিনি খাদ্য আন্দোলন ও ভুখা মিছিলে যোগদান করেছেন, লঙ্গরখানা পরিচালনায় সহায়তা করেছেন। ১৯৪৫ সালে বিয়ে করে চলে আসেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের রামচন্দ্রপুরে।

পরিবারের শ্রেণি-অবস্থানকে অতিক্রম করে, কমিউনিস্ট নেতা ও স্বামী রমেন্দ্রনাথ মিত্রের সঙ্গে তিনি যুক্ত হন জমিদারি উচ্ছেদ ও জোতদারি শোষণের বিরুদ্ধে। ১৯৪৬ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময়ে নোয়াখালীর হাসনাবাদে ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজেও অংশ নেন।

১৯৪৬-৪৭ সালে ফসলের দুই-তৃতীয়াংশের উপর কৃষকের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে বাংলার ১৯টি জেলায় গড়ে ওঠে তেভাগা আন্দোলন, তা পরিব্যপ্ত থাকে ১৯৪৯-৫০ সাল পর্যন্ত। তেভাগার দাবিতে রাজশাহী জেলার, বিশেষভাবে নাচোলের কৃষকদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে ইলা মিত্র অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেন।

সাঁওতাল ও স্থানীয় কৃষকদের কাছে তিনি জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। আন্দোলনের পক্ষে জনসমর্থন গড়ে তুলতে যোগ্য নেতৃত্বের প্রয়োজন হয়, নাচোল বিদ্রোহে তিনি তা প্রমাণ করেন। নাচোলের তেভাগা আন্দোলন শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। কৃষকদের সঙ্গে সংঘর্ষে চারজন পুলিশ নিহত হওয়ার খবরে পাকিস্তানি শাসকবর্গ আদিবাসীদের ওপর প্রচন্ড নিপীড়ন চালাতে শুরু করে।

এতে ইলা মিত্র কারাগারে চরম লাঞ্ছনার শিকার হন। প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ তাঁর ‘আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম’ প্রবন্ধে ইলা মিত্রের ওপর অমানবিক ও বর্বরোচিত নির্যাতনের কথা উল্লেখ করেন। জানা যায়, কারাগারে তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী ইলা মিত্রের যৌনাঙ্গে গরম ডিম ঢুকিয়েও নির্যাতন করে পাকিস্তানি শাসকবর্গ।

এ ছাড়া তাঁকে এক নম্বর আসামি করে অনিমেষ লাহিড়ী, বৃন্দাবন সাহা, শেখ আজাহার হোসেনসহ মোট ৩১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা রুজু করা হয় এবং বিচারে ইলা মিত্রসহ ২৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়। তবে তাঁর মুক্তির দাবিতে মাওলানা ভাসানী সহ বিভিন্ন মহল সোচ্চার হন।

নাচোলে সরকারি বাহিনীর নির্যাতনের বিষয়টি পূর্ব বাংলার সংসদে উত্থাপনের চেষ্টা মুসলিম লীগ সরকার প্রতিহত করে। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতাসীন হলে চিকিৎসার প্রয়োজনে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে কলকাতা যাবার পর ইলা মিত্র আর এদেশে ফিরে আসেননি। ভারতেও ১৯৬২ থেকে ১৯৭২ সাালে চার বার কারাগারে যান।

২০০২ সালের ১৩ অক্টোবর মারা যান এ মহীয়সী নারী।

ইলা মিত্র ১৯২৫ সালের আজকের দিনে (১৮ অক্টোবর) কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।

লেখক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

Leave A Reply

Your email address will not be published.