Take a fresh look at your lifestyle.

সুরের জাদুকর আলম খানঃ শুভ জন্মদিন

0

বাবলু ভট্টাচার্য :
বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনে তাকে সম্মান করা হয় “সুরের জাদুকর” বলে। তিনি অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা। তার হাত ধরে তারকাখ্যাতি পেয়েছেন অনেক তারকা শিল্পীই। তিনি অনেক কালজয়ী গানের সুরকার আলম খান।
আলম খানের পুরো নাম খুরশিদ আলম খান। বাবা আফতাব উদ্দিন খান ছিলেন সেক্রেটারিয়েট হোম ডিপার্টমেন্ট এর এডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার ও মা জোবেদা খানম ছিলেন গৃহিণী। সিরাজগঞ্জে কয়েক বছর থাকার পর বাবার চাকরি সুবাদে কলকাতায় চলে যান আলম খান। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর বাবার সাথে ফিরে আসেন ঢাকায়। তারপর ঢাকাতেই স্থায়ী হন এবং সিদ্ধেশ্বরী স্কুলে ভর্তি হন।

স্কুলে থাকা অবস্থায়ই গানের প্রতি আগ্রহী হন তিনি। মায়ের উৎসাহে তিনি গানের চর্চা শুরু করেন। এরপর বাবাও সমর্থন দেন। তার ছোট ভাই ছিলেন বাংলাদেশের কিংবদন্তি পপ শিল্পী আজম খান।

গানের ভুবনে আলম খানের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৩ সালে। সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক রবিন ঘোষের সহকারী হিসেবে তিনি ‘তালাশ’ সিনেমার সঙ্গীত পরিচালনা করেন। এরপর টানা সাত বছর পর্যন্ত তিনি সহকারী হিসেবেই কাজ করে যান।

১৯৭০ সালে আলম খান একক সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। সিনেমার নাম ছিল ‘কাচ কাটা হীরে’। তবে শুরুতেই সাফল্যের দেখা পাননি তিনি। জনপ্রিয়তা পেতে আরও আট বছর অপেক্ষা করতে হয় তাকে।

সালটা ১৯৭৮। মুক্তি পেলো আবদুল্লাহ আল মামুন পরিচালিত সিনেমা ‘সারেং বৌ’। এই সিনেমায় আলম খান সৃষ্টি করলেন এক অবিস্মরণীয় গান। শিরোনাম ‘ও রে নীল দরিয়া’। দেশজুড়ে গানটি পেয়ে গেলো তুমুল জনপ্রিয়তা। সেই সঙ্গে কালের গণ্ডি পেরিয়ে গানটি হয়ে রইলো ইতিহাস।

এরপর থেকে আলম খান একের পর কালজয়ী গান সৃষ্টি করে গেছেন। তার সুরে গান গেয়ে শ্রোতাদের আকাশসম ভালোবাসা অর্জন করেছেন বহু শিল্পী।

আলম খানের সুর করা জনপ্রিয় ও কালজয়ী গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ‘ওরে নীল দরিয়া’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস দম ফুরাইলে ঠুস’, ‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো গন্ধ বিলিয়ে যাই’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘কি জাদু করিলা পিরিতি শিখাইলা’, ‘তুমি যেখানে আমি সেখানে’, ‘সবাই তো ভালবাসা চায়’, ‘ভালবেসে গেলাম শুধু’, ‘চাঁদের সাথে আমি দেবো না তোমার তুলনা’, ‘আমি একদিন তোমায় না দেখিলে’, ‘তেল গেলে ফুরাইয়া’, ‘আমি তোমার বধূ তুমি আমার স্বামী’, ‘জীবনের গল্প বাকি আছে অল্প’, ‘মনে বড় আশা ছিল’, ‘সাথীরে যেও না কখনো দূরে’, ‘বেলি ফুলের মালা পরে’, ‘কাল তো ছিলাম ভাল’, ‘চুমকি চলেছে একা পথে’, ‘ভালোবাসিয়া গেলাম ফাঁসিয়া’, ‘তুমি কি এখন আমারই কথা ভাবছো’, ‘আকাশেতে লক্ষ তারা চাঁদ কিন্তু একটাইরে’ ইত্যাদি।

আলম খান তার ক্যারিয়ারে ছয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচবার পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে। শ্রেষ্ঠ সুরকার হিসেবে ২০০৮ সালে পেয়েছেন ‘কি জাদু করিলা’ ছবির জন্য। এছাড়া তিনি বাচসাস পুরস্কারও লাভ করেছেন।

আলম খান ১৯৪৪ সালের আজকের দিনে (২২ অক্টোবর) সিরাজগঞ্জের বানিয়াগাথি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

লেখক: সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

Leave A Reply

Your email address will not be published.