Take a fresh look at your lifestyle.

জন্মদিনে স্মরণঃ বাংলা কবিতার প্রতিদ্বন্দ্বী নাম শামসুর রাহমান

0

বাবলু ভট্টাচার্য:

“… দাউ দাউ পুড়ে যাচ্ছে নতুন বাজার,
আমাদের চৌদিকে আগুন,
গুলির ইস্পাতী শিলাবৃষ্টি অবিরাম।
তুমি বলেছিলে, আমাকে বাঁচাও।
অসহায় আমি তাও বলতে পারিনি।”

——– শামসুর রাহমান

বন্দী শিবির থেকে যিনি প্রথম গান গেয়েছিলেন দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে, বিধ্বস্ত নীলিমায় বসে যিনি দেখেছেন উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ— তিনি কবি শামসুর রাহমান।

ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এই ভূ-ভাগের সর্বাধিক জনপ্রিয় ও পাঠকনন্দিত শব্দশিল্পী কবি শামসুর রাহমান। তিনি জন্ম নিয়েছিলেন বিদ্রোহী তিরিশের দশকের ঊষালগ্নে। বেড়ে উঠেছেন পঞ্চাশের দশকের বন্ধ্যা মরুভূমিতে। আত্মপ্রকাশ করেছেন ষাটের দশকের রক্তিম অরুণালোকে।

ইতিহাস সাক্ষী দেয়, শামসুর রাহমান ছিলেন পরাধীন দেশের বিপন্ন কবিসত্তা। তাই তিনি অন্তরে লালন করেছেন স্বাধীনতার রঙিন আকাঙ্ক্ষা, একটা স্বাধীন ও স্বনির্ভর দেশ। সমমনা মুক্ত মানুষের জন্য তাঁর লড়াই ছিল চিরকালের।

সমকালীন বাংলাদেশে শামসুর রাহমান কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেই; চমকে দিয়েছেন সমসাময়িক সমমনা কবি ও পাঠককে। আবির্ভাব মুহূর্তেই তিনি জানান দিয়েছিলেন, তাঁর হাতে নির্মাণ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের শিল্পসফল আধুনিক কবিতা এবং তিনিই নেতৃত্ব দেবেন আগামী বাংলাদেশের কবিতাপ্রদেশ।

বাস্তবে ঘটেছেও তাই। একাই তিনি খাঁ খাঁ মরুভূমিতে পড়ে থাকা বাংলা কবিতাকে টেনে নিয়ে গেছেন উর্বর শ্যামল প্রান্তরে। কবিতার বিশাল প্রান্তরে দাঁড়িয়ে থেকেছেন একা। প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। প্রতিপক্ষ নেই। সামনে নেই অতিক্রম করার মতো বিপুল প্রতিভা। বাংলাদেশের আধুনিক কবিতার সাম্রাজ্যে শামসুর রাহমান হয়ে ওঠেন একাকী সম্রাট। নিঃসঙ্গ-নীরব উপকূলে তিনি এক আলোকোজ্জ্বল বাতিঘর।

শামসুর রাহমান তাঁর কবিজীবনের প্রথম পঁচিশ বছর নিরলস পরিশ্রম করে এগারোটি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন। এই এগারোটি কাব্যগ্রন্থ রচনাকালে তাঁকে পরিভ্রমণ করতে হয়েছে প্রকৃতির ঊষর-উর্বর, নন্দিত-নিন্দিত নানা অলিগলি। এ জন্য তাঁর যাত্রাপথ বহু বাঁকে বেঁকে গেছে। বহু দিকে বিভক্ত হয়ে গেছে তাঁর গন্তব্যবিন্দু। কাব্যরাশি হয়ে উঠেছে বর্ণিল রসের আধার।

মানুষের আবেগ-অনুভূতি অবিকল প্রকাশ করতে পারেন শামসুর রাহমান। অনেক কবি আছেন, যাঁদের কবিতায় আবেগ থাকলে শিল্প থাকে না, আবার শিল্প থাকলে আবেগ থাকে না। কবি শামসুর রাহমান এই দূষণীয় ত্রুটি থেকে দু-একটি ব্যতিক্রম বাদে সর্বাংশে মুক্ত। এর কারণ সম্ভবত মানুষ সম্পর্কে তাঁর গভীর অভিজ্ঞতা। মাহুতটুলীর বাসায় থাকতে তিনি যেসব বিচিত্র মানুষের সান্নিধ্যে এসেছিলেন, তাঁদের কাছ থেকে কবি অর্জন করেছিলেন এই নানা রঙের অভিজ্ঞতা।

কবি শামসুর রাহমানের বাবা মুখলেসুর রহমান চৌধুরী ও মা আমেনা বেগম। পিতার বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরায় পাড়াতলী গ্রামে। পুরোনো ঢাকার পোগোজ স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন ১৯৪৫ সালে। ১৯৪৭ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আইএ পাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ে ভর্তি হন।

কবি শামসুর রাহমান আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমী পুরস্কার, একুশে পদক, মিতসুবিসি পুরস্কার (সাংবাদিতার জন্য), স্বাধীনতা পদক, পশ্চিমবঙ্গ থেকে আনন্দ পুরস্কার এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে সম্মান সূচক ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করে।

২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা বেজে ৩৫ মিনিটে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কবি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

কবি শামসুর রাহমান ১৯২৯ সালের আজকের দিনে (২৩ অক্টোবর) পুরানো ঢাকার মাহুতটুলিতে জন্মগ্রহণ করেন।

লেখক: সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

Leave A Reply

Your email address will not be published.