Take a fresh look at your lifestyle.

২৮ বছর পর পরিবারের সন্ধান পেল বাচ্চু মন্ডল!

0

প্রতিবেদক:
বাচ্চু মন্ডল (৬৪)। কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার পলাশপুর গ্রামের মৃত কান্দুরা মাহমুদ মন্ডলের ছেলে। কিন্তু কেউ তার ঠিকানা জানতো না। তার ঠিকানা ছিল যশোরের অভয়নগর উপজেলার সুন্দলী ইউনিয়ন পরিষদ। ২৮ বছর আগে অভিমান করে ঘর ছেড়ে এখানেই ঠাঁই নিয়েছিলেন তিনি। এখানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সাথে মিলে মিশে দীর্ঘ এ সময় বসবাস করেছেন তিনি। অবশেষে সন্ধান পাওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা মঙ্গলবার রাতে তাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন।
অভয়নগরের সুন্দলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিকাশ রায় কপিলের মধ্যস্ততায় সকল ইউপি সদস্য, সাংবাদিক ও সুধীজনদের উপস্থিতিতে মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বাচ্চু মন্ডলকে তার পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
দীর্ঘ ২৮ বছর সুন্দলী ইউনিয়নে বসবাস করেছেন বাচ্চু মন্ডল। তিনি জানান, স্ত্রী জাহেদা বেগমের উপর অভিমান করে ৩৬ বছর বয়সে আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ি। বিভিন্ন যানবাহনে করে যশোর মণিহার সিনেমা হলের সামনে পৌঁছাই। সেখান থেকে অভয়নগরের নওয়াপাড়া বাজার হয়ে সুন্দলী ইউনিয়নের সুন্দলী বাজারে পৌঁছালে রাত হয়ে যায়। এসময় ওই ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামের নগেন্দ্রনাথ রায় আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে খাওয়া-থাকার শর্তে তার কৃষি জমি ও বাড়ির কাজ করতে শুরু করি।
আনুমানিক ৩ বছর পর ওই ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের মুকুন্দ মল্লিক আমাকে তার বাড়িতে থাকার অনুরোধ করেন। সেখানে ২ বছর থাকার পর একই গ্রামের চারু মল্লিকের বাড়িতে চলে যায়।
২০০৬ সালে সুন্দলী ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালিন চেয়ারম্যান বিকাশ মল্লিক ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে বাচ্চু পরিবহন লেখা একটি ভ্যান আমাকে উপহার দেন। যে ভ্যান চালিয়ে আমি জীবিকা নির্বাহ শুরু করি। পরবর্তীতে আমাকে ইউনিয়ন পরিষদের অস্থায়ী পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে কাজ দেয়া হয়। সেই সময় ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ শেখর বিশ্বাস আমাকে তার বাড়িতে থাকতে দেন। পরবর্তীতে ২০১০ সালে সুন্দলী ইউনিয়ন পরিষদের নতুন ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে বসবাস করার সুযোগ করে দেন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান ও মেম্বারবৃন্দ। সেই থেকে অদ্যবধি আমার ঘরবাড়ি সুন্দলী ইউনিয়ন পরিষদ।
দু’চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়া জল মুছে বাচ্চু মন্ডল আরো বলেন, আমার মা-বাবা দুজনের কেউ বেঁচে নেই। চার ভাইয়ের মধ্যে আমি সেজ। স্ত্রী-সন্তান ও আত্মীয়-বন্ধুদের ফেলে দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে আমি সনাতন ধর্মের মানুষের সঙ্গে বসবাস করেছি। এ ইউনিয়নে ৯৯ শতাংশ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। তারা আমাকে তাদের ভাই হিসেবে সম্মান ও শ্রদ্ধা করেছে। থাকতে দিয়েছে, ভালো খেতে দিয়েছে, ভালো ব্যবহার করেছে। কখনও অন্য ধর্মের মানুষ হিসেবে আমাকে ঘৃনা করেনি। আমি সুন্দলী ইউনিয়নবাসীর কাছে ঋণি। বাড়ি ফিরে গেলেও মনের টানে অভয়নগরের সুন্দলী ইউনিয়নে স্বপরিবারে বেড়াতে আসবেন বলে তিনি জানান।
বাচ্চু মন্ডলের ভাইপো শফিকুল ইসলাম জানান, চাচা নিখোঁজ হওয়ার পর আমরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। এক পর্যায়ে চাচার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। সম্প্রতি আমাদের এলাকার গ্রাম পুলিশ অসিত বিশ্বাসের মাধ্যমে চাচার সন্ধান মেলে। রাতেই চাচাকে নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হয়েছি। তিনি আরো জানান, চাচি অন্তঃসত্ত¡া থাকতে চাচা নিখোঁজ হয়েছিলেন। বর্তমানে জাহিদুল ইসলাম নামে চাচার একটি ছেলে রয়েছে। তার বয়স এখন প্রায় ২৭ বছর। পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা চাচাকে নিয়ে যাচ্ছি। এ এলাকার মানুষ সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
সুন্দলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিকাশ রায় কপিল জানান, বাচ্চু মন্ডলের পরিবার আছে এমন কথা সে কোনদিন কাউকে বলেননি। দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে তিনি আমাদের ইউনিয়নে রয়েছেন। ২০১০ সাল থেকে পরিষদের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে থাকতেন। খুব ভালো মনের মানুষ তিনি। সকলে তাকে বাচ্চু ভাই বলে ডাকত। তবে ২৮ বছর পর মানুষটিকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমরা আত্মতৃপ্তি পেয়েছি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.