Take a fresh look at your lifestyle.

চৌগাছার মাকাপুর-বল্লভপুর হাইস্কুলে ৪ শিক্ষক নিয়োগে জালিয়াতি !

৫০-৬০ লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্য !

0

প্রতিবেদক:
যশোরের চৌগাছার মাকাপুর-বল্লভপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ৪ সহকারী শিক্ষক নিয়োগ ও এমপিওভুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। এই নিয়োগে ৫০-৬০ লাখ টাকার বাণিজ্য করেছেন তিনি। একই সাথে জালিয়াতির মাধ্যমে নিজের স্ত্রীকে সহকারী শিক্ষক ও ভাতিজাকে নৈশপ্রহরী নিয়োগ দিয়েছেন। তার অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির চিত্র তুলে ধরে রোববার বেলা ১১ টায় প্রেসক্লাব চৌগাছায় সংবাদ সম্মেলন করেন ওই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল। এ সময় তিনি অবিলম্বে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ ও সুষ্ঠু তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থার দাবি করেন। অপরদিকে ওই ৪ শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের দাবিতে বিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে এলাকাবাসী।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, আমি ২০১৪ সাল থেকে ২০১৫ সালের ২৮ জুন পর্যন্ত বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। আমার মেয়াদে বিদ্যালয়ে কোনো সহকারী শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। অথচ সেই সময়ে তিনজন শিক্ষক নিয়োগ দেখানো হয়েছে। অন্য এক শিক্ষককে ২০০৫ সালে নিয়োগ দেখানো হয়েছে। এই চার শিক্ষক নিয়োগে প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম অন্তত ৫০-৬০ লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। সর্বশেষ চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ওই প্রধান শিক্ষক উপর মহলকে ম্যানেজ করে ওই চারজন শিক্ষকের এমপিভুক্ত করিয়েছেন।

 

অবৈধভাবে নিয়োগ ও এমপিওভুক্ত হওয়া ওই চার সহকারী শিক্ষক হলেন-দেলোয়ার হোসেন, লিপিয়ারা খাতুন, আনন্দ কুমার বিশ্বাস ও মমতাজ খাতুন। এর মধ্যে ২০০৫ সালের পহেলা জানুয়ারি মমতাজ খাতুনকে সহকারী শিক্ষক (বাংলা) পদে নিয়োগ দেখানো হয়েছে। আর ২০১৫ সালের ৭ জুন তারিখে দেলোয়ার হোসেনকে সহকারী শিক্ষক (সমাজবিজ্ঞান), লিপিয়ারা খাতুনকে সহকারী শিক্ষক (সমাজবিজ্ঞান) ও আনন্দ কুমার বিশ্বাসকে সহকারী শিক্ষক (ব্যবসায় শিক্ষা) পদে নিয়োগ দেখানো হয়েছে। অথচ তারা কোনো দিন বিদ্যালয়ে আসেননি। সেপ্টেম্বর-২০২১ মাসের এমপিও শিটে স্বাক্ষর করতে গিয়ে শিক্ষক কর্মচারীরা প্রধান শিক্ষকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে ধমক খেয়েছেন।

 

তিনি আরো বলেন, প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলামের অনিয়ম দুর্নীতি সীমাহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে। তার হয়রানির ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পান না শিক্ষক-কর্মচারীরা। জালিয়াতির মাধ্যমে নিজের স্ত্রীকে সহকারী শিক্ষক (লাইব্রেরিয়ান), ভাতিজাকে নৈশপ্রহরী পদে নিয়োগ দিয়েছেন। এখন ছেলেকে বিদ্যালয়ে নিয়োগের চেষ্টা করছেন। তিনি নিজে বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৯৭ সাল দেখানো হলেও অবকাঠামোগত কার্যক্রম শুরু হয় ২০০০ সালে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে তিনি ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করতে তৎপর। যাকে নিজের লোক মনে করেন তাকে সভাপতি বানান। তার অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে প্রতিবাদ করলে কৌশলে সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেন। তিনি বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফান্ডের টাকার হিসাব কাউকে দেন না। বিভিন্ন অনুদান, বরাদ্দ ও শিক্ষার্থীদের বেতন, সেশন চার্জ, পরীক্ষা ফি বাবদ উত্তোলিত টাকা নিজে পকেটস্থ করেন। অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ গড়েছেন। তিনি নিয়োগ বাণিজ্য করার জন্য বিদ্যালয়ে বৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া একাধিক শিক্ষককে কৌশলে বিতাড়িত করেছেন। চাকরির নামে একাধিক প্রার্থীর কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়েছেন। তাদের চাকরি দেননি, টাকাও ফেরত দেননি।

এদিকে, রোববার দুপুরে বিদ্যালয়ের সামনে নিয়োগ বানিজ্য ও নিয়োগ বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বিক্ষুদ্ব এলাকাবাসী। মানববন্ধনে বক্তরা বলেন, দুর্নীতির কারণে পুলিশের চাকরি থেকে বরখস্ত হন প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম। এরপর তিনি প্রধান শিক্ষকের চাকরিতে যোগদান করেন। তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে ৪ শিক্ষক নিয়োগ ও এমপিওভুক্ত করেছেন। একই সাথে নিজের ৪স্ত্রীকে সহকারী শিক্ষক ভাতিজাকে নৈশপ্রহরী পদে নিয়োগ দিয়েছেন। অবিলম্বে প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করেন এলাকাবাসি।

এ বিষয়ে মাকাপুর-বল্লভপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না। যাদের চাকরির কথা বলা হচ্ছে, তারা কোনদিন স্কুলে আসেনি। ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাসও নেননি।

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ওই চার জন শিক্ষকের বিভিন্ন সময়ে নিয়োগের কথা নিশ্চিত করে বলেন, আমি নির্বাচনে ব্যস্ত আছি। ১১ নভেম্বরের পরে কথা বলবো।
উল্লেখ্য, প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম স্থানীয় সুখপুকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.