Take a fresh look at your lifestyle.

শুভ জন্মদিন ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন

0

বাবলু ভট্টাচার্য

বলিউড জগতের এক লাস্যময়ী রমণী হিসেবে ঐশ্বরিয়া রায় বচ্চনকে আমরা সবাই চিনি। বিশ্বসুন্দরী, দক্ষ অভিনেত্রী, বচ্চন পরিবারের গৃহবধূ, ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর- অনেকগুলো পরিচয় আছে তার। তার জনপ্রিয়তা শুধুমাত্র বলিউড পাড়াতেই সীমাবদ্ধ নয়, টলিউড, হলিউড জগতেও রয়েছে তার সাফল্যময় বিচরণ।

ঐশ্বরিয়ার বাবা কৃষ্ণরাজ পেশায় একজন মেরিন বায়োলজিস্ট ছিলেন এবং মা বৃন্দা রায় একজন গৃহিণী। পরিবারের দ্বিতীয় এবং কনিষ্ঠ সন্তান হিসেবে তিনি ছিলেন সকলের আদরের। ঐশ্বরিয়া রায়ের আদিত্য রায় নামে বড় এক ভাই আছেন। আদিত্য বর্তমানে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে মার্চেন্ট নেভিতে কর্মরত আছেন। ২০১৭ সালের ১৮ মার্চ তার বাবা মৃত্যুবরণ করেন।

কর্ণাটকে অবস্থিত আরিয়া বিদ্যা মন্দির স্কুলে ভর্তির মাধ্যমে ঐশ্বরিয়া রায়ের শিক্ষাজীবনের শুরু। প্রত্যেক ক্লাসে প্রথম স্থানটি সবসময় তার দখলে ছিল। তার জীবনের ১৩ বছর কাটিয়েছেন এই স্কুলে।

ইতোমধ্যে কৃষ্ণরাজ রায় তার পুরো পরিবারসহ মুম্বাইয়ে চলে আসেন। আর ঐশ্বরিয়া রায়কে ভর্তি করিয়ে দেয়া হয় জয় হিন্দ কলেজে। এখানে এক বছর পড়াশোনার পর তাকে ভর্তি করানো হয় ডিজি রুপারেল কলেজে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় শতকরা ৯০ ভাগ নম্বর পেয়ে তিনি উত্তীর্ণ হন। এরপর স্থপতি হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে তিনি ভর্তি হন রচনা সংসদ একাডেমি অফ আর্কিটেকচারে। কিছুদিন পর মডেলিংয়ের হাতছানিতে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে মডেলিংয়ের জগতে প্রবেশ করেন তিনি।

১৯৯৩ সালে আমির খানের সাথে পেপসির একটি বিজ্ঞাপনে অভিনয়ের মাধ্যমে মডেলিংয়ের জগতে পা রাখেন। এরপর ১৯৯৪ সালে মিস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন এবং ‘মিস ইন্ডিয়া ওয়ার্ল্ড’-এর মুকুট অর্জন করেন, যার ফলে তিনি বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতায় ভারতকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পান। সৌন্দর্য এবং বুদ্ধিমত্তায় সবাইকে ছাড়িয়ে তিনি অর্জন করেন বিশ্বসুন্দরীর খেতাব।

বিশ্বসুন্দরীর এই খেতাব তার ক্যারিয়ার জীবনের একটা টার্নিং পয়েন্ট ছিল। এরপর তাকে আর কখনও পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অভিনয় জগতে একের পর এক বøকবøাস্টার সিনেমা উপহার দিয়েছেন সবাইকে। ১৯৯৭ সালে প্রথম অভিনয় করেন মণি রতœমের ‘ইরুভার’ নামক একটি তামিল সিনেমায় এবং একই বছর বলিউডেও পা রাখেন ‘অউর পেয়ার হো গ্যায়া’ এই সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে।

১৯৯৮ সালে ‘জিনস’ নামে আরেকটি তামিল ছবিতে অভিনয় করেন এবং সিনেমাটি ব্যবসাসফল হয়। ১৯৯৯ সালে সঞ্জয় লীলা বানসালির ‘হাম দিল দে চুকে সানাম’ সিনেমায় অভিনয় ঐশ্বরিয়া রায়কে প্রথম সাফল্য এনে দেয়। এই সিনেমায় তার বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন সালমান খান ও অজয় দেবগন। দ্বিতীয় সাফল্য আসে একই বছর সুভাষ ঘাইয়ের ‘তাল’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে। এই ছবিতে তিনি অক্ষয় খান্না ও অনি কাপুরের সাথে কাজ করেছিলেন।

২০০০ সালে প্রথমবারের মতো তিনি শাহরুখ খানের বিপরীতে অভিনয় করেন ‘জোশ’ সিনেমায়। এই ছবিটি নিয়ে সকলের মিশ্র অভিব্যক্তি থাকলেও ছবিটি ব্যবসাসফল ছিল। সেই বছরেই ‘ঢাই আকসার প্রেম কাহানি’-তে অভিষেক বচ্চনের সাথে জুটিবদ্ধ হন এবং ‘মোহাব্বতে’ সিনেমায় পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেন।

২০০২ সালে তিনি আবারও শাহরুখ খানের সাথে সঞ্জয় লীলা বানসালির ‘দেবদাস’ সিনেমায় জুটিবদ্ধ হন। দুর্দান্ত অভিনয়ের মাধ্যমে জয় করেন সকলের হৃদয় এবং সিনেমাটিও ব্যাপক সাফল্য পায়। পরবর্তীতে ছবিটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শন করা হয়। এরপর ২০০৪ সালে চুক্তিবদ্ধ হন একটি থ্রিলার মুভির জন্য, ছবিটির নাম ছিল ‘খাকি’।
২০০৪ সাল, ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘রেইনকোট’ সিনেমায় অভিনয়ের মধ্য দিয়ে আবার ফিরে আসেন সাফল্যের দোরগোড়ায়। এই ছবিটি জাতীয় চলচিত্র পুরস্কার পায়। ২০০৫ সালে ‘শব্দ’ এবং ‘বান্টি অউর বাবলি’-এই দুটি সিনেমায় তিনি অভিনয় করেন। ২০০৬ সালে ঐশ্বরিয়া অভিনীত দুটি সিনেমা মুক্তি পায়। ‘উমরাও জান’ ও ‘ধুম-২’। ‘ধুম-২’ একটি বøকবøাস্টার সিনেমা ছিল। ২০০৭ সালে তার অভিনীত মণিরতœমের ‘গুরু’ সিনেমাটি ব্যাপক সাফল্যের মুখ দেখে এবং আন্তর্জাতিকভাবে বেশ সুনাম অর্জন করে।
২০০৮ সালে ‘যোধা আকবর’ তার অভিনীত আর একটি ব্যবসা সফল সিনেমা। একই বছর তিনি বিগ বি এবং অভিষেক বচ্চনের সাথে ‘সরকার রাজ’ নামক একটি সিনেমায় অভিনয় করেন। ২০০৯ সালে অভিনয় করেন ‘দ্য পিংক প্যান্থার-২’ সিনেমায়। ২০১০ সালে সুপারস্টার রজনীকান্তের সাথে ‘এনথেরান’ সিনেমায় অভিনয় করেন।

২০১৫ সালে অভিনয় করেন ‘জাজবা’ সিনেমায়। পরের বছর অভিনয় করেন সরবজিৎ মুভিতে। এই ছবিটিতে তার অভিনয় ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে। ঐশ্বরিয়া রায়ের সর্বশেষ অভিনীত সিনেমা মুক্তি পায় ২০১৬ সালে- ‘অ্যা দিল হ্যায় মুশকিল’।

হলিউডের ‘ব্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস’ ও ‘প্রোভোকড’ সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছিলেন। ‘ব্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস’ তার ক্যারিয়ারের একটি অন্যতম সাফল্য। ‘প্রোভোকড’-এ এক নির্যাতিত নারী কী করে প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে, তা অনেক বাস্তব অভিনয়ের মাধ্যমে দেখিয়েছেন তিনি।

ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘চোখের বালি’-তে তার অভিনয় একেবারেই অন্য ধাঁচের ছিল। রবি ঠাকুরের বিনোদিনীকে যেন ছবিটির সময় তিনি পূর্ণাঙ্গভাবেই ধারণ করতে পেরেছিলেন। বিনোদিনীর প্রেম, ক্ষোভ, বঞ্চনা সকলই ঐশ্বরিয়ার অভিনয় ও অভিব্যক্তির মধ্য দিয়ে দর্শক সমাজের মন ছোঁয়।

অভিনয় দিয়ে তিনি আপামর জনসাধারণের মন জয় করেছেন, ঘরে তুলেছেন সম্মানজনক সব পুরস্কার। ১৯৯৯ এবং ২০০২ সালে ‘হাম দিল দে চুকে সানাম’ এবং ‘দেবদাস’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার। ‘মোহাব্বতে’ সিনেমার জন্য পেয়েছেন সেরা সাপোর্টিং অভিনেত্রীর পুরস্কার।
২০০৯ সালে তার অসামান্য অভিনয় দক্ষতার কারণে তিনি ভারত সরকারের কাছ থেকে পদ্মশ্রী সম্মাননা অর্জন করেন। ২০১২ সালে অর্জন করেন ফ্রান্সের অরড্রি ডেস আর্টস অ্যাট ডেস লেট্রিস পুরস্কার। এখানেই শেষ নয়, ২০০৪ সালে বিখ্যাত মাদাম তুসোর জাদুঘরে তার প্রতিমূর্তি স্থাপন করা হয়। নেদারল্যান্ডের কেউকেনহফ গার্ডেনে তার নামে একটি টিউলিপ ফুলের নাম রাখা হয়। ফ্রান্সেও তার জনপ্রিয়তা রয়েছে।

বিখ্যাত আন্তর্জাতিক কান চলচ্চিত্র উৎসবে তাকে জুরি বোর্ডের একজন হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। বিখ্যাত অপেরাহ উইনফ্রে শোতে তিনি বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। তিনিই একমাত্র ভারতীয়, যিনি এই দুর্লভ সম্মানের অধিকারী।

ঐশ্বরিয়া রায় ল’রিয়ালের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। এছাড়া টাইটান ঘড়ি, কোকাকোলা, ল্যাকমে বিউটি প্রোডাক্ট, নক্ষত্র ডায়মন্ড, কল্যাণ জুয়েলার্সসহ নানান প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন।
‘ধুম-২’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সময় তিনি অভিষেক বচ্চনের সাথে ভালোবাসার সম্পর্কে আবদ্ধ হন। ২০০৭ সালের ২০ এপ্রিল মুম্বাইতে তাদের বিবাহের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।

ঐশ্বরিয়া রায় থেকে তিনি ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন হন, বচ্চন পরিবারের পুত্রবধূ হিসেবে তার গৃহপ্রবেশ হয়। ২০১১ সালের ১৬ নভেম্বর বচ্চন পরিবারে নতুন কন্যাসদস্য আসে, নাম রাখা হয় আরাধ্য।

ঐশ্বরিয়া রায় ১৯৭৩ সালের আজকের দিনে (১ নভেম্বর) ভারতের কর্ণাটকে জন্মগ্রহণ করেন।

লেখক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

Leave A Reply

Your email address will not be published.