Take a fresh look at your lifestyle.

জন্মদিনে স্মরণ : কবি অরুণ মিত্র

0

বাবলু ভট্টাচার্য :

রবীন্দ্রোত্তর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রথিতযশা কবি ও ফরাসি ভাষা ও সাহিত্যের খ্যাতনামা অধ্যাপক ও অনুবাদক অরুণ মিত্র।

পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন অধ্যাপক।

তার কাব্যগ্রন্থের নাম : ‘প্রান্তরেখা’, ‘উৎসের দিকে’, ‘ঘনিষ্ঠ তাপ’, ‘মঞ্চের বাইরে’, ‘শুধু রাতের শব্দ নয়’, ‘প্রথম পলি শেষ পাথর’, ‘শ্রেষ্ঠ কবিত’।

তার পিতা হীরালাল মিত্র ও মা যামিনীবালা দেবী।

অল্পবয়সেই অরুণ মিত্র কলকাতায় চলে আসেন। কলকাতার বঙ্গবাসী স্কুলে তার শিক্ষাজীবনের সূত্রপাত ঘটে।

১৯২৬ সালে এই স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

১৯২৮ সালে বঙ্গবাসী কলেজ থেকে আইসিএস পরীক্ষা ও ১৯৩০ সালে রিপন কলেজ (বর্তমানে সুরেন্দ্রনাথ কলেজ) থেকে ডিস্টিংশন সহ বিএ পাস করেন।

এই সময়ে সাহিত্যের চেয়ে সঙ্গীতের প্রতি তার অধিক আকর্ষণ পরিলক্ষিত হয়।

আবার এই সময়েই ভিক্টর হুগোর উপন্যাস ইংরেজি অনুবাদে পড়ে ফরাসি সাহিত্যের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং ফরাসি ভাষা শিখতে শুরু করেন।

বিএ পাস করার পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ পড়া শুরু করেন।

কিন্তু পিতামাতার জ্যেষ্ঠপুত্র হওয়ায় সাংসারিক দায়দায়িত্বের চাপে এমএ পড়া অসমাপ্ত রেখেই ১৯৩১ সালে আনন্দবাজার পত্রিকায় চাকরি গ্রহণ করতে বাধ্য হন। ১৯৪২ সাল পর্যন্ত আনন্দবাজার পত্রিকায় চাকরি করেছিলেন তিনি।

এই সময়ে বিভিন্ন সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, কবি ও লেখক গোষ্ঠীর সঙ্গে তার পরিচিতি ঘটে। বিশিষ্ট সাংবাদিক, লেখক ও বুদ্ধিজীবী সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার ব্যক্তিগত সম্পর্কসূত্রে ছিলেন তার নিকট আত্মীয়।

আনন্দবাজার পত্রিকায় চাকরি করার সময়েই মার্ক্সবাদের প্রতি আকৃষ্ট হন অরুণ মিত্র।

সেই সূত্রে ‘বঙ্গীয় প্রগতি লেখক সংঘ’ ও ‘সোভিয়েত সুহৃদ সমিতি’র সঙ্গে তার সম্পর্ক স্থাপিত হয়।

আনন্দবাজার ত্যাগ করার পর তিনি যোগ দেন সতেন্দ্রনাথ মজুমদার সম্পাদিত ‘অরণি’ পত্রিকায়।

ফরাসি সরকারের আহŸানে ১৮৪৮ সালে বৃত্তি গ্রহণ করে গবেষণার্থে ফ্রান্স যাত্রা করেন। প্যারিসের সরবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার গবেষণাকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ডক্টরেট লাভ করেন।

ফরাসি সাহিত্য অধ্যয়নের পর ১৯৫২ সালে দেশে ফিরে এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফরাসি ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপকের পদে অলংকৃত করেন।

এরপর দীর্ঘ কুড়ি বছর সপরিবারে এলাহাবাদে-ই বসবাস করেন।
১৯৭২ সালে কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণ করে ফিরে আসেন কলকাতায়।

১৯৯০ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানিক ডি. লিট. উপাধিতে ভূষিত করে। ফরাসি ভাষা ও সাহিত্যে নিরন্তর গবেষণার জন্য ১৯৯২ সালে ফরাসি সরকার তাঁকে ‘লিজিয়ন অফ অনার’ সম্মানে ভূষিত করে।

মাত্র ষোলো বছর বয়সে ‘বেণু’ নামে একটি কিশোর পত্রিকায় প্রথম অরুণ মিত্রের কবিতা প্রকাশিত হয়।

তার মৌলিক কাব্যগ্রন্থগুলো হলো : প্রান্তরেখা (১৯৪৩), উৎসের দিকে (১৯৫০), ঘনিষ্ঠ তাপ (১৯৬৩), মঞ্চের বাইরে মাটিতে (১৯৭০), শুধু রাতের শব্দ নয় (১৯৭৮), প্রথম পলি শেষ পাথর (১৯৮১) ও খুঁজতে খুঁজতে এতদূর (১৯৮৬)।

‘শুধু রাতের শব্দ নয়’ কাব্যগ্রন্থটি ১৯৭৯ সালে রবীন্দ্র পুরস্কারে এবং ‘খুঁজতে খুঁজতে এতদূর’ কাব্যগ্রন্থখানি ১৯৮৭ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারে সম্মানিত হয়। তার কাব্য সংকলন পনেরো খÐে প্রকাশিত হয়েছে।

১৯৭৯ সালে প্রকাশিত হয় তার একমাত্র উপন্যাস ‘শিকড় যদি চেনা যায়’। তার মৌলিক প্রবন্ধ গ্রন্থ ফরাসী সাহিত্য প্রসঙ্গে প্রকাশিত হয় ১৯৮৫ সালে।
বাংলায় তিনি একাধিক গ্রন্থ অনুবাদও করেছেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য : ‘ভারত : ‘আজ ও আগামীকাল’, ‘কাঁদিদ বা আশাবাদ’, ‘সে এক ঝোড়ো বছর’, ‘ভারতীয় থিয়েটার’, ‘গাছের কথা’, ‘মায়াকোভ¯ি’, ‘সার্ত্র ও তার শেষ সংলাপ’, ‘অন্যস্বর’ ও ‘পল এলুয়রের কবিতা’।

২০০০ সালের ২২ আগস্ট কলকাতায় অরুণ মিত্র প্রয়াত হন।

অরুণ মিত্র ১৯০৯ সালের আজকের দিনে (২ নভেম্বর) বাংলাদেশের যশোর শহরে জন্মগ্রহণ করেন।

লেখক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

Leave A Reply

Your email address will not be published.