Take a fresh look at your lifestyle.

জন্মদিনে স্মরণ : গীতা দত্ত

0

বাবলু ভট্টাচার্য :

পুরো নাম গীতা ঘোষ রায়চৌধুরী। বাবা ছিলেন বিত্তশালী জমিদার। ১৯৪২ সালে মাতৃভূমি পূর্ববঙ্গ ছেড়ে ভারতে পাড়ি জমায় গীতার পরিবার। বসতি গড়েন মুম্বাই এর দাদর এলাকায়।

ছোটবেলা থেকেই গান শিখতেন। একদিন প্রতিবেশী পণ্ডিত হনুমান প্রসাদের কানে এসেছিল সেই সুর। হনুমান প্রসাদেরই সংগীত আয়োজনে ‘ভক্ত প্রহ্লাদ’ ছবির গানে সহশিল্পী হিসেবে হিন্দি চলচ্চিত্রে প্রথম আত্মপ্রকাশ। সেটি ১৯৪৬ সালের কথা।

তবে সত্যিকার অর্থে চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে কাঁপন ধরালেন পরের বছর শচীনদেব বর্মণ সুরারোপিত ‘দো ভাই’ ছবির মাধ্যমে। ছবিতে তার গাওয়া ‘মেরা সুন্দর স্বপ্না বিত গায়া’ গানটি দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। চারপাশে ছড়িয়ে পড়ল গীতার কণ্ঠের জাদু। জন্ম হলো নতুন এক গানের পাখি।

‘দো ভাই’-এর পর ‘দেবদাস’ (১৯৫৫) এবং ‘পিয়াসা’য় (১৯৫৭) গীতার গলাকে কাজে লাগালেন শচীনদেব বর্মণ। সে সময়ের আরো অনেক নামকরা সংগীত পরিচালকের সুরে বারোশোরও বেশি গান গেয়েছেন গীতা দত্ত। তার গাওয়া গানগুলোর মধ্যে : ‘তু মেরা চাঁদ ম্যায় তেরি চাঁদনী’, ‘অ্যায় দিল মুঝে বাতা দে’, ‘বাবুজি ধীরে চালনা’, ‘ভগবান দো ঘড়ি’, ‘মেরা নাম চিন চিন চো’, ‘ঠাণ্ডি হাওয়া কালি ঘাটা’ ইত্যাদি একসময় খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।

‘কাভি কাভি’ ছবির সেই বিখ্যাত ‘কাভি কাভি মেরে দিলমে খায়াল আতা হ্যায়’ গানটি খৈয়াম সাহেব ‘কাফির’ নামে একটি ছবির জন্য গীতার কণ্ঠে প্রথম রেকর্ড করিয়েছিলেন। কিন্তু ‘কাফির’ আর আলোর মুখ দেখেনি। পরে লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে ‘কাভি কাভি’ ছবিতে গানটি আমরা শুনি।

কলকাতার বাংলা ছবিতে প্রায় ২২টি গান গেয়েছিলেন গীতা দত্ত। নচিকেতা ঘোষের সুরে ১৯৫৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘পৃথিবী আমারে চায়’ ছবিতে ‘নিশি রাত বাঁকা চাঁদ’ ছাড়াও একই ছবির রাগাশ্রয়ী ‘তুমি বিনা এ ফাগুন বিফলে যায়’ গানটি গীতা দত্তের কন্ঠে আমরা শুনি।

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরে ‘হারানো সুর’ ছবির ‘তুমি যে আমার, ওগো তুমি যে আমার’ বাংলা রোমান্টিক গানের জগতে এক মাইলফলক। ১৯৬০ সালে মুক্তি পাওয়া ‘হসপিটাল’ ছবির সেই বিখ্যাত গান ‘এই সুন্দর স্বর্ণালি সন্ধ্যায়’ আমাদের সেই সোনালি যুগে নিয়ে যায়।

১৯৫০ দশকের শেষ এবং ১৯৬০-এর দশকের শুরুতে গীতা দত্ত বেশ কিছু বিখ্যাত বাংলা গান গেয়েছেন। এই সময়ে বাংলা ছবি এবং সংগীতের স্বর্ণযুগ চলছিল। তার বেশিরভাগ বাংলা গানেরই সুরকার ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। তবে তিনি নচিকেতা ঘোষ এবং সুধীন দাশগুপ্তের সুরেও বেশকিছু গান গেয়েছিলেন।

ভারতের প্রথম সিনেমাস্কোপ ছবি ‘বাজি’র শুটিংয়ের সময় ছবির তরুণ পরিচালক গুরু দত্তের সঙ্গে রোমান্সে জড়িয়ে পড়েন গীতা। বিয়ে হয় ১৯৫৩ সালের ২৬ মে। গীতা ঘোষ রায়চৌধুরী হয়ে গেলেন গীতা দত্ত। গুরু দত্তের সঙ্গে প্রেম ও বিয়ের পর প্রথম দু-তিন বছর ছিল গীতার সংগীতজীবনের সবচেয়ে সোনালি সময়। ব্যক্তিগত জীবনের সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি তার। অরুণ (১৯৫৪) ও তরুণ (১৯৫৬) নামের দুই পুত্র সন্তানের জন্মের পর ‘গৌরী’ ছবির সূত্রে গুরু দত্ত আটকা পড়েন সেকালের গ্ল্যামারাস নায়িকা ওয়াহিদা রেহমানের প্রেমে।

কষ্ট ভোলার জন্য গীতা গানের কণ্ঠে তুলে নিয়েছিলেন অ্যালকোহল। সেসময় হিন্দি সিনেমার প্লে-ব্যাকে প্রধান শিল্পী ছিলেন গীতা দত্ত ও লতা মঙ্গেশকর। আশা ভোঁশলে তখন নবাগতা ও অনভিজ্ঞা। প্রধান সংগীত পরিচালক শচীন দেববর্মণ, লতার চেয়ে গীতাকেই বেশী চাইতেন; তাই গীতার ক্যারিয়ারই ছিল বেশী সম্ভাবনাময়। কিন্তু পারিবারিক টানাপড়েন, অশান্তি ও মদ্যপান গীতাকে দূরে সরিয়ে নেয়। একের পর এক রেকর্ডিং মিস করতে থাকায়, শচীন দেববর্মণ একসময় হাল ছেড়ে দিয়ে লতাকে দিয়েই গান রেকর্ডিং করাতে শুরু করেন; আজকের লিজেন্ড, লতা মঙ্গেশকরের দৃঢ় ভিত তখনই গড়ে ওঠে।

একদিকে গীতা, অন্যদিকে ওয়াহিদা- এই টানাপোড়েনে অতিরিক্ত ঘুমের বড়ি খেয়ে নিজের জীবনের ইতি টানেন গুরু দত্ত, ১৯৬৪ সালে। তার মৃত্যুতে গীতা এতটাই ভেঙে পড়েছিলেন যে ছয় মাস নিজের সন্তানদেরও চিনতে পারেননি। অত্যাধিক মদ্যপানের ফলে একসময় লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে গীতা দত্ত মৃত্যুবরণ করেন।

গীতা দত্ত ১৯৩০ সালের আজকের দিনে (২৩ নভেম্বর) বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার ইদলাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

লেখক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

Leave A Reply

Your email address will not be published.