Take a fresh look at your lifestyle.

‘ নৌকায় ভোট দিস্! বাচ্চা দে, আছাড় মেরে দিই’

শার্শায় ‘নৌকায় ভোট দেয়ায়’ শতাধিক বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর

0

প্রতিবেদক: যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড ২ নং কলোনিতে ভাঙ্গা ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে তাসলিমা বেগম বললেন, ঘর ভাংচুর করে কোলের দেড় মাসের বাচ্চার দিকে হাত বাড়িয়ে হামলাকারীরা বললো, ‘ নৌকায় ভোট দিস্! বাচ্চা দে, আছাড় মেরে দিই, তাইলে তোর স্বামীর খোঁজ পাওয়া যাবে!’ হাত পা ধরে নিজের ও সন্তানের প্রাণ বাঁচিয়েছেন তাসলিমা। সকালে স্বামী জামাল হোসেনকে খুঁজতে আসবে-হুমকি দিয়ে গেছে।
ট্রলি চালক মিঠুন হোসেনের স্ত্রী জেসমিন খাতুন বললেন, তাদের বাড়ি দোকান ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে। তার ছেলেকে জবাই করে দেয়ার হুমকি দিয়ে গেছে। ভয়ে স্বামী বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। ২০০১ সালে নৌকায় ভোট দেয়ায় তারা এমন হামলার শিকার হয়েছিলেন। সেই দিন কি আবার ফিরে এসেছে; এ প্রশ্ন জেসমিনের।
যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া ইউনিয়নে নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতায় শতাধিক বাড়ি ঘর ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। রোববার রাতে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিজয় মিছিল থেকে এ হামলা চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী ইলিয়াস কবির বকুলকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী আনারস প্রতীকের আব্দুল খালেক। ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি, নৌকায় ভোট দেয়ায় তাদের উপর হামলা চালিয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী আনারস প্রতীকের আব্দুল খালেক’র কর্মী সমর্থকরা।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ভোটগণনা শেষে রোববার রাতে ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড ২ নং কলোনিতে আনারস প্রতীকের বিজয় মিছিল বের হয়। মিছিল শেষে ফেরার পথে নৌকার সমর্থকদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই পাড়াতেই অন্তত দশটি বাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। ভাংচুর করা হয়েছে দোকানপাট, মিনিবাস, ইজিবাইক, মোটরসাইকেল। আহত হয়েছে অন্তত দশজন। এলাকার পুরুষরা ভয়ে পালিয়ে গেছে। ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় ওই বাড়িগুলোতে নারী ও শিশুরা অবস্থান করছেন।
ওই এলাকার বৃদ্ধ গনি পাঠান জানালেন, তার ছেলে সুখচান নৌকায় ভোট দেয়ায় তার বাড়ির সামনে বোমা মেরেছে। কুপিয়ে পিটিয়ে ভাংচুর করেছে টিনের ঘর। ধারদেনা করে ঘরটি তৈরি করেছেন; এখনও দেনাও শোধ হয়নি।
নাসির উদ্দিনের স্ত্রী নুরনাহার অভিযোগ করেন, আব্দুল খালেকের লোকজন সন্ত্রাসীদের ভাড়া করে নিয়ে এসে হামলা চালিয়েছে। হামলাকারীদের সাথে দু’জন পুলিশও ছিল। কিন্তু তারা কোনো ভূমিকা রাখেনি বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
বৃদ্ধা ফাতেমা বেগম হাউমাউ করে কাঁদছিলেন। তার উঠানে ভাঙ্গা পড়ে আছে মিনিবাস। বিদেশ থেকে মেয়ের পাঠানো টাকায় গাড়িটি কেনা। সেটি ভাঙ্গার পর তার বাড়ির দরজা জানালে ভেঙ্গে তছনছ করেছে। ঘরে শুয়ে থাকায় ভাঙ্গা কাঁচে তার কপালও কেটে গেছে।
শুধু দুই নং কলোনিতেই নয়; হামলার ঘটনা ঘটেছে ২ নং ওয়ার্ডে, পিপড়াগাছি গ্রামে, মহিষাকুড়া এলাকায়। সবমিলিয়ে অন্তত শতাধিক ঘরবাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মহিষাকুড়া বাজারে নৌকার নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা ভাংচুর চালিয়ে নৌকার প্রতিকৃতি খুলে এনে আনারসের কার্যালয়ের সামনে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে।
বাগআঁচড়া ইউনিয়নে পরাজিত নৌকার প্রার্থী ইলিয়াস কবির বকুল অভিযোগ করেন, প্রশাসনের সহযোগিতায় নির্বাচনে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এরপর বিএনপি-জামায়াতের লোকজন এনে আনারসকে বিজয়ী করা হয়েছে। ফলাফল ঘোষণার পর তার কর্মী সমর্থকদের বাড়ি ঘরে হামলা ভাংচুর তাণ্ডব চালানো হয়েছে। ভয়ে কর্মী সমর্থকরা বাড়ি থাকতে পারছেন না।
তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল খালেক। তার দাবি, প্রত্যেক ওয়ার্ডে ৭/৮ জন মেম্বর প্রার্থী ছিলেন। তাদের সমর্থকরাই বিরোধ সংঘর্ষ ভাংচুরে জড়িয়ে পড়েছেন। তিনি এলাকায় পরিস্কার ঘোষণা দিয়েছেন, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে তিনি কোনো দায় নেবেন না। অপরাধীদের আইনের হাতে সোপর্দ করা হবে। তিনি আরও দাবি করেন, তিনি নিজেই হামলার শিকার হয়েছেন। তার কর্মী সমর্থকরাও আহত হয়েছেন।
এদিকে, রোববার রাতের ওই হামলার পর সোমবার এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
যশোর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নাভারণ সার্কেল) জুয়েল ইমরান সাংবাদিকদের বলেন, যেসব এলাকা থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে, সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ গ্রহণসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবেও তিনি উল্লেখ করেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.