Take a fresh look at your lifestyle.

জন্মদিনে স্মরণঃ স্যার জগদীশচন্দ্র বসু

0

বাবলু ভট্টাচার্য:

উনিশ শতকে মুষ্টিমেয় কয়েকজন রাজা বাদশার পৃষ্ঠপোষকতায় সঙ্গীত ও শিল্প-সাহিত্যের কিছু উন্নতি হলেও পুরো দুই শ’ বছরের মধ্যে ভারতীয় উপমহাদেশে বিজ্ঞান সাধনার কোন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। জগদীশ বসুই প্রথম ভারতীয় বিজ্ঞানী যিনি ভারতে আধুনিক বিজ্ঞানের গবেষণায় ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন।

জগদীশ চন্দ্র বসুর পিতা ভগবান চন্দ্র বসু ছিলেন তৎকালীন ব্রাহ্ম সমাজের একজন বিশিষ্ট সদস্য। চাকরি করতেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের এবং একই সাথে ছিলেন ফরিদপুর, বর্ধমানসহ কয়েকটি এলাকার সহকারী কমিশনার হিসেবে।

তাঁর শিক্ষাজীবনের ধাপগুলো শুরু হয় ফরিদপুরে। তারপর ১৮৬৯ সালে হেয়ার স্কুল, সেখান থেকে সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল। তিনি ১৮৭৫ ষোল বছর বয়সে প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উর্ত্তীণ হয়ে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হন। ১৮৭৭ সালে অনার্স এবং ১৮৭৯ তে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন।

১৮৮০ সালে লন্ডনে ডাক্তারি পড়ার জন্য মেডিকেল ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে তা বাদ দিয়ে ১৮৮১ সালে লন্ডন ত্যাগ করে কেম্ব্রিজে যান। ১৮৮৪ সালে কেম্ব্রিজ ক্রাইস্ট কলেজ থেকে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বিষয়ে ট্রাইপোস (কেম্ব্রিজের বিশেষ কোর্স) এবং একই সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এস.সি ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরলেন।

১৮৮৫ সালে জগদীশ বসু প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতা জীবন শুরু করলেন। তিনি তাঁর মৌলিক গবেষণা কলেজের ল্যাবরেটরিতে শুরু করলেন। প্রথম জীবনে তিনি ইথার তরঙ্গ ও বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ নিয়ে গবেষণা শুরু করলেন। তাঁর গবেষণার প্রথম সাফল্য ছিল বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গের সাহায্যে সংকেত বা সংবাদ প্রেরণের সম্ভাবনা আবিষ্কার,যা এখন থেকে দেড়শত বছর আগের কথা !

আমরা যে এফএম বা রেডিওতে গানের মূর্ছনায় হারিয়ে যাই তার আবিষ্কারক হিসেবে কিছুদিন আগেও পুরো বিশ্ববাসী ইটালির বিজ্ঞানী মার্কোনিকেই জানত। কিন্তু ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত IEEE (Institute of Electrical and Electronics Engineers)এর প্রসিডিঙ্গে আমাদের জগদীশ বসুকে রেডিওর প্রকৃত আবিষ্কারক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কারণ, মার্কোনি তার আবিষ্কারে অনেক সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেছিলেন যার মধ্যে একটি হচ্ছে কোহেরার (২টি ধাতব পাতের মাঝে খানিকটা পারদ), যা ছিল রেডিও বা তারহীন সংকেত পাঠানোর প্রক্রিয়ার মূল বিষয়।

মজার ব্যপার হচ্ছে এই কোহেরার এর প্রকৃত আবিষ্কারক স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু, যা মার্কোনি বা তার সমসাময়িক বিজ্ঞানীরা কেউ স্বীকার করেনি। মার্কোনি, বসুর তৈরি কোহেরারটি সামান্য পরিবর্তন করেছিলেন। বসুর কোহেরারটি ছিল U আকৃতির মত আর মার্কোনিরটি ছিল সোজা।

১৮৯৬ সালে জগদীশ চন্দ্র বসু অদৃশ্য আলোক সম্পর্কে লিভারপুলের ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশনের বক্তৃতা দেন। ঐ সময় যদি তিনি নিজের নামে বেতার যন্ত্র পেটেন্ট করতেন, তাহলে মার্কোনি না, তিনিই হতেন বেতার যন্ত্রের সর্বপ্রথম আবিষ্কারক।

লন্ডনে রয়েল ইনস্টিটিউটে তাঁকে বক্তৃতা দেওয়ার জন্যে আহবান করা হয়। তিনি তাঁর কোহেরারটি নিয়ে একটি নিবন্ধ রয়েল সোসাইটিতে পড়েছিলেন। তাঁর এই কোহেরারটি দিয়ে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এক মাইল দূরের বাসভবনে সাংকেতিক চিহ্ন প্রেরণ করেছিলেন। ১৮৯৬ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় মৌলিক গবেষণার জন্য তাঁকে ডি.এস.সি উপাধি প্রদান করে।

১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথকে লেখা একটি চিঠিতে বলেন যে, ‘আমি যদি একবার টাকার মোহে পড়ে যাই তাহলে আর কোনদিন বের হতে পারব না।’ টাকার প্রতি তাঁর লোভ ছিল না বলেই তিনি পেটেন্ট নিজের নামে করেননি।

১৯৩৭ সালের ২৩ নভেম্বর জগদীশ চন্দ্র বসু তাঁর কর্মময় জীবন থেকে চিরবিদায় নিলেন।

আমরা তাঁর পরবর্তী প্রজন্ম উত্তরাধিকার সূত্রে পেলাম ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির।’ তিনি একজন সাহিত্যিকও ছিলেন। তাঁর লেখা ‘অব্যক্ত’ বাংলা ভাষায় একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। এছাড়াও আমরা যে সায়েন্স ফিকশানগুলো পড়ে বিজ্ঞানকে নিয়ে প্রতিনিয়ত নতুনভাবে চিন্তা করি, তার জনক হলেন জগদীশ চন্দ্র বসু। ১৮৯৬ সালে তাঁর লেখা প্রথম সায়েন্স ফিকশানটির নাম ছিল ‘নিরুদ্দেশের কাহিনী’।

জগদীশচন্দ্র বসু ১৮৫৮ সালের আজকের দিনে (৩০ নভেম্বর) ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন।

লেখক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

Leave A Reply

Your email address will not be published.