Take a fresh look at your lifestyle.

পান চাষে সাবলম্বী কৃষক, বাড়ছে আবাদ

0
শাহিন আহমেদ , অভয়নগর (যশোর): অভয়নগরে পান চাষে সাবলম্বী হয়েছেন অনেক কৃষক। পান চাষ লাভজনক হওয়ায় বাড়ছে আবাদ। অধিকাংশ কৃষকের প্রধান আয়ের উৎস পান চাষ। প্রায় প্রত্যেক গ্রামজুড়েই রয়েছে পানের বরজ। যাদের জমি নেই, তারাও অন্যের জমি বন্ধক নিয়ে পান চাষ করছেন। পান বিক্রির টাকায় পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়েছেন অনেকই। পান বিক্রির জন্য নওয়াপাড়া ও চেঙ্গুটিয়া রয়েছে বড় মোকাম। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত পান স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়েও দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। এ অঞ্চলের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
এ বিষয়ে অভয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম সামদানি বলেন, উপজেলায় এ বছর ৪০০ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়েছে। এতে হেক্টর প্রতি উৎপানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০ মেট্রিক টন। জাইকার আয়োজনে উপজেলাতে পান চাষিদের কয়েক টি প্রশিক্ষণ করানো হয়েছে। যে কারণে এ এলাকায় পান চাষ ভালো হচ্ছে। লাভজনক হওয়ায় দিন দিন এখানে পান চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। উৎপাদিত পান স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতেও সরবরাহ করা হচ্ছে।’
চেঙ্গুটিয়া গ্রামের পান চাষি রফিকুল ইসলাম, আব্দুল গনি, আবুল খায়ের, সাইফুদ্দিন, শওকত হোসেন, আনসার হোসেন, কিতাব আলী, আমিন উদ্দিন, ইসলাম মোড়লের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পান সাধারণ ভাদ্র-আশ্বিন মাসে দো-আঁশ মাটিতে চাষ করতে হয়। ভালো ভাবে আগাছা পরিস্কার করে চাষ দিয়ে প্রতি এক শতক জমিতে ২ কেজি ফসফেট, ১ কেজি চুন ও ২০০ গ্রাম লিজেন্ট মাটির সঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে দিতে হয়। পরে দেড় ফুট দূরত্বে সারি বেঁধে মাটি উঁচু করে ১ ফুট দূরত্বে পানের গাছ লাগিয়ে দিতে হয়। প্রতিটি পানের লতা থেকে ১২ থেকে ১৫টি চারা লাগানো যায়। এরপর বাঁশের শলা, পাটকাঠি, জিআই তার, কাশবন, সুপারি পাতা ও সুতা দিয়ে পানের বরজ বানাতে হয়। জমির চারদিকে বেড়া দিতে উপরে জিআই তার ও কাশবন দিয়ে বানানো হয় চালা। এতে প্রতি বিঘা জমির পানের বরজে খরচ হয় এক থেকে দেড় লাখ টাকা। মাটি থেকে পানের লতা যখন ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি লম্বা হয়, তখন পাশে একটি ৫ থেকে ৬ ফুট লম্বা বাঁশ বা পাটকাঠি পুঁতে দেওয়া হয়। এরপর পানের লতাটি ধীরে ধীরে বড় হয় এবং কাঠি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে। ৫ থেকে ৬ মাস পর থেকে পান বিক্রির উপযোগী হয় এবং এরপর প্রতি ৮ থেকে ১০ দিন পরপর পান বিক্রির জন্যে বাজারে নেওয়া যায়। একটি পানের বরজ থেকে সর্বনিম্ন ১৫ বছর একাধারে পান পাওয়া যায়।
বাঘুটিয়া এলাকার পান চাষি আমিনুর রহমান, হাবিবুর রহমান, শেখ জালাল, মোশারেফ হোসেন, বাবুল উদ্দিন জানান, পানের বরজে এক প্রকার ফাপপচা রোগ দেখা দেয়। এ থেকে বাঁচাতে পারলে একটি বরজ ২০ থেকে ২৫ বছর থাকে। সাধারণ আষাঢ়-শ্রাবন মাসে এ রোগটি বেশি দেখা যায়। এটি পানে সবচেয়ে বড় রোগ। তবে এ রোগ দমেন ফোরি, এডমা ও কাফডার-এ নামে তিনটি ঔষধ ব্যবহার করা হয়।এছাড়াও কিন্তু শীতের সময় এক প্রকার বিষাক্ত কুয়াশা পান গাছে লাগলে পান পাতা ঝরে যায়। এতে চাষিদের মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এটা প্রতিরোধে কোনো ওষুধ না থাকায় মাঝেমধ্যে বিপাকে পড়তে হয় চাষিদের। অনেক চাষি কুয়াাশা ঠেকানোর জন্য বরজের চারপাশ পলিথিন দিয়ে ঢেকেও দেয়।
পান চাষি রফিকুল রহমান জানান, আমার দুই বিঘার উপর একটা পানের বরজ আছে, তার বয়স প্রায় ১০ বছর হবে। পান চাষ করেই আমার সংসার চলে। এই পর্যন্ত পানের ভালো ফলন পেয়েছি, দামও ভালো পেয়েছি। পান চাষ করে আমি স্বাবলম্বী। বাজারে পানের চাহিদা থাকায় পুরাতন পানের যে দাম পেয়ে ছিলাম, এখন নতুন পানেরও দাম তেমনি পাচ্ছি। হাটে পান বিক্রি করে ভালো আয় করতে পারছি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.