Take a fresh look at your lifestyle.

যশোরে ১৪ ইউনিয়নে নৌকাডুবি কেন?

0

প্রতিবেদক : তৃতীয় ধাপে যশোরের তিন উপজেলার ৩৫ ইউনিয়ন পরিষদের ১৪টিতে নৌকার প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন। এসব ইউনিয়নে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, ওয়ার্কার্স পার্টি ও বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। নৌকার পরাজয়ের কারণ হিসাবে প্রার্থী বাছাইয়ে তৃণমূলের মতামতকে উপেক্ষা, কম জনপ্রিয় নেতাকে মনোনয়ন, অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও গ্রুপিংয়ের রাজনীতিকে দায়ী করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। এ দলে অনেক যোগ্য লোক আছে। সবাইকে দল সন্তুষ্ট করতে পারেনি। এজন্য অনেকেই বিদ্রোহী হয়েছেন। তাদের অনেকেই ব্যক্তি জনপ্রিয়তায় বিজয়ী হয়েছেন। বিদ্রোহীদের মদদদাতাদের চিহ্নিত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা যায়, শার্শা উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার পাঁচ প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন। এর মধ্যে নিজামপুর ইউনিয়নে নৌকার আব্দুল ওহাবকে পরাজিত করেছেন বিদ্রোহী প্রার্থী সেলিম রেজা বিপুল। বাহাদুরপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মিজানুর রহমানকে পরাজিত করেছেন বিদ্রোহী প্রার্থী মফিজুর রহমান। কায়বায় বর্তমান চেয়ারম্যান নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হাসান ফিরোজ টিংকুকে পরাজিত করেছেন বিদ্রোহী প্রার্থী আলতাফ হোসেন। গোগা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও নৌকার প্রার্থী আব্দুর রশিদকে পরাজিত করেছেন বিদ্রোহী প্রার্থী তবিবার রহমান। বাগআঁচড়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ইলিয়াছ কবির বকুলকে পরাজিত করেছেন বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল খালেক। শার্শার বাহাদুরপুর ইউনিয়নে বিজয়ী বিদ্রোহী প্রার্থী মফিজুর রহমান বলেন, ১৯ বছর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। দল আমাকে মূল্যায়ন করেনি। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে ছিলেন। জনগণ আমাকে মূল্যায়ন করেছে। এজন্য আমি বিজয়ী হয়েছি।

এ উপজেলার আওয়ামী লীগ সভাপতি সিরাজুল হক মঞ্জু বলেন, দলীয় কোন্দল নির্বাচনে তেমন প্রভাব ফেলেনি। তবে প্রার্থী বাছাইয়ে ত্রুটি ছিল। বিদ্রোহীদের অনেকেই বিজয়ী হয়েছেন ব্যক্তি ইমেজে। আবার নৌকার অনেক প্রার্থী বিগত দিনে কাজ করতে গিয়ে হয়তো ভুলত্রুটি করেছেন। এজন্য মানুষ তাদের নির্বাচিত করেনি।

এদিকে মনিরামপুর উপজেলার ১৬ ইউনিয়নের ৭টিতে নৌকার প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ৫ জন ও বিএনপি সমর্থিত ২ জন নির্বাচিত হয়েছেন। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ কোন্দলে পরাজিত হয়েছেন নৌকার প্রার্থীরা। এ উপজেলায় নৌকার প্রার্থীদের পরাজিত করেন ভোজগাতী ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুর রাজ্জাক, ঢাকুরিয়া ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী আইয়ুব হোসেন গাজী, হরিদাসকাটি ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী আলমগীর লিটন, মনিরামপুর সদর ইউনিয়নে বিএনপি সমর্থিত (স্বতন্ত্র) নিস্তার ফারুক, চালুয়াহাটি ইউনিয়নে বিদ্রোহী আব্দুল হামিদ, খানপুর ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম এবং মনোহরপুর ইউনিয়নে বিএনপি সমর্থিত (স্বতন্ত্র) আক্তার ফারুক মিন্টু।

মনিরামপুর উপজেলার একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী বলেছেন, দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে তৃণমূলকে মূল্যায়ন করা হয়নি। মূল্যায়ন করা হয়েছে উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগের রেজুলেশন। ফলে অযোগ্য লোকও নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন। জনগণ যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নিয়েছে।

নৌকার প্রার্থীদের পরাজয় প্রসঙ্গে মনিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী মাহমুদুল হাসান বলেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড তাদের দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন। এর মধ্যে নৌকার ৫ প্রার্থীকে জনগণ গ্রহণ না করায় স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। আর দুটিতে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এর একটিতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। অপরটিতে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। বিদ্রোহী ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের অনেকেই হয়তো জনপ্রিয় ও কাজের মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন-এজন্য জনগণ তাদের নির্বাচিত করেছেন। প্রার্থী বাছাইয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ত্রুটি হয়েছে। তৃণমূলের রেজুলেশন অনুসরণ না করে সিরিয়ালের ৪ নম্বর প্রার্থীকেও মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

অপরদিকে, বাঘারপাড়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ৭টিতেই নৌকার প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। বাকি দুটিতে নৌকার প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন। বন্দবিলা ইউনিয়নে ওয়ার্কার্স পার্টির সবদুল হোসেন খান দ্বিতীয় মেয়াদে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। রায়পুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মুনজুর রশিদ স্বপন নির্বাচিত হয়েছেন। এ ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনের আগে ‘রাজাকারপুত্র’ অভিযোগ উঠেছিল। তার মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচিও পালিত হয়।

Leave A Reply

Your email address will not be published.