Take a fresh look at your lifestyle.

শুভ জন্মদিন সুবর্ণা মুস্তাফা

0

বাবলু ভট্টাচার্য:

অনেকের মতে চেহারায় বাঙালি রমনীর শাশ্বত সৌন্দর্যের মৌন রূপ স্পষ্ট এবং স্মিত যৌন আবেদন ও রহস্যময় ঘরানার সৌন্দর্য যার সামগ্রিক সৌন্দর্যকে প্রায় ক্ল্যাসিক রূপ দিয়েছে তিনি সুবর্ণা মুস্তফা।

আশির দশকে তিনি ছিলেন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং আকর্ষনীয় টিভি অভিনেত্রী। বিশেষ করে আফজাল হোসেনের সাথে তার জুটি ব্যাপক সমাদর লাভ করে।

৭০ এর দশকে এই জুটির কাজ শুরু হলেও জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে ৮০ এর দশকে। সেই জনপ্রিয়তা এখনও মানুষকে নষ্টালজিক করে তোলে। এমনকি এই মুহূর্তেও আফজাল- সুবর্ণা জুটি নিয়ে নাটক তৈরি হয় এবং সেটিতে আগের প্রজন্মের দর্শকদের সাথে সাথে বর্তমান প্রজন্মের দর্শকদেরও আগ্রহ লক্ষ করা যায়।

সাংস্কৃতিক পরিবারেই জন্ম তার। বাবা গোলাম মুস্তাফা ছিলেন একজন সুবিখ্যাত অভিনেতা, যিনি ১৯৮৬ সালে ‘শুভদা’ সিনেমায় অভিনয় করার জন্য জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। মা হোসনে আরা মুস্তাফা কলকাতা থেকে কলেজ পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে পড়াশোনা করেছেন। চমৎকার আবৃত্তি করতেন, মঞ্চেও অভিনয় করতেন। টিভির জন্য নাটক লিখেছেন অসংখ্য। ‘আকাশ কুসুম’ নাটকে সুবর্ণা নিজেও অভিনয় করেছেন।

অবশ্য তার মিডিয়াতে কাজ শুরু অনেক ছোট বয়সেই। মায়ের হাত ধরে ৫/৬ বছর বয়সেই বেতারে কাজ করা শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ১৯৭৫ সালে ‘বরফ গলা নদী’তে অভিনয় দিয়ে টেলিভিশনে আবার যাত্রা শুরু।

এর পরই টেলিভিশনে আবদুল্লাহ আল মামুনের নির্দেশনাই করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি নাটক। পরবর্তীতে ১৯৭৬ সালে আল মনসুরের প্রস্তাবে বাংলাদেশের শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় নাট্যোৎসব এ ‘জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন’ এ অভিনয় করেন।

তখনও তিনি ভিকারুন্নেসা স্কুলের গণ্ডি পার করেননি।

ধীরে ধীরে টেলিভিশনে জনপ্রিয়তা পেতে থাকেন। একই সময় আফজাল-সুবর্ণা জুটিটিও জনপ্রিয় হতে থাকলো। দর্শকেরা পর্দায় তাদেরকে একসাথে দেখতে পছন্দ করতো। আফজাল-সুবর্ণার অনেক নাটকই জনপ্রিয় হয়েছিল, তবে ‘পারলে না রুমকি’ নাটকটি বাংলাদেশের টিভি নাটকে একটা নতুন মাত্রা নিয়ে এসেছিল।

একটা সময় সুবর্ণা মুস্তাফা, হুমায়ুন ফরিদীর সাথে জুটি বেঁধে নাটক করা শুরু করেন এবং সেই জুটিও যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পায়। এরই মাঝে হলিক্রস কলেজের সীমানা পার হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজীতে অনার্সে পড়াশোনাটাও চলছে।

৮০’র দশকের শেষের দিকে সবাইকে অবাক করে দিয়ে হুমায়ুন ফরিদীর সাথে বিয়ের মঞ্চে বসেন সুবর্ণা মুস্তাফা।

টেলিভিশনের অনেক কালজয়ী নাটকের সাথেই সুবর্ণা জড়িয়ে ছিলেন। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নাটক ধরা হয় যে ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকটিকে, সেটির রচয়িতা হুমায়ূন আহমেদ সুবর্ণা মুস্তাফাকে বলেছিলেন, যদি ‘মুনা’ চরিত্রটি সূবর্ণা করতে রাজি থাকেন তাহলেই কেবল তিনি নাটকটি নির্মাণ করবেন।

এছাড়া ‘অয়োময়’, ‘বারো রকম মানুষ’, ‘আজ রবিবার’ ইত্যাদি অসংখ্য জনপ্রিয় নাটকেও তিনি প্রধান চরিত্রে কাজ করেছেন। পরবর্তীতে ‘কাছের মানুষ’ এবং ‘ডলস হাউস’ নামের দুটো মেগা ধারাবাহিকেও প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

টেলিভিশনের সাথে সাথে সেই সময়ে মঞ্চেও সমান পারফর্ম করে গিয়েছিলেন সুবর্ণা। টানা ২৫ বছর ছিলেন ঢাকা থিয়েটারের সাথে।

পরিচালক হিসেবেও সুবর্ণা মুস্তাফা কিছু কাজ করেছেন। এটিএন বাংলার জন্য ‘আকাশ কুসুম’ নামের এক পর্বের একটা নাটক পরিচালনা করেন, যা কি না সেই সময়ে তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। পরবর্তীতে ‘শূন্য’ নামের আরেকটি এক পর্বের নাটক নির্মাণ করেন।

বিজ্ঞাপনেও তার মুখর পদচারণা ছিল। ক্যারিয়ারের সুবর্ণ সময়ে লাক্স সাবানের মডেল হয়েছিলেন সুবর্ণা।

এগুলো ছাড়া সিনেমা জগতেও তিনি পিছিয়ে ছিলেন না। ১৯৮০ সালেই সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকির ‘ঘুড্ডি’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ।

এরপরই অভিনয় করেন ‘নতুন বউ’ এবং ‘নয়নের আলো’ সিনেমাতে। ‘নতুন বউ’ সিনেমাতে অভিনয়ের জন্য তিনি পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পান।

নিয়মিত সিনেমায় অভিনয় না করলেও বিচ্ছিন্নভাবে কিছু সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এর মাঝে ভিন্ন ধারার সিনেমা বাদেও কিছু কিছু মূলধারার সিনেমাতে যেমন ‘পালাবি কোথায়’, ‘কমান্ডার’, ‘অপহরণ’ ইত্যাদিতে তার উপস্থিতি ছিল। চলচ্চিত্রে তার সর্বশেষ উপস্থিতি ছিল ‘গহীন বালুচর’ সিনেমাতে।

এছাড়া একজন ক্রিকেট ফ্যান হিসেবে ২০১৫ সাল থেকে ‘রেডিও ভূমি’তে ধারাভাষ্যকারের কাজটাও করে চলেছেন।

তার আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, তিনি সেন্সর বোর্ডের সদস্য হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্রের নির্বাচক হিসেবেও কাজ করেছেন।

শুধু বিনোদন জগতে নয়, একজন সুনাগরিক হিসেবেও নিজের দায়িত্ব সবসময় পালন করে গিয়েছেন তিনি। ২০১৫-১৬ কর বছরে দেশের হয়ে ‘অভিনেতা/অভিনেত্রী’ শ্রেণিতে সবচেয়ে বেশি কর দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সম্মাননা পত্র এবং ট্যাক্সকার্ডও পেয়েছেন।

তবে ক্যারিয়ারের শেষ দিকে এসে ব্যক্তিগত জীবনটাকে কিছুটা বিতর্কিত করে ফেলেছিলেন। দীর্ঘদিনের সহযাত্রী হুমায়ুন ফরিদীকে ডিভোর্স দেন ২০০৮ সালে। পরবর্তীতে তিনি বিয়ে করেন বদরুল আনাম সৌদকে।

ইচ্ছে আছে কোনো একসময় চলচ্চিত্র পরিচালনায় আসার। যদি ইচ্ছেটা পূরণ হয় এবং ব্যক্তি সুবর্ণা মুস্তাফার মতো সেই চলচ্চিত্রটিও কালজয়ী হয়, তাহলে দর্শকদের জন্যেও মঙ্গল।

সুবর্ণা মুস্তাফা ১৯৫৯ সালের আজকের দিনে (২ ডিসেম্বর) ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন।

লেখক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

Leave A Reply

Your email address will not be published.