বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তি উৎসব উদ্বোধন ৮ ডিসেম্বর
প্রতিবেদক: ‘চলো দুর্জয় প্রাণের আনন্দে’ শ্লোগানে বুধবার (৮ ডিসেম্বর) বেলা ৩টায় টাউন হল ময়দানে বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তি উৎসব উদ্বোধন হবে। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসব উদ্বোধন করবেন। বিজয়ের ৫০ উপলক্ষে ৫০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা জাতীয় সংগীতের সাথে ৫০টি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবেন। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের উজ্জীবনী সংগীত ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শেষ গান ‘বিজয় নিশান উড়ছে ঐ’ পরিবেশন করবেন ৫০ শিল্পী।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে বিজয়ের ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে যশোর জেলা ও উপজেলায় ২১ দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করা হয়। যশোর মুক্ত দিবসে এর উৎসবের সূচনা হবার কথা ছিল। কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে দুদিন পিছিয়ে দেয়া হয়। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেই ৫ ডিসেম্বর ৫০ জন চিত্রশিল্পী পৌরপার্কে আয়োজিত আর্ট ক্যাম্পে অংশ নিয়ে ‘মুক্তিযুদ্ধে যশোর রোড’ শিরোনামে ছবি আঁকেন। আর্ট ক্যাম্পের ছবিসমূহ নিয়ে যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরিতে চিত্র প্রদর্শনীও আজ উদ্বোধন করা হবে। প্রদর্শনীর ছবিসমূহ বিক্রি করা হবে।
১২ ডিসেম্বর জেলা সদরের সপ্তাব্যাপি উৎসব আয়োজন শেষ হবে। এদিন সংস্কৃতি সমাবেশে যোগ দেবেন সংস্কৃতিজন লিয়াকত আলী লাকী ও নাট্যজন রুহুল কুদ্দুস।বিজয়ের ৫০ বছর উদযাপন আমাদের জীবনে এক অনন্য প্রাপ্তি। এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা, বর্তমান ও আগামী প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শানিত করা, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন সর্বোপরি বিজয়ের ৫০ বছরকে স্মরণীয় করে রাখতে এ উৎসব মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে বলে নেতৃবৃন্দ জানান।
বিজয়ের ২০ বছর উদযাপনের ৩০ বছর পর এই প্রথম যশোরে এত বড় সম্মিলিত উৎসব হতে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, সাম্প্রতিককালের সেরা উৎসবেও পরিণত হতে যাচ্ছে এটি। কারণ উৎসবে শুধু যশোর শহরেরই নয়, বরং ৭টি উপজেলার সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনা, লোকজ গান, বাউল গানের আয়োজন রয়েছে। বিজয়ের ৫০ বছরকে স্মরণীয় করে রাখতে তথ্যসমৃদ্ধ একটি অনবদ্য স্মরণিকাও প্রকাশ করা হবে।
উৎসবের নির্ধারিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে : ৮ ডিসেম্বর বুধবার পৌনে ৪টা থেকে শিশু শিল্পীদের অনুষ্ঠানে যশোর শিল্পী গোষ্ঠী, শিশু একাডেমি, উৎকর্ষ ১০ মিনিট করে, শিল্পকলা একাডেমির নৃত্য ১০ মিনিট, সুরনিকেতন, সুরবিতান, স্বরলিপি, সপ্তসুর ১০ মিনিট মিনিট পরিবেশন করবে। বিকাল সোয়া ৫টা থেকে বড়দের অনুষ্ঠানে সুরধুনী ৩০ মিনিট, শীলা রানী দাস, কাজী শাহেদ আহমেদ ও আব্দুল আফ্ফান ভিক্টর আবৃত্তি পরিবেশন করবেন। স্বরলিপি ও কিংশুক ২০ মিনিট করে, স্বরগম ১০ মিনিট, আশাবরী ৫ মিনিট, নন্দন ১৫ মিনিট, অগ্নিবীনা ১০ মিনিট, শার্শা ও ঝিকরগাছা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ৩০ মিনিট করে অনুষ্ঠান পরিবেশন করবে। থাকবে উদীচী যশোর ও যশোর শিল্পী গোষ্ঠীর নাটক এবং সদর উপজেলার একঘণ্টার লোক সংগীত। এদিন বেলা পৌনে ৪টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত আফরোজা নাসরিন নিলিমা এবং সাড়ে ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত শর্মিষ্ঠা ভট্টাচার্য্য অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করবেন।
৯ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বিকাল পৌনে ৪টা থেকে শিশু শিল্পীদের অনুষ্ঠানে শেকড়, চাঁদের হাট ও সুরধুনী ১৫ মিনিট করে, সন্ধ্যায় বড়দের অনুষ্ঠানে উদীচী ৩০ মিনিট, বিবর্তন ৭ মিনিট আবৃত্তি, মাইকেল সংগীত একাডেমি ও ভৈরব ১৫ মিনিট করে, সৃষ্টিশীল ও অগ্নিবীনা ১০ মিনিট করে, তির্যক ২০ মিনিট ও চৌগাছা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ৩০ মিনিট অনুষ্ঠান পরিবেশন করবে। ডায়মন্ড ক্লাব ও শিল্পী সৃষ্টি পরিবেশন করবে নাটক। থাকবে সদর উপজেলার দেড়ঘণ্টার বাউল গান। এদিন বেলা পৌনে ৪টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত রুহিনা শারমিন এলিস এবং সাড়ে ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত শুভঙ্কর গুপ্ত অনুষ্ঠান উপস্থাপন করবেন।
১০ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকাল সোয়া ৩টা থেকে কবিকন্ঠে কবিতা থাকবে একঘণ্টার। বিকাল সোয়া ৪টা থেকে শিশু শিল্পীদের অনুষ্ঠানে নৃত্য বিতান ও উদীচী ১৫ মিনিট করে, বিবর্তনের ১০ মিনিটের আবৃত্তি রয়েছে। বিকাল সোয়া ৫টা থেকে বড়দের অনুষ্ঠানে পুনশ্চ ৩০ মিনিট, সুরনিকেতন ১০ মিনিট, শেকড় ২০ মিনিট, চাঁদের হাট ও কেশবপুর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ৩০ মিনিট করে অনুষ্ঠান পরিবেশন করবে। এদিন থাকবে বিবর্তন যশোরের নাটক এবং সদর ও কেশবপুর উপজেলার একঘণ্টা করে লোক সংগীত। এদিন বিকাল সোয়া ৩টা থেকে সোয়া ৪টা পর্যন্ত শাহরিয়ার সোহেল, সোয়া ৪টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত শাহরিন সুলতানা নিশি এবং সাড়ে ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত শীলা রানী দাস অনুষ্ঠান উপস্থাপন করবেন।
১১ ডিসেম্বর শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় অনুষ্ঠিত হবে সংস্কৃতি সমাবেশ। এতে আলোচক থাকবেন সংস্কৃতিজন লিয়াকত আলী লাকী ও নাট্যজন গোলাম কুদ্দুস। উৎসব পর্ষদের চেয়ারম্যান হাবিবা শেফার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেবেন সানোয়ার আলম খান দুলু। বিকাল ৫টা থেকে সমবেত সংগীত অনুষ্ঠানে সুরধুনী, উদীচী, সুরবিতান ও পুনশ্চের শিল্পীরা ২টা করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান পরিবেশন করবেন। একক আবৃত্তি করবেন কামরুল হাসান রিপন, শ্রাবনী সুর, সাধন বিশ^াস ও জাহিদুল ইসলাম যাদু। একটা করে সমবেত নৃত্য পরিবেশন করবে শেকড়, উদীচী ও নৃত্য বিতান। অভয়নগর জোটের পরিবেশনা থাকবে ৩০ মিনিট। ঢাকাস্থ যশোরের শিল্পীরা পরিবেশন করবেন একঘণ্টার অনুষ্ঠান। যশোর ইনসটিটিউট নাটক এবং অভয়নগরের বাউল গান থাকবে একঘণ্টার। এদিন বিকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কাজী শাহেদ নেওয়াজ, ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত আমেনা খাতুন ও আব্দুর নুর অনুষ্ঠান উপস্থাপন করবেন।
১২ ডিসেম্বর রবিবার বিকাল পৌনে ৪টা থেকে ৫.১০ মিনিট শিশু শিল্পীদের পরিবেশনা থাকবে। এর মধ্যে ভৈরব, স্পন্দন ও তির্যক ১০ মিনিট করে এবং পুনশ্চ ১৫ মিনিট পরিবেশন করবে। থাকবে পুনশ্চের শিশু বিভাগের নাটক। বিকাল সোয়া ৫টা থেকে বড়দের অনুষ্ঠানে সুরবিতান ৩০ মিনিট, স্পন্দন ও উৎকর্ষ ১৫ মিনিট করে, নৃত্যবিতান ৩০ মিনিট, মণিরামপুর জোট ৩০ মিনিট, বাঘারপাড়া ৩৫ মিনিট অনুষ্ঠান পরিবেশন করবে। থাকবে তির্যক যশোরের নাটক। এছাড়া এদিন মণিরামপুরের ২ ঘণ্টার কবিগান পরিবেশিত হবে। এদিন বেলা পৌনে ৪টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত শ্রেষ্ঠা ও শিমু বিশ্বাস এবং সাড়ে ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত কামরুল হাসান রিপন অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করবেন।
বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তি উৎসব উদযাপন পর্ষদের চেয়ারম্যান হাবিবা শেফা ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সম্পাদক ও উৎসব পর্ষদ সদস্য সচিব ও জোট সম্পাদক সানোয়ার আলম খান উৎসব সফল করার জন্য যশোরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।