৫০ বছরেও সংরক্ষণ হয়নি মেহেরপুরের অনেক বধ্যভূমি
দিলরুবা খাতুন, মেহেরপুর: চিহ্নিত করা হলেও স্বাধীনতার ৫০ বছরেও সংরক্ষনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি মেহেরপুর জেলার অধিকাংশ বধ্যভূমি। বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে কিছু বধ্যভূমি পরিচর্যা করা হলেও অধিকাংশ বধ্যভূমি চেনার উপায় নেই। এতে তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা ও হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের টর্চার সেল সর্ম্পকে জানতে পারছে না।
মেহেরপুরের বধ্যভূমিগুলোর কোনোটিতে ইটের পর ইট গেঁথে সেখানে গড়ে উঠেছে আবাসিক এলাকা। কোনোটি সরকারি অফিস, আবার কোনোটি খনন করে পুকুর তৈরি করা হয়েছে। সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি স্বাধীনতার ৫০ বছরেও। পাকবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর বাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার শত শত নারী-পুরুষের নির্যাতনের স্মৃতিবিজড়িত ৭টি বধ্যভূমি স্বাধীনতার পর চিহ্নিত করা হলেও দেখভাল নেই। বধ্যভূমিগুলোতে সেই ভয়ঙ্কর দিনের চিহ্নের লেশমাত্র নেই। স্মৃতি হাতরে কেউ কেউ হয়তো এখনও কিছু বলতে পারেন। কিছুদিন পর তেমন লোকও আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। এখনও যদি সংরক্ষণের ব্যবস্থা না নেয়া হয়, তাহলে একদিন হয়তো সবকিছু হারিয়ে যাবে কালের গর্ভে। পরবর্তী প্রজন্ম আর খুঁজে পাবে না তাদের জাতির ইতিহাস আর ঐতিহ্যের বীরত্বগাথা। হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী মেহেরপুর সরকারি কলেজের পেছনে ইমান আলীর আমের বাগান বধ্যভূমি এখন ঘনবসতিপূর্ণ। একাত্তরে সরকারি কলেজ ক্যাম্প ছিল নির্যাতন, অত্যাচার ও গণহত্যার অন্যতম কসাইখানা। বাসস্ট্যান্ড বধ্যভূমি এখন পশুসম্পদ বিভাগের অফিস, ওয়াপদা বধ্যভূমি ঢাকা পড়ে গেছে বিভিন্ন ভবন নির্মাণের ফলে।
গাংনীর জোড়পুকুিরয়া বধ্যভূমিতে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ‘ডেডলাইন ৭১’ নামে একটি সাইনবোর্ড টানানো হয়েছিল। সেটিও বিলীন হয়ে গেছে। গাংনী উপজেলার জোড়পুকুরিয়া গ্রামের মানুষের দাবি, জোড়পুকুরিয়া বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের। গাংনীর ভাটপাড়া কুঠিবাড়ি বধ্যভূমিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষে গড়ে তোলা হচ্ছে ডিসি ইকোপার্ক। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে জেলা প্রশাসনের কার্যালয় সংলগ্ন বধ্যভূমির কাছে অন্যান্য বধ্যভূমি থেকে হাড়গোড় আর মাথার খুলি একত্র করে গণকবর দেয়া হয়।
মুক্তিযুদ্ধে পাকহানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের কালের সাক্ষী এসব বধ্যভূমি। সরেজমিন এসব বধ্যভূমি ঘুরে দেখা গেছে, স্বাধীনতার পর দীর্ঘ সময়ে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকা বধ্যভূমিগুলোকে জেলা প্রশাসন, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটসহ কেউই ‘বধ্যভূমি’ হিসেবে নামফলকও টানাতে পারেনি।
বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ করে সেগুলো নাম ফলকের মাধ্যমে স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস আগামী প্রজন্মকে জানার সুযোগ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান গাংনী উপজেলা সমবায় অফিসার মাহবুব মন্টু জানান, মেহেরপুর সরকারি কলেজের পিছনে ইমান আলীর আম বাগান জেলার সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি। এখন সেই বধ্যভূমিটি চেনার উপায় নেই। এখনো মেহেরপুরের অনেক স্থানে এমন অনেক বধ্যভূমি আছে যেগুলো চিহ্নিত করে নামফলক করে দেওয়া হয়নি। তবে গাংনী উপজেলার সাহারবাটি ইউনিয়নের সাহারবাটি টেঁপুুখালির মাঠ গণকবরে ৭০ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ব্যয়ে দুটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। অন্যগুলো চরম অবহেলায়।
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান জানিয়েছেন, গণকবরগুলো চিহ্নিত করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিষয়টি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়কে অবহিত করা হয়েছে। মুজিবনগর খ্যাত মেহেরপুরের গণকবরগুলো অল্পদিনেই চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী।
-ডিকে/ আইআর