Take a fresh look at your lifestyle.

জন্মদিনে স্মরণঃ সাইদা খানম

0

বাবলু ভট্টাচার্য: ফটোগ্রাফি একটি শিল্প। যে কোনো শিল্পকে আবেদনশীল করে তুলতে হলে, সেই শিল্পের সঙ্গে একাত্ম হতে হবে। তার জন্য করতে হবে সুস্থ ও মহৎ চিন্তা। এ চিন্তার গুণে গুণবান ও মহীয়ান হয়ে শিল্প যেন দর্শকের মনে প্রেম সৃষ্টি করতে পারে। সাইদা খানম তাই করেছেন। যেখানেই সুযোগ পেয়েছেন সেখানেই প্রদর্শনী দেখেছেন। মুগ্ধ হয়েছেন। উপলব্ধি করেছেন।
প্রচারবিমুখ হওয়ায় তাঁর পরিচিতি তুলনামূলক কম, তবুও আলোকচিত্রী সাইদা খানমকে দৃষ্টিসীমার বাইরে রাখা যায়নি। তিনিই দেশের প্রথম মহিলা আলোকচিত্র শিল্পী যিনি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন।
সাইদা খানম ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ পাশ করেন। এরপর ১৯৭২ সালে লাইব্রেরি সায়েন্সে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
সাইদা খানম-এর শৈশব কেটেছে ইছামতির তীরে পাবনার মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে। পাবনার বাড়িতে জানালার পাশে শুয়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে ভাবতেন, সব দৃশ্য কি চিরকালের জন্য ধরে রাখা যায় না? এ রকম ভাবনা তাকে ক্যামেরায় ছবি তোলার বিষয়ে আগ্রহী করে তোলে।
সাইদা খানম ছবি তোলা শুরু করেন ১৯৪৯ সাল থেকে। তখন তাঁর বয়স ১২ বছর।
সাইদা খানম ১৯৫৬ সাল থেকে আলোকচিত্র সাংবাদিক হিসেবে ‘বেগম’ পত্রিকার আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ শুরু করেন। প্রেস ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। দুটো জাপানি পত্রিকাসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তার তোলা আলোকচিত্র মুদ্রিত হয়েছে। ১৯৫৬ সালে তিনি প্রথম আন্তর্জাতিক আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন। এরপর জাপান, ফ্রান্স, সুইডেন, পাকিস্তান, সাইপ্রাস প্রভৃতি দেশের আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে তাঁর ছবি প্রদর্শিত হয়।
ঢাকায় তিনি কয়েকবার একক ও দলীয় প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৩ সালে কলকাতায় অল ইন্ডিয়া ফটো জার্নালিজম কনফারেন্সে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেন। এরপর বিভিন্ন বছরে দিল্লি, কলকাতা, নিউ ইয়র্কে সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৮২ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ এশিয়ান গেমস-এ তিনি বেগম পত্রিকার প্রতিনিধিত্ব করেন। এছাড়া সাফ গেমসের ছবি তোলেন।
সত্যজিৎ রায়ের ওপর তোলা ছবি নিয়ে তিনবার একক প্রদর্শনী করেন। তিনি নিজের তোলা মাদার তেরেসার ছবির প্রদর্শনী করার আয়োজন করেছেন। ২০০০ সালে দৃক লাইব্রেরিতে ‘শান্তিনিকেতন ও কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়’ শীর্ষক একটি প্রদর্শনী করেন।
২০০১ সালে কলকাতার নন্দনে সত্যজিৎ রায়ের উপরে প্রদর্শনী করেন।
সাইদা খানম ১৯৫৬ সালে জার্মানিতে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড কোলন লাভ করেন। ১৯৬০ সালে ‘অল পাকিস্তান ফটো প্রতিযোগিতা’য় প্রথম স্থান লাভ করেন। ১৯৮০ সালে সাইপ্রাসে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ ফটো প্রতিযোগিতায় সার্টিফিকেট লাভ করেন। জাপানে ইউনেসকো অ্যাওয়ার্ড, অনন্যা শীর্ষ দশ পুরস্কার, বেগম পত্রিকার ৫০ বছর পূর্তি পুরস্কার, বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সম্মানসূচক ফেলোসহ বিভিন্ন পুরস্কার ও স্বীকৃতি পান তিনি।
আলোকচিত্রে অনন্য অবদানের জন্য সরকার ২০১৯ সালে শিল্পকলা শাখায় সাইদা খানমকে একুশে পদকে ভূষিত করে।
সাইদা খানমের ছবির সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার। দেশ-বিদেশের রাজনীতিবিদ, শিল্প ও সাহিত্য সংস্কৃতি অঙ্গনের বহু বরেণ্য, স্বনামধন্য ব্যক্তিত্বের ছবি তুলেছেন তিনি। এদের ছবি তুলেই শুধু ধন্য হননি; ধন্য হয়েছেন তাদের সান্নিধ্য লাভে।
সাইদা খানমের ক্যামেরায় যারা ধরা পড়েছেনঃ কবি কাজী নজরুল ইসলাম, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, ইন্দিরা গান্ধী, রাণী এলিজাবেথ, মাদার তোরেসা, মার্শাল টিটো, শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, বেগম সুফিয়া কামাল, মওলানা ভাসানী, মৈত্রেয়ী দেবী, মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা, আশাপূর্ণা দেবী, উত্তমকুমার, অড্রে হেপবার্ন, সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখার্জি, প্রমুখ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া চাঁদের দেশে প্রথম যারা নেমেছিলেন সেই নীল আর্মস্ট্রং, এ্যাড্রিন অলড্রিনস, মাইকেল কলিন্স-এরও ছবি তুলেছেন সাইদা খানম।
শুধু আলোকচিত্রী নয়, তিনি বাংলাদেশ লেখিকা সংঘের সাধারণ সম্পাদিকাও। তার অনেক লেখা ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ফিচার, সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। সে সব গল্পের সংকলন ‘ধুলোমুঠি’ প্রকাশিত হয়। ২০০৪ সালে প্রকাশিত হয় ছবির গ্রন্থ আমার ‘চোখে সত্যজিৎ রায়’। ২০২০ সালের ১৮ আগস্ট সাইদা খানম ৮৩ বছর বয়সে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
সাঈদা খানম ১৯৩৭ সালের আজকের দিনে (২৯ ডিসেম্বর) পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন।

-লেখক: সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

Leave A Reply

Your email address will not be published.