Take a fresh look at your lifestyle.

বিদায় ২০২১ঃ স্বাগত ২০২২

0

বাবলু ভট্টাচার্য :

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নববর্ষ নিয়ে এক ভাষণে বলেছিলেন, ‘মানুষের নববর্ষ আরামের নববর্ষ নয়; সে এমন শান্তির নববর্ষ নয়; পাখির গান তার গান নয়, অরুণের আলো তার আলো নয়। তার নববর্ষ সংগ্রাম করে আপন অধিকার লাভ করে; আবরণের আবরণকে ছিন্ন বিদীর্ণ করে তবে তার অভ্যুদয় ঘটে।’
২০২১ সালটা শুরু হয়েছিল সারা বিশ্বকে থমকে দেয়া সার্স কোভিড-১৯ ভাইরাসজনিত অতিমারীর দ্বিতীয় ঢেউকে সঙ্গে নিয়ে৷ আগের বছরের ধাক্কা সামলে নিয়ে আমরা তখন কেবল ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছি৷
সারা বিশ্বের অন্য অনেক দেশের মতোই আমাদেরও আশাবাদী করে তুলেছে অভূতপূর্ব দ্রুততার সঙ্গে উদ্ভাবিত করোনার টিকা৷ বছর ঘোরার আগেই সব প্রক্রিয়া শেষ করে একটি-দুটি নয়, অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের তৈরি করা টিকা তখন বাজারে আর অন্য অনেক দেশের আগে বাংলাদেশে বেশ গোছানো একটি প্রক্রিয়ায় তা প্রয়োগের ব্যবস্থাও বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে৷
কোভিড অতিমারিকে পেছনে ফেলে এবার এগিয়ে যাওয়ার সময় এলো, তখন এমনটাই মনে হচ্ছিল৷ কিন্তু বছরের শুরুতেই এই ভাইরাসের এক নতুন রূপ এসেছিল নতুন ধাক্কা হয়ে; সবকিছু স্বাভাবিক পথে ফেরানোর চিন্তা শিকেয় তুলে রেখে বাংলাদেশকে দ্বিতীয়বারের মতো হাঁটতে হয়েছিল লকডাউনের পথে৷
তারপর অবশ্য ঠিকই ঘুরে দাঁড়ানোর সময়টা এসেছে, বিশেষ করে অক্টোবরে এসে প্রায় দেড় বছর পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়া, সীমিত পরিসরে হলেও এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা গ্রহণ আমাদের আশার আলো দেখিয়েছে৷
কিন্তু ২০২২ যখন কড়া নাড়ছে দরজায়, তখন আবার কোভিডের নতুন এক রূপ চোখ রাঙাচ্ছে আমাদের৷ উন্নত বিশ্বের কোনো কোনো দেশকে বেশ নাড়া দিয়ে ওমিক্রন ঢুকে পড়েছে বাংলাদেশেও, যদিও এখন পর্যন্ত খুব ভয়ঙ্কর কিছু হয়ে ওঠেনি সেটা৷
২০২১ সাল বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর। এ বছরই আমাদের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ পেরুনোর কাল। ২০২০ সালে মৌল ও উগ্রবাদী শক্তির আস্ফালন দেখেছে জাতি। দেশকে যারা পেছনে নিয়ে যেতে চায় তাদের মাথা মুড়িয়ে দেয়ার অপেক্ষায় রয়েছে দেশ।
দেশে বর্তমানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। আপামর জনসাধারণ চায় স্থিতিশীল পরিবেশটি বজায় থাকবে। এর মধ্যেই গণতন্ত্রের চর্চা আরও বৃদ্ধি পাবে।
গেল বছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য অনেকে বেড়েছে। যথেষ্ট উৎপাদন ও সরবরাহ স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও চাল, পেঁয়াজ, আলুতে নাভিশ্বাস উঠেছে দেশের মানুষের। দেশের সর্বস্তরের মানুষ প্রত্যাশা করেন তারা দুবেলা-দুমুঠো খেয়ে সুখে-শান্তিতে জীবন কাটাবেন। তার জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য হাতের নাগালেই প্রত্যাশা করেন তারা।
পাশাপাশি যেসব কালোবাজারি, চক্র কারসাজি করে এসব দ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয় তাদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি রাখেন।
বাংলাদেশ আজ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে। পদ্মা সেতু দৃশ্যমান, মেট্রোরেল নির্মাণাধীন। নতুন বছরে এসব কাজ আরও দৃশ্যমান হবে, চলাচলের উপযোগী হয়ে উঠবে- এটি সবার প্রত্যাশা। শিল্পায়নের জন্য আরও বিনিয়োগবান্ধব অবকাঠামো উন্নয়ন জরুরি। শিল্প ও উৎপাদন খাতের বিকাশের জন্য নানা ধরনের উদ্যোগের তাগিদ রয়েছে নানা মহল থেকে। দেশের প্রতিটি মানুষই মনে করেন রোহিঙ্গারা এ দেশের জন্য ‘বিষফোঁড়া’। তাদের মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার অগ্রগতির বিষয়েও নজর থাকবে সবার।
শিক্ষার উদ্দেশ্য মানুষকে মানবিক করে গড়ে তোলা৷ ২০২১ সালের বাংলাদেশে এই জায়গাতেও যথেষ্ট ঘাটতি চোখে পড়েছে; পূজোর মণ্ডপে ভাঙচুর, জেলে-পাড়ায় আগুন দেয়ার মতো অমানবিক ঘটনা ঘটতে দেখেছি, দেখেছি কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতায় লঞ্চডুবি বা লঞ্চে-কারখানায় আগুন লেগে মানুষের নির্মম মৃত্যুর ঘটনা৷
আশা করি ২০২২ সালে আমরা এমন মানবিক ও দায়িত্ববান হয়ে ওঠার সুযোগ পাবো, যে এই সব অমানবিক ঘটনার কোনো জায়গা থাকবে না আমাদের চোখের সামনে৷

Leave A Reply

Your email address will not be published.