Take a fresh look at your lifestyle.

গুরুমা’র নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন তৃতীয় লিঙ্গের ১১জন

0

প্রতিনিধি, মেহেরপুর:
গুরুমাদের নির্যাতনে অতিষ্ঠ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। গুরুমা প্রথা দাতিলের দাবিতে সোমবার মেহেরপুর জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে তৃতীয় লিঙ্গর ১১জন। সংবাদ সম্মেলনে তারা গুরুমাদের নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন।
মেহেরপুরের বাসিন্দা তৃতীয় লিঙ্গের লিপি, সুমি রেখা, সিমরান, সোহাগী, সন্ধ্যা, সুরভি, নুপুর, রহিমা, পিংকি ও রুবিনা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
তৃতীয় লিঙ্গের রহিমা খাতুন অভিযোগ করেন, তিনি পুরুষ হয়ে জন্ম নিলেও তার আচরণ ছিলো মেয়েলি। ছিলেন চোরাচালানী। কুড়ি বছর আগে দিনাজপুরের হিজড়া সীমা খাতুন মেহেরপুরে এসে স্বঘোষিত গুরু সেজে বসে। সেই তাকে গাড়ি বাড়ি করে দেবার নামে তার লিঙ্গ পরিবর্তন করে হিজড়াতে রূপান্তর করে। প্রথম কয়েক মাস তাকে বিভিন্ন গ্রাম থেকে উপার্জিত টাকার অর্ধেক দিতো। এখন উপার্জনের শতকরা কুড়ি টাকা দেয়। যা দিয়ে জীবন বাঁচানো দায়। তিনি স্বীকার করেন গুরুমার নির্দেশে তারা ছেলে নাচাতে গিয়ে খিস্তি খেওড় কিম্বা নির্যাতন করে টাকা আদায় করেন। স্বঘোষিত গুরুপ্রথা না থাকলে তাদের জোর করে টাকা আদায় করা লাগে না।
রহিমার অভিযোগ তাদের কথিত গুরুমা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে গুণ্ডা পোষে। কোন হিজড়া সীমার অত্যাচারের প্রতিবাদ করলে ওই গুণ্ডা বাহিনী দিয়ে তাকে তুলে নিয়ে যায় মাইক্রো করে। সেখানে তাদের চরম নির্যাতন করা হয়। তাদের অনেকই সেই নির্যাতন সইতে না পেরে সীমার দাবি মেনে নেয় জীবন বাঁচাতে। তাদের দুটি পরিবারের কাছে মুক্তিপণও আদায় করে।
তৃতিয় লিঙ্গের রুবিনা অভিযোগ করে বলেন, আমরা ১১জন হিজড়া প্রতিদিন গ্রাম গ্রাম ঘুরে শিশু নাচিয়ে গড়ে কুড়ি হাজার টাকা নিয়ে আসি। গুরুমা সীমা ১৫ হাজার টাকা কেড়ে নিয়ে আমাদের ৫ হাজার টাকা দেয়। এই টাকায় বাড়ির ভাড়া, ১১ জনের খাবার, বিদ্যুৎ বিল, বিনোদন হয়না। অনেক সময় তাদের এক বেলা উপোস থাকতে হয়। প্রতিবাদ করলে তাদের শারিরীক নির্যাতন করা হয়। গরম খুন্তির ছ্যাকা দেয়া হয়। কখনো কখনো তাদের অপহরণ করে নিয়ে যায় অজ্ঞাত স্থানে। সেখানে চরম শারিরীক নির্যাতন করা হয়। ধারালো অস্ত্রে তাকে জখম করা হয়। ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে বলেও জানান।
লিঙ্গ পরিবর্তন করে হিজড়া বানানো নুপুর বলেন- গাড়ি বাড়ি করে দেবার নামে আমার লিঙ্গ পরিবর্তন করে হিজড়া বানানো হয়। স্বঘোষিত গুরু সীমা খাতুন ১০টি গ্রাম আমার কাছে বিক্রি করে ২ লাখ টাকার বিনিময়ে। এখন আমাকে সে সব গ্রামে ছেলে নাচাতে দেয়া হয় না। তারমতো সন্ধ্যা, সুরভি, সুমির কাছেও ১০টি করে গ্রাম বিক্রি করে কথিত গুরুমা। এখন তাদের সেসব গ্রামে যেতে দেয়া হয় না।
রেখা নামের তৃতীয় লিঙ্গের অভিযোগ কথিত গুরুমা তাদের টাকায় গাড়ি বাড়ি করছেন। কিন্তু তাদের থাকতে হচ্ছে ভাড়া বাড়িতে। গুরু মাছ মাংস দিয়ে খাবার খেলেও তাদের দেয়া হয় অল্প দামের মাছ দিয়ে। গুরুমার পালিত মেয়ে শিল্পীর এবং তার পরিবারের কাছে দিনাজপুরে প্রতিদিন তাদের উপার্জিত অর্থ বিকাশ করে পাঠিয়ে দেয়।
তৃতীয় লিঙ্গের এসব মানুষের দাবি স্থানীয় প্রশাসন তাদের গ্রাম ভাগ করে দিক। যাতে তারা ওই সব গ্রামের শিশুদের নাচিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন। নইলে তাদের মধ্যে কেউ অপহৃত কিম্বা কথিত গুরুমার ভাড়াটে দুর্বৃত্তদের হামলায় প্রাণ হারাতেও পারেন।
-ডিকে/দিলরুবা/আইআর

Leave A Reply

Your email address will not be published.