বাবলু ভট্টাচার্য :
তিনি একাধারে অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজক। তিনি হলিউডের অত্যন্ত মেধাবী এবং চৌকষ চলচ্চিত্র শিল্পী। তিনি মেল গিবসন।
মেল গিবসনের পুরো নাম মেল কালামসিলে জেরার্ড গিবসন। গিবসনের মা অ্যানি রেইলি গিবসন একজন আইরিশ। পঞ্চম শতকের আইরিশ সাধু ‘সেন্ট মেল’-এর নামানুসারে গিবসনের আগে ‘মেল’ জুড়ে দেন তার মা। বাবা হাটন গিবসন ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে ১৯৬৮ সালে হাটন অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে পাড়ি জমান। সে সময় মেল গিবসনের বয়স মাত্র ১২। সেখানেই তার বেড়ে উঠা।
পড়াশোনা করেন মিশনারী স্কুলে। স্কুলেই অভিনয়ের হাতেখড়ি। পরিবার থেকেও অভিনয়ের কিছুটা অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। কারণ গিবসনের এক ভাই অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত ছিল। পরবর্তীতে গিবসন ভর্তি হন সিডনির ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ড্রামাটিক আর্ট-এ। প্রতিষ্ঠানটিতে ছিল ব্রিটিশ থিয়েটারের ঐতিহ্য। সেখানেই শেক্সপিয়ারের বিখ্যাত নাটক ‘রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েটে’ অভিনয় করেন। বলা হয়, ১৯৯০ সালে গিবসনের নির্মিত ছবি ‘হেমলেট’ এর অনুপ্রেরণা এই থিয়েটারে কাজের সুবাদে পান। ১৯৭৭ সালে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অভ ড্রামাটিক আর্ট থেকে পড়াশোনা সম্পন্ন করেন গিবসন।
গিবসন ছিলেন থিয়েটার, সাহিত্য ও ইতিহাসের প্রতি তীব্র অনুরাগী। সেই সুত্রেই একের পর এক জড়িয়ে যান ‘হেমলেট’, ‘ব্রেভহার্ট’, ‘দ্য প্যাশন অব দ্য ক্রাইস্ট’, ‘অ্যাপোকালিপটো’, ‘উই ওয়ার্স সোলজার্স’-এর মত কালোত্তীর্ণ সব সিনেমার সঙ্গে।
মেল গিবসন ‘ম্যাড ম্যাক্স’ সিরিজের মাধ্যমে পরিচিতি লাভ করলেও তাঁকে বিশ্বজোড়া খ্যাতি এনে দেয় ‘ব্রেভহার্ট’। নিখাদ ব্রিটিশ বিরোধী এই ছবিতে আইরিশ ও স্কটিশদের উপর ব্রিটিশদের অমানবিক শাসনের চিত্র ফুটে উঠেছে। হয়তো ব্রিটিশদের অত্যাচারের গল্প তাঁর আইরিশ মায়ের কাছ থেকেই পাওয়া। এছাড়া উপমহাদেশেও ব্রেভহার্ট ছবির মাধ্যমে পরিচিতি পান গিবসন। ১৯৯৫ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিটি উপমহাদেশে ব্যপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
ষোড়শ শতকের শুরুর দিকে মায়া সভ্যতাকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয় ‘অ্যাপোকালিপটো’। গিবসন অ্যাপোকালিপটো শব্দের অর্থ করেছেন “ধংসের পর নতুন যুগের শুরু।” ছবিতে অভিনয় করেছিলেন স্থানীয় আদিবাসীরা তাঁদের ভাষায়। ছবির সংলাপ লিখেছিলেন ইরানি চিত্রনাট্যকার ফরহাদ সাফিনিয়া ও গিবসন নিজে। তারপর সে সংলাপ মায়া ভাষায় অনুবাদ করা হয়। পাশাপাশি ইংরেজি সাব টাইটেলও ছিল। এই ছবিতে গিবসনের ব্যাতিক্রমি ভাবনা চিন্তা বৈশ্বিক চলচ্চিত্রে দারুণ প্রভাব ফেলে।
ক্যাথলিক ধর্মে দারুণ আস্থা গিবসনের। পোপের বক্তব্য মেনে চলার চেষ্টা করেন সব সময়। গিবসনের প্রযোজনায় ২০০৩ সালে যীশু খ্রীস্টের জীবনী নিয়ে মুক্তি পায় ‘দ্য প্যাশন অব দ্য ক্রাইস্ট’ সিনেমা। ২০০৬ সালে ইহুদী বিদ্বেষী বক্তব্যের কারণে তাঁর ক্যারিয়ারে কিছুটা ধ্বস নামে।
চলচ্চিত্রে স্বীকৃতি স্বরূপ গিবসন অ্যাকাডেমি, পিপলস চয়েস ও অস্ট্রেলিয়ান ফিল্ম ইন্সটিটিউট অ্যাওয়ার্ডসহ অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেন।
মেল গিবসন ১৯৫৬ সালের আজকের দিনে (৩ জানুয়ারি) নিউইয়র্কের পিকস্কিল শহরে জন্মগ্রহণ করেন।
লেখক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব