Take a fresh look at your lifestyle.

জন্মদিনে স্মরণ : সুচিত্রা ভট্টাচার্য

0

বাবলু ভট্টাচার্য :

লেখনীর আঁচড়ে মধ্যবিত্ত জীবন আর সম্পর্কের টানাপোড়েনের নিখুঁত ছবি ফুটিয়ে তুলতেন তিনি। তাঁর লেখায় প্রতিমুহূর্তে যেন নিজেরই মুখোমুখি হতো আটপৌরে বাঙালি। সমসাময়িক নাগরিক জীবনকে সাহিত্যে এমন সহজভাবে মেলে ধরেই আমজনতার মন কেড়েছিলেন যিনি, তিনি সুচিত্রা ভট্টাচার্য।

বাঙালির ‘কাছের মানুষ’ হয়ে ওঠা সুচিত্রা ভট্টাচার্যের ছোট থেকেই লেখালেখির ঝোঁক ছিল।

কলকাতায় যোগমায়াদেবী দেবী কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার সময়েও লেখালিখি সমানে চালিয়ে গিয়েছেন। পরবর্তীকালে বিভিন্ন ধরনের কাজে যুক্ত হয়েছেন। আর সেইসব বিচিত্র দিনের অভিজ্ঞতাই উজাড় করে দিয়েছেন ৭০ দশকে লেখা তাঁর বহু ছোটগল্পে।

৮০ দশকের মাঝামাঝি উপন্যাস লেখা শুরু করেন সুচিত্রা ভট্টাচার্য। পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যেই প্রকাশিত হয় তাঁর অনবদ্য রচনা ‘কাচের দেওয়াল’। এই উপন্যাসেই বাঙালির মন জয় করে নেন তিনি। এরপর সহজ ভাষায় লেখা একের পর এক কাহিনীতে সুচিত্রা ভট্টাচার্যের কলমে উঠে এসেছে বাঙালির একদিন প্রতিদিন। ‘ছেঁড়া তার’, ‘নীল ঘূর্ণি’, ‘জলছবি’, ‘অন্য বসন্ত’, ‘কাছের মানুষ’-এর মতো একের পর এক উপন্যাসের হাত ধরে ক্রমেই তিনি হয়ে ওঠেন আমজনতার একান্ত আপন।

১৯৯৭ সালে সুচিত্রা ভট্টাচার্যের কাহিনী অবলম্বনে ঋতুপর্ণ ঘোষের ছবি ‘দহন’ আজও বাংলা সিনেমার এক মাইলস্টোন। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। সহজ ভাষায় একেবারে জীবন থেকে নেওয়া ঘটনায় সাজানো সুচিত্রা ভট্টাচার্যের উপন্যাস বারবার চলচ্চিত্র পরিচালকদের নজর কেড়েছে। তৈরি হয়েছে ‘ইচ্ছে’র মতো মনে দাগ কাটা ছায়াছবি। ‘হেমন্তের পাখি’তে সেলুলয়েডে ধরা পড়েছে সুচিত্রার আর এক মনন। আবার তাঁরই কাহিনী অবলম্বনে তৈরি হয়েছে টলি লাইটস বা ‘অলীক সুখ’-এর মতো মনকে নাড়িয়ে দেওয়া ছায়াছবি।

তারাশঙ্কর পুরস্কার, শৈলজানন্দ স্মৃতি পুরস্কারসহ একাধিক পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন সুচিত্রা ভট্টাচার্য। ছোটদের জন্য তাঁর ভিন্ন স্বাদের লেখাও বিপুল জনপ্রিয় হয়েছে। কচিকাঁচাদের মন কেড়েছে তাঁর অনবদ্য সৃষ্টি মিতিন মাসির ধারাবাহিক কাহিনী।

সুচিত্রা ভট্টাচার্যের লেখনীর মূল বিষয়বস্তু ছিল মানবিক সম্পর্কের নানা জটিলতা এবং সূক্ষ্ম বোধের আত্মপ্রকাশ— যা সহজেই পাঠককে আক্রান্ত করতো। তিনি শুধু শহুরে জীবন নয়, গল্পের প্রয়োজনে গ্রাম্য জীবনের পটভূমির অবতারণা করেছেন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে। তাঁর লেখনীতে কখনো কখনো রাজনীতি উঠে এসেছে অন্যমাত্রায়, একটু অন্যভাবে; এর মাধ্যমেই বোঝা যায় তিনি কতটুকু রাজনীতি সচেতন ছিলেন। তবে তাঁর উপন্যাসে নারী চরিত্রগুলো মুখ্য ভূমিকা পালন করতো, এজন্য তাঁর নামের সাথে ‘নারীবাদ’ তকমা লেপ্টে দেয়া হয়েছিল, সেটা তিনি আদৌ পছন্দ করতেন না।

২০১৫ সালের ১২ মে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি লিখে গেছেন।

সুচিত্রা ভট্টাচার্য ১৯৫০ সালের আজকের দিনে (১০ জানুয়ারি) বিহারের ভাগলপুরে জন্মগ্রহণ করেন।

লেখক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

Leave A Reply

Your email address will not be published.