Take a fresh look at your lifestyle.

শুভ জন্মদিন রাহুল দ্রাবিড়

0

বাবলু ভট্টাচার্য :

স্কুলের শিক্ষক শ্রেণী কক্ষে জিজ্ঞেস করছেন ছাত্রকে, ‘বিশ্বের তিনটা বিখ্যাত দেয়ালের নাম বলো তো?’ চটপটে ছাত্রের উত্তর, ‘চীনের প্রাচীর, বার্লিন প্রাচীর আর রাহুল দ্রাবিড়।’

তার ডিফেন্সিভ ব্যাটিং এর ভঙ্গি এবং উইকেট আঁকড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বোলারদের ঘাম ঝরিয়ে শক্ত দেয়ালের মত টিকে থাকার মুগ্ধকর সামর্থ্যের জন্য তিনি ‘দ্য ওয়াল’ নামটি পেয়েছিলেন। তিনি ২০০৪ সালে আইসিসি দ্বারা বছরের সেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হন। উইজডেন তাকে সর্বকালের তৃতীয় সর্বশ্রেষ্ঠ টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে চিহ্নিত করে। টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ক্যাচ, ২১০টি (নন-উইকেটকিপার হিসেবে) ধরার রেকর্ডটি তারই দখলে। তিনিই সর্বপ্রথম ও একমাত্র ক্রিকেটার যিনি টেস্ট খেলুড়ে দশটি দেশেই সেঞ্চুরি করেছেন।

এই ক্রিকেটার ভারতের মধ্যপ্রদেশে জন্ম নিলেও পরে তার পরিবারের সাথে তিনি ব্যাঙ্গালোরের কর্ণাটকে চলে যান। সেখানেই তিনি বেড়ে উঠেন। দ্রাবিড় এর পিতা জ্যাম বানানোর এক কোম্পানিতে কাজ করতেন; এ সূত্রেই পরে তার ডাকনাম হয়- ‘জ্যামি’। তার মা পুষ্পা কর্ণাটকের এক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের আর্কিটেকচার বিষয়ের প্রোফেসর ছিলেন। দ্রাবিড় ব্যাঙ্গালোরের সেন্ট জোসেফ’স বয়েজ হাই স্কুল-এ স্কুল জীবন অতিবাহিত করেন। পরে তিনি ব্যাঙ্গালোরের সেন্ট জোসেফ’স কলেজ অফ কমার্স-এ অধ্যয়ন করে কমার্সে ডিগ্রি লাভ করেন।

দ্রাবিড় ১২ বছর বয়সে ক্রিকেট খেলা শুরু করেন। তিনি কর্ণাটকের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৫, অনূর্ধ্ব-১৭ ও অনূর্ধ্ব-১৯ লেভেলে খেলেন। ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে রঞ্জি ট্রফিতে তার অভিষেক হয়; তখন তিনি কলেজে পড়তেন। সেই ম্যাচে তিনি ৮২ রান করেন। তার প্রথম খেলা পুর্ণ মৌসুম ছিল ১৯৯১-৯২ যেখানে তিনি ২টি সেঞ্চুরি করেন ও মোট ৩৮০ রান (৬৩.৩ গড়ে) করে মৌসুম শেষ করেন।

১৯৯৬ সালের ৩ এপ্রিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচে (সিঙ্গার কাপ) তার আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়। সেই ম্যাচে তিনি ব্যাট হাতে সফল হতে পারেননি; মাত্র তিন রানে মুত্তিয়া মুরালিধারান এর বলে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেন তিনি। সেই সিরিজের পরের ম্যাচেও তিনি ব্যাট হাতে ব্যার্থ, করেন ৪ রান; প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান।

ওয়ানডে অভিষেক সুখকর না হলেও সেই তুলনায় তার টেস্ট অভিষেক সাফল্যের সাথেই হয়। ১৯৯৬ সালের ২০ জুন ক্রিকেটের মক্কা লর্ডসে ইংল্যান্ড এর বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে তার টেস্ট অভিষেক হয়। সেই ম্যাচে ৭ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে তিনি আরেক অভিষিক্ত ব্যাটসম্যান সৌরভ গাঙ্গুলির (সেই ম্যাচে তারও অভিষেক হয়) সাথে মূল্যবান এক পার্টনারশিপ করেন ও দলকে লিড এনে দেন। ৬ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ব্যাটিং করে তিনি ৯৫ রান করে আউট হলে ৫ রানের জন্য অভিষেকে সেঞ্চুরির সৌভাগ্য হাতছাড়া হয়।

এছাড়াও তিনি হলেন টেস্ট ক্রিকেটে তৃতীয় সর্বোচ্চ রানকারী ব্যাটসম্যান। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বল খেলা ও সবচেয়ে বেশি সময় খেলার (ব্যাটিং এর সময়) রেকর্ডটি তার। তিনি তার টেস্ট ক্যারিয়ারে মোট ৩১,২৫৮টি বল খেলেছেন- যা কিনা ওয়ার্ল্ড রেকর্ড, এমনকি অন্য কোনো ব্যাটসম্যানই ৩০০০০ বলও খেলেনি। তিনি ব্যাটিং এর সময় ক্রিজের অপর প্রান্তে দাড়িয়ে থেকে মোট ৪৫৩টি উইকেট পরতে দেখেছেন- যা কিনা কোনো ব্যাটসম্যানের টেস্ট ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ। সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির পার্টনারশিপ ও সবচেয়ে বেশি হাফ সেঞ্চুরির পার্টনারশিপ এর রেকর্ডও তার দখলে- যথাক্রমে ৮৮টি ও ১২৬টি; আরেকটি ওয়ার্ল্ড রেকর্ড।

দ্রাবিড় তার এই দীর্ঘ ১৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানেন ২০১২ সালের ২৪ জানুয়ারী, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ খেলে। এর প্রায় তিন মাস আগেই তিনি ওয়ানডে ম্যাচ থেকে অবসর নেন। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানার পরেও তিনি ঘরোয়া পর্যায়ে (IPL ও CL-T20) খেলে গেছেন। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় চ্যাম্পিয়ন্স লীগ টি-২০ এ তার নেতৃত্বে রাজস্থান রয়্যালস রানার্স-আপ হয়। ২০১৩ সালের ৬ অক্টোবর চ্যাম্পিয়ন্স লীগ টি-২০ এর ফাইনাল ম্যাচটি খেলে তিনি তার পুরো বর্ণাঢ্য ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘটান।

রাহুল দ্রাবিড় ১৯৭৩ সালের আজকের দিনে (১১ জানুয়ারি) মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে জন্মগ্রহণ করেন।

লেখক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

Leave A Reply

Your email address will not be published.