সরিষা ফুলে ছেয়ে আছে মেহেরপুরের মাঠ
দিলরুবা খাতুন, মেহেরপুর প্রতিনিধি
মেহেরপুরের বিস্তীর্ণ মাঠ যেন সবুজের মাঝে হলুদ ফুলের সমারোহ। হলুদে হলুদে মোড়ানো সরিষা ফুলে ছেয়ে আছে মেহেরপুরের মাঠ। প্রকৃতি সেজেছে তার আপন মহিমায়। মৌমাছির মৌ-মৌ গন্ধে সরব হয়ে উঠেছে সরিষা ক্ষেত। মেহেরপুরের বিস্তৃর্ণ মাঠ সরিষা ক্ষেত বলে দিচ্ছে বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি মৌসুমে সরিষার বাম্পার ফলন হবে। এতে কৃষকের চোখে আনন্দের ঝিলিক।
সরিষার তেলের রয়েছে অনেক ওষুধি গুণ। সরিষার খৈল জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি করে। সরিষার গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এছাড়া জমিতে সরিষার আবাদ করলে ওই জমিতে সরিষার পাতা পড়ে জমির খাদ্য চাহিদা অনেকাংশে মিটে থাকে।
সরেজমিনে বিভিন্ন গ্রামের মাঠ ঘুরে ও সরিষা চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে প্রতি বিঘা জমি থেকে ৭-৮ মণ সরিষা উৎপাদন হবে। লাভজনক এবং অনুকূল পরিবেশের কারণে এবার চলতি রবি মৌসুমে মেহেরপুরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ বেশি হয়েছে। চলতি রবিশস্য মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং সরিষাক্ষেতে রোগবালাই কম হওয়ায় বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেব মতে, চলতি বছরে সরিষার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমি। কিন্তু চলতি মৌসুমে জেলায় এবার ৪ হাজার ৯৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার বেশি জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে।
সদর উপজেলার শোলমারি গ্রামের সরিষা চাষি নিয়ামত আলী জানান, প্রতিবিঘা জমিতে সরিষা চাষে খরচ হয় সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা। প্রতিমণ সরিষা বিক্রি করা যায় দুই হাজার ৫শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রতি বিঘাতে ৭ মণ সরিষা উৎপাদন হলে বিঘাপ্রতি ১৫ হাজার টাকা লাভ করা যায়। এছাড়া সরিষা আবাদে তেমন সেচের প্রয়োজন হয়না। তাছাড়া মাত্র তিনমাস সময়ে সরিষা আবাদ করা যায়। সরিষার বড় শ জাব পোকা। এবার জাব পোকার আক্রমণ না থাকায় সরিষার ফলন ভালো হবে বলে আশা করছেন তিনি।
গাংনী উপজেলার রাধাগোবিন্দপুর ধলা গ্রামের সরিষা চাষি আবুল বাশার বলেন, নিজের প্রয়োজন মেটাতে প্রতিবছর একবিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেন। তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার ২ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছেন। আশা করছেন অন্য বছরের তুলনায় এবার সরিষার ফলন ভালো হবে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, চলতি মৌসুমে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় জেলায় প্রায় ৩ হাজার কৃষককে বিনামূল্য সরিষার বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। গতবছরের চেয়ে এবার প্রায় এক হাজার হেক্টর বেশি জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে বাজারে সরিষা এবং ভোজ্য তেলের দাম বেশি। রবিশষ্য চাষের এবার অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। এমন প্রাকৃতিক পরিবেশ পেলে মানুষ আবার সরিষা আবাদে ফিরে আসবে। আবহাওয়া শেষ পর্যন্ত অনুকূলে থাকলে এবার সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলেও তিনি আশাবাদী।