Take a fresh look at your lifestyle.

মেহেরপুরে কৃষকের দোরগোড়ায় ‌`ভ্রাম্যমাণ কৃষি হাসপাতাল’

0

দিলরুবা খাতুন, মেহেরপুর:
জগদীশ চন্দ্র বসু আবিস্কার করেছিলেন গাছেরও প্রাণ আছে। সেসব গাছের রোগ-বালাই দুর করতে মেহেরপুরের গ্রামে গ্রামে ভ্রাম্যমাণ কৃষি হাসপাতাল কৃষাণ-কৃষানীদের পরামর্শ দিয়ে ফিরছেন এক উপ-সহকারি কৃষি অফিসার। শুধু কী মানুষেরই রোগ বালাই হয় ? এমন প্রশ্নর সহজ উত্তর কৃষিবিদদের। যার প্রাণ আছে তারই রোগ আছে।
তাই মাটিরও প্রাণ আছে। আছে শাক সবজি, ফল মুল ও গাছের রোগ। এসব রোগেরও ওষুধ আছে। দেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম। কৃষি বিজ্ঞানী, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ পুষ্টি নিয়ে ভাবছে। এই ভাবনাতেই মেহেরপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ভ্রাম্যমান কৃষি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ হাসপাতালে কৃষির উৎপাদন, রোগ-বালাই রোধে দেয়া হচ্ছে চিকিৎসা। কৃষকরা সুফলও পাচ্ছে। মেহেরপুর জেলায় দেশে প্রথম ভ্রাম্যমাণ কৃষি হাসপাতাল।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার অলিনগর গ্রামে দেখা মেলে ভ্রাম্যমাণ কৃষি হাসপাতালের। উপ-সহকারি কৃষি অফিসার বকুল হোসেন গ্রামের কৃষাণীদের তাদের সবজির রোগ প্রতিরোধে করণীয় ও রোগাক্রান্ত সবজির রোগ প্রতিরোধে পরামর্শ দিচ্ছেন। প্রতিদিনই কৃষানীরা বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি চাষের পরামর্শ ও বালাইনাশক ওষুধ নিচ্ছেন। চাষীরাও আসছে ভ্রাম্যমাণ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা সহায়তা নিতে আসা কৃষাণী মোছাঃ মাজেদা খাতুন, শেফালী, শ্যামলী, রুমা, চায়না অভিন্নসুরে জানান- ভ্রামমাণ কৃষি হাসপালের মাধ্যমে ফল ও সবজির পোকা মাকড় দমনের জন্য বিষটোপ তৈরি, অন্যান্য ক্ষতিকর পোকা দমনের জন্য জৈব বালাইনাশক তৈরির কৌশল শিখেছি। এ সকল পোকা দমন পদ্ধতির মাধ্যমে রোগমুক্ত সবজি উৎপাদন করতে পারছেন। রাসায়নিক সারের ব্যবহার বন্ধ করে জৈব সারে সবজি উৎপাদন করতে পারছেন।
অলিনগর গ্রামের সুফিয়া খাতুন বলেন, আমাদের কৃষি হাসপাতালের ডাক্তার প্রথমে বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি চাষে গ্রামের কৃষানীদের উদ্যোগি করেন। গত জুন মাসের পর থেকে প্রতি সপ্তাহে গ্রামে আসেন। বাড়ির আঙ্গিনার সবজির রোগ-বালায় প্রতিরোধে করনীয় সম্পর্কে পরামর্শ দেন। রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে জৈবসার তৈরী ও তার ব্যবহারবিধি শিখিয়েছেন। রোগ-বালাই হলে কোন সময় কোন ওষুধ দিতে হবে সেই পরামর্শ দেন।
একই গ্রামের রাহেলা খাতুন বলেন, তাদের বাড়ির আঙ্গিনায় উৎপাদিত রোগ ও বিষমুক্ত সবজি কেনার জন্য অনেক লোকজন আসে। কিন্তু আমরা বাইরের চাহিদা মেটাতে পারিনা। গ্রামের মানুষের চাহিদা মেটাতে পারি। তিনি আরও বলেন, আগামিতে অন্যের জমি বর্গা নিয়ে বিষমুক্ত জৈবসারের মাধ্যমে সবজি চাষ করবো।
ভ্রাম্যমাণ কৃষি হাসপাতালের চিকিৎসক উপ-সহকারি কৃষি অফিসার মোঃ বকুল হোসেন বলেন, জৈব কৃষির বিস্তার অতিদ্রুত গ্রামীন জনগোষ্ঠীর দ্বারপ্রান্তে পৌছানোর লক্ষ্যে পরামর্শ প্রদান করেন। হাত-কলমে ব্যবহার বিধি শেখানো হয়। ফলে গ্রাম অঞ্চলের মানুষ কম খরচে বিষমুক্ত নতুন নতুন জাতের ফল উৎপাদন করছেন। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে কালেকশন পয়েন্টের মাধ্যমে বাজার জাত করে কৃষক কৃষাণীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে। কৃষিনীরা তাদের উৎপাদিত সবজি এই হাসপাতালে নিয়ে আসে। এখান থেকেই ভোক্তারা রোগমুক্ত সবজি ক্রয় করেন।
তিনি আরও বলেন, নতুন নতুন ফলের জাত আলু বোখারা, জাবাটিকাবা, শরিফা, এলাচ চাষ সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এখন গাংনীতে এলাচফল চাষ শুরু হয়েছে। আগামি দু‘চার বছরের মধ্যে মেহেরপুরের মাটিতে এলাচ উৎপাদন হবে। তেরাইল ব্লকের বসত ভিটায় ৫৫ হেক্টর অব্যবহৃত জায়গায় পুষ্টিকর সবজি বাগান করা হয়েছে। হরেক রকমের ফল ও শাকসবজি উৎপাদন হচ্ছে। চলতি মৌসুমে বাড়ির আঙ্গিনার ৮০০ টন লাউ, ১০০ টন করলা, ২০০ টন শষা, ৫০০ টন টমেটো, ২৪৫ টন মুলা, ১৮০ টন পালং ৬০ টন বরবটি, ৬০ টন লালশাক, ৩৫০ টন পেপে, ৪০ টন গাজর উৎপাদন হয়েছে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, মেহেরপুরের মাটিতে সব ধরনের ফসল উৎপাদন হয়। কৃষি নিয়ে কৃষকদের সবসময়ই পরামর্শ দেয়া হয় সব সময়। মেহেরপুরের কৃষিতে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য ভ্রাম্যমাণ হাসপাতালের মাধ্যমে কৃষকদেরকে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ভালো সাড়া পাওয়া গেছে। পর্যায়ক্রমে জেলার সব ব্লকেই ভ্রাম্যমাণ কৃষি হাসপাতালের মাধ্যমে পরামর্শ দেওয়া হবে।
-ডিকে/আইআর

Leave A Reply

Your email address will not be published.