Take a fresh look at your lifestyle.

শুভ জন্মদিন পার্থ প্রতীম মজুমদার

0

বাবলু ভট্টাচার্য :

বাবা ছিলেন একজন সংস্কৃতিমনা প্রেস ফটোগ্রাফার। বাবার সঙ্গে গ্রামের বিভিন্ন অনুষ্ঠান-পার্বণে লাঠিখেলা, যাত্রা, নাটক, জারিগান এসব দেখে এসে তিনি ভাই-বোনদের সামনে তা উপস্থাপন করতেন। যা দেখতেন তা হুবহু অনুকরণ করতে পারতেন। কার কথা বলছি? তিনি বিশ্বনন্দিত পার্থ প্রতীম মজুমদার।

পার্থ প্রতীম ছোটবেলা থেকেই ছিলেন দুরন্ত। প্রাথমিক শিক্ষা শেষে তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় কাকা শুধাংশু কুমার বিশ্বাসের কাছে, পশ্চিমবঙ্গের চন্দননগরে। সেখানে তার পরিচয় হয় মুকাভিনয় বা মাইম শিল্পী যোগেশ দত্তের সঙ্গে। কথা না বলে অভিব্যক্তি প্রকাশ দেখে তিনি তার কাছেই প্রথম মাইম শিখতে আগ্রহী হন।

সঙ্গীতগুরু বারিন মজুমদারের সঙ্গে পার্থ প্রতীমের বাবার ছিল মামা-ভাগ্নে সম্পর্ক। তাদের পাবনার বাড়িতে প্রায়ই আসতেন তিনি। ১৯৭২-এ প্রেমাংশু বাড়ি এলে বারীন মজুমদারের নজরে পড়েন। বারীন মজুমদার প্রেমাংশুকে হিমাংশু কুমার বিশ্বাসের কাছ থেকে চেয়ে দত্তক নেন। সেই থেকে তিনি বারিন মজুমদারের ছেলে পার্থ প্রতীম মজুমদার হিসেবে বড় হতে থাকেন।

১৯৬৬ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত পার্থ প্রতিম কলকাতায় যোগেশ দত্ত মাইম একাডেমিতে মূকাভিনয়ের ওপর শিক্ষা গ্রহণ করেন। তার পর দেশে এসে তিনি এ শিল্পের চর্চার পাশাপাশি প্রচার-প্রসারে উদ্যোগী হন। শিল্প সংস্কৃতির অঙ্গনে তিনি ‘ভানু’ নামেই ব্যাপক পরিচিত ছিলেন। পার্থ প্রতীম মজুমদার মূকাভিনয় চর্চার পাশাপাশি ১৯৭২-১৯৭৬ সাল পর্যন্ত সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে সঙ্গীতের ওপর স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি নাট্যচর্চা শুরু করেন ড্রামা সার্কেলের হয়ে।

১৯৭৫ সালে বিটিভির দুটি অনুষ্ঠানে পার্থর মূকাভিনয় প্রচার হলে তা অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এক সময় স্কলারশিপ পেয়ে তিনি প্যারিস যান মূকাভিনয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিতে। প্যারিসেও প্রশংসিত হতে লাগল তার মূকাভিনয়। এভাবেই একদিন তিনি মূকাভিনয় সম্রাট মার্সেল মার্সোর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন। পার্থ প্রতীমের শিল্পকর্ম দেখে তিনি মুগ্ধ হন। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সমন্বয়ে নতুন কিছু উদ্ভাবন এবং মূকাভিনয়কে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করতে তিনি পার্থ প্রতীমকে বেছে নেন। বড় মাপের এ শিল্পীর সান্নিধ্য পেয়ে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি পার্থ প্রতীমকে। আপন কর্মের মহিমায় তিনি এখন বিশ্বনন্দিত একজন।

পার্থ প্রতীম মজুমদার বেশ কয়েকটি আমেরিকান, কানাডিয়ান ও ফরাসি চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেছেন৷ তার অভিনীত সাম্প্রতিক ছবিগুলো হচ্ছে ‘ওয়ান ডলার কারি’, ‘জেনিস এ্যান্ড জন’, ‘ফার্মাসী দ্য গার্ড’, ‘দ্য মর দ্য বেলভিল’, ‘ভাই ভাই’ প্রভৃতি৷ এদের মধ্যে ‘ওয়ান ডলার কারি’ অর্জন করেছে সবচেয়ে বেশি সফলতা৷ ‘ভাই ভাই’ ইতিমধ্যে ২৬টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে এবং ৭৫টি উৎসবে প্রদর্শনের জন্য নির্বাচিত হয়েছে৷

পার্থ প্রতীম মজুমদার ‘মাস্টার অব মাইম’, ‘একুশে পদক’ ও ‘মলিয়ে’র অ্যাওয়ার্ডসহ জিতেছেন বহু সম্মাননা-স্বীকৃতি। সম্প্রতি তার মুকুটে যোগ হয়েছে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ খেতাব ‘নাইট’ উপাধি।

পার্থ প্রতীম মজুমদার ১৯৫৪ সালের আজকের দিনে (১৮ জানুয়ারি) পাবনা জেলার কালাচাঁদপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন৷

লেখক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

Leave A Reply

Your email address will not be published.