Take a fresh look at your lifestyle.

সমলয় চাষপদ্ধতি কি

0

সংবাদ কক্ষ:
বর্তমান সরকার কৃষিকে আধুনিক ও লাভজনক করতে টেকসই যান্ত্রিকীকরণের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে; যার একটি হচ্ছে সমবায়ভিত্তিক সমলয় চাষাবাদ পদ্ধতি। যেখানে একটি মাঠে বা মাঠের একটি অংশের কৃষক সবাই মিলে একসঙ্গে একই জাতের ধান একই সময়ে যন্ত্রের মাধ্যমে রোপণ করবেন। এ পদ্ধতিতে বীজতলা থেকে চারা তোলা, চারা রোপণ ও ধান কাটা সব প্রক্রিয়া যন্ত্রের সাহায্যে সমসময় সম্পাদন করা হবে। সমলয়ে ধান আবাদ করতে হলে চারা তৈরি করতে হবে ট্রেতে। ট্রেতে চারা উৎপাদনে জমির অপচয় কম হয়। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে চারা একই গভীরতায় সমানভাবে লাগানো যায়। কৃষক তার ফসল একত্রে মাঠ থেকে ঘরে তুলতে পারেন। কারণ, একসঙ্গে রোপণ করায় সব ধান পাকবেও একই সময়ে। তখন ধান কাটার মেশিন দিয়ে একই সঙ্গে সব ধান কাটা ও মাড়াই করা যাবে। এসব কারণে সমলয় পদ্ধতিতে যন্ত্রের ব্যবহার সহজতর এবং বৃদ্ধি হবে। ফলে ধান চাষে সময়, শ্রম ও খরচ কম লাগবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথম সমলয়ে চাষাবাদ কার্যক্রম প্রদর্শনী আকারে দেশের ৬১ জেলায় কার্যক্রমটি অব্যাহত রেখেছে। এটি বাস্তবায়নের সরাসরি দায়িত্বে আছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আর বিভিন্নভাবে কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ কার্যক্রম গ্রহণের ফলে ধানের নতুন নতুন জাত দ্রুত সম্প্রসারণ এবং ধান চাষে যন্ত্রের ব্যবহার বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। সমলয় চাষাবাদ পদ্ধতিতে এক প্লট থেকে অন্য প্লটে কৃষি যন্ত্র পরিবহনে সময়ের অপচয় রোধ করা যাবে। ছোট আকারের জমিতেও লাভজনকভাবে পূর্ণ দক্ষতায় কৃষিযন্ত্র চালানো যাবে। কৃষিযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হবে।
সম্প্রতি প্রণীত সরকারের সমলয় নীতিমালায় বলা হয়েছে, দেশের প্রতি উপজেলায় সমলয় কৃষক গ্রুপের মাধ্যমে প্রতি জেলায় নূন্যতম একটি উপজেলায় একটি সমলয় চাষাবাদ প্রদর্শনী সম্পন্ন করতে হবে। প্রথম বছর বা মৌসুমে যে গ্রুপের মাধ্যমে ওই কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে পরবর্তী বছর বা মৌওসুমে অন্য গ্রুপের মাধ্যমে তা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রতি গ্রুপে কৃষক সংখ্যা সর্বোচ্চ ৩৫ জন এবং জমির পরিমাণ ৫০-৬০ একর হতে হবে। প্রতি গ্রুপে কৃষাণীর সংখ্যা সর্বনিম্ন ৩০ শতাংশ হতে হবে। জাতের জীবনকালের সঙ্গে সমতাবিধান করে এমনভাবে ফসল জাত নির্বাচন, ম্যাট পদ্ধতিতে ধানের চারা উৎপাদন এবং রোপণ করতে হবে যাতে রাস্তার পাশের ধান আগে কাটা এবং ভেতরের ফসল পরে কাটা যায়। তাতে ফসল উৎপাদনে যন্ত্রের ব্যবহার সহজ হবে।
সমলয় নীতিমালা অনুযায়ী, কৃষক নির্বাচন, তাদের অগ্রাধিকার তালিকা প্রস্তুত ও অনুমোদন, উপকরণ বিতরণ এবং চাষাবাদ কার্যক্রম বাস্তবায়নে গবেষণা প্রতিষ্ঠানের আঞ্চলিক কার্যালয়ের আওতাধীন এলাকায় আঞ্চলিক কার্যালয় এবং অন্যান্য এলাকায় উপপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ব্লকের এসএএও, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা সম্পন্ন করবেন। প্রদর্শনী বাস্তবায়নে ব্রি/বিনা/গম-ভুট্টা গবেষণাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নতুন জাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিগত ৫ বছরের মধ্যে ছাড়কৃত/নিবন্ধনকৃত বিভিন্ন ফসলের জাতগুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে।
সমলয় চাষাবাদের আওতায় উৎপাদিত মানসম্পন্ন বীজ উপযুক্ত মূল্যে কিনে পরবর্তী মৌসুমে তা সমলয়ভুক্ত নতুন কৃষকের মাঝে বিতরণ করা যেতে পারে। সমলয় চাষাবাদে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ট্রেতে ম্যাট টাইপ ধানের চারা উৎপাদন। এ পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি না করে পলিথিন অথবা ফ্লেপিবল ট্রেতে চারা তৈরি করা হয়। এজন্য রোপণের পরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন তারিখে বীজ বপন করতে হয়। তাতে ৩ :২ অনুপাতে মাটি ও গোবরের মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়। এরপর বীজ ছিটিয়ে পুনরায় অর্ধেক মাটি ও গোবর মিশ্রণ দিয়ে সমতল জায়গায় রেখে পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখা হয়। বীজতলা তৈরির তিন দিনের মধ্যে অঙ্কুর বের হয়। যদিও ম্যাট টাইপ চারা উৎপাদন কৃষকদের কাছে কিছুটা জটিল বলে মনে হয়, তবে সমন্বিত উদ্যোগে সফলভাবেই ম্যাট টাইপ চারা উৎপাদন করা সম্ভব।
ট্রেতে বীজ বপনের আগে অ্যাজোপিট্রবিন অথবা পাইরাক্লোস্ট্রবিন গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন- এমিস্টারটপ অথবা সেলটিমা (প্রতি কেজি বীজের জন্য ২-৩ মিলি লিটার) দিয়ে ১৮-২০ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর পরিস্কার পানি দিয়ে ধুয়ে জাগ দিতে হবে। প্রতি ট্রেতে জাত অনুসারে ১২০-১৪০ গ্রাম বীজ বপন করতে হবে। বীজ এমনভাবে ফেলতে হবে যাতে প্রতি সেন্টিমিটারে দু-তিনটি চারা থাকে। ট্রের চারায় রোগবালাই দেখা দিলে এমিস্টারটপ অথবা সেলটিমা দু-তিন মিলি লিটার পানিতে মিশিয়ে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। স্প্রে করার পর আনুমানিক ৬ ঘণ্টা ট্রেতে সেচ দেওয়া যাবে না। সমভাবে বীজ ছিটানোর পর হালকাভাবে এক স্তর মাটি দিতে হবে। বেশি পুরু করে মাটি দেওয়া যাবে না। বোরো মৌসুমে ২৫-৩০ দিনের চারা এবং আউশ ও আমন মৌসুমে ১৫-২০ দিনের চারা রোপণ করতে হবে। অর্থাৎ চারার উচ্চতা আনুমানিক ১৫ সেন্টিমিটার হতে হবে। এই পদ্ধতিতে ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে চারা বেড়ে ওঠে। পরে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে চারা রোপণ করা হয়। তবে হাতে রোপণ করলেও সারিবদ্ধভাবে চারা রোপণ করতে হবে যেন আন্তঃপরিচর্যা সহজ হয়।
বর্তমানে আমাদের দেশের কৃষকরা অভিযোগ করেন, ধানচাষ লাভজনক নয়। এটিকে লাভজনক করার অন্যতম উপায় হলো উৎপাদন ব্যয় কমানো। উৎপাদন ব্যয় কমাতে হলে সমলয় চাষের বিকল্প নেই। প্রচলিত পদ্ধতিতে এক হেক্টর জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে এলাকাভেদে খরচ হয় প্রায় ১২-১৬ হাজার টাকা, যেখানে রোপণ যন্ত্র ব্যবহার করলে ব্যয় হয় মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। একইভাবে ধান কাটার ক্ষেত্রেও সময়স্বল্পতা এবং সারাদেশে প্রায় পাশাপাশি সময়ে কাটার কাজ শুরু হওয়ায় শ্রমিকের ব্যাপক ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। এ ক্ষেত্রে একটি কম্বাইন্ড হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটলে যেখানে হেক্টরপ্রতি সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা খরচ হয়, সেখানে শ্রমিক দিয়ে কাটা, পরিবহন, মাড়াই এবং ঝাড়াই বাবদ এলাকাভেদে প্রায় ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়।

Leave A Reply

Your email address will not be published.