Take a fresh look at your lifestyle.

জন্মদিনে স্মরণঃ লুইস ক্যারল

0

বাবলু ভট্টাচার্য :

শিশু সাহিত্যের এক জনপ্রিয় লেখক ছিলেন লুইস ক্যারল। ছোটদের স্বপ্নবিলাসী করে তুলতে, তাদেরকে নিয়ে কল্পনার রাজ্যে ভ্রমণ করতে তার জুড়ি মেলা ভার।

তার পিতৃ প্রদত্ত নাম চার্লস লুডউইগ ডজসন। তিনি ছিলেন একাধারে গণিতজ্ঞ, কবি, আবিষ্কারক, প্রাবন্ধিক, যাজক এবং শখের আলোকচিত্র শিল্পী। তাকে সেই সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলোকচিত্রগ্রাহক বলেও মনে করা হয়। অবসর সময়ে তিনি ব্যাডমিন্টন, দাবা, বিলিয়ার্ড, তাস ইত্যাদি খেলতে খুব ভালবাসতেন।

চার্লসের বাবা চার্লস ডজসন অল সেন্ট’স চার্চের কিউরেটর ছিলেন। অঙ্কে তার ছিল তুখোড় জ্ঞান। উত্তরাধিকার সূত্রে লুইস বাবার কাছ থেকেই অঙ্কের প্রতি গভীর অনুরাগ পেয়েছিলেন। বাড়ির প্রাথমিক পড়াশোনা শেষে লুইসকে ভর্তি করানো হয় রিচমন্ড পাবলিক স্কুলে।

১৪ বছর বয়সে উইকশায়ারের রাগবি স্কুলে চার্লস ভর্তি হন। কিন্তু স্কুলের পরিবেশ তার খুব একটা পছন্দ হয়নি। কিন্তু পড়াশোনায় তিনি বরাবরই কৃতী ছাত্র ছিলেন। অঙ্কে তার সহজাত প্রতিভা দেখে স্কুলের সব শিক্ষকই মুগ্ধ হতেন। এসময় সাহিত্যের প্রতি তার অগাধ ভালবাসা জন্মায়।

ছোটদের সাথে সহজেই মিশে যেতে পারতেন তিনি। সকলকে গান শোনাতে, গল্প বলতে ও অন্যকে নকল করে দেখাতে খুব পছন্দ করতেন। ভাই-বোনদের সঙ্গে মিলে বের করতেন হাতে লেখা একাধিক পারিবারিক পত্রিকা। পত্রিকাগুলোতে উঁকি দিত তার নানারকম অদ্ভুত চিন্তা-ভাবনা, শব্দের জাদু, প্যারডির উচ্ছল প্রবণতা।

ভাল ফলাফলের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রাইস্ট চার্চ কলেজে লেকচারার হিসেবে যোগ দেন লুইস। দীর্ঘ ২৬ বছর সেই কলেজেই তিনি পড়িয়েছিলেন। ১৮৮১ সালে চাকরি থেকে অবসর নেন। তিনি ১৮৬১ সালে অক্সফোর্ডের এক চার্চের যাজক নিযুক্ত হয়েছিলেন।

১৮৬৫ সালে প্রকাশিত হয় ‘অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’ উপন্যাসটি। এক ঝলমলে সকালে অক্সফোর্ডের ক্রাইস্ট চার্চ কলেজের ডিনের তিন মেয়ে লোরিনা, অ্যালিস আর এডিথ লিডল অনুমতি পায় তাদের প্রিয় খেলার সঙ্গী ও গল্প বলার বন্ধু ক্রাইস্ট চার্চ কলেজেরই প্রফেসর চার্লস লুডউইগ ডজসনের সঙ্গে পিকনিকে যাওয়ার।

আইসিস নদীর ওপর দিয়ে সেই ছোট্ট বন্ধুদের নিয়ে প্রফেসর যখন নৌকা চালাচ্ছিলেন, তখন ছোট্ট বন্ধুরা প্রফেসরের কাছে আবদার করলো তাদের গল্প শোনাতে হবে। এর মধ্যে প্রফেসরের সবচেয়ে ন্যাওটা ডিনের মেজো মেয়ে অ্যালিসের বায়না তাকে নিয়ে মজার গল্পটি বলতে হবে। সেদিনের সেই পিকনিকে প্রফেসর মুখে মুখেই তার ছোট্ট বন্ধুদের আবদার রাখতে বুনতে থাকেন গল্পের জাল। যখন তার গল্প বলা শেষ হলো, তখনও ছোট্ট বন্ধুদের ভাল লাগার আবেশ কিছুতেই শেষ হতে চায় না। তাই দশ বছরের অ্যালিস বায়না জুড়ে দিলো, তাকে পুরো গল্পটা লিখে দিতে হবে।

ছোট্ট বন্ধুর অনুরোধে প্রফেসর একটু সাজিয়ে-গুছিয়ে লিখে ফেলেন সে দিনের বানিয়ে বলা গল্পটি। পাতায় পাতায় জুড়ে দেন নিজের হাতে আঁকা ছবি। শেষে জুড়ে দেন তার তোলা অ্যালিসের একটি ছবি। ১৮৬৪ সালে বড়দিনের উপহার হিসেবে চার্লস তার ছোট্ট বন্ধু অ্যালিসকে উপহার দেন সবুজ চামড়ায় বাঁধানো, ছবিতে ভরা, হাতে লেখা এক আশ্চর্য সুন্দর বই- ‘অ্যালিস’স অ্যাডভেঞ্চারস আন্ডারগ্রাউন্ড’।

বইটি মুদ্রিত আকারে প্রকাশের সময় লেখক গল্পে কিছুটা পরিবর্তন আনেন। বইয়ের প্রচ্ছদ আঁকেন বিখ্যাত কার্টুনিস্ট-ইলাস্ট্রেটর জন টেনিয়েল। বইয়ের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘অ্যালিস’স অ্যাডভেঞ্চারস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’। বইটি প্রকাশনার দায়িত্বে ছিল লন্ডনের নামকরা পাবলিশিং হাউস ম্যাকমিলান। লেখকের নাম হিসেবে চার্লস ‘লুইস ক্যারল’ ছদ্মনামটি ব্যবহার করেন। এই বইয়ের জনপ্রিয়তায় পরবর্তীতে চার্লস লুডউইগ ডজসন নামটি হারিয়ে যায়। পরিচিতি পেতে থাকেন তিনি লুইস ক্যারল ছদ্মনামে।

অজস্র ভাষায় তার লেখা অনুদিত হয়েছে। এতদিন পরেও তার লেখা ছোটদের অনবদ্য সব উপন্যাস, গল্প ও কবিতাগুলোর জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। শব্দ নিয়ে বুদ্ধিদীপ্ত ভাঙচুর, ছত্রে-ছত্রে মজা, হাস্যরস এবং লাগামহীন কল্পনার সৃষ্টিশীলতার জন্য তার রচনা এখনও সব বয়সী পাঠকদের কাছে পছন্দের তালিকার প্রথম সারিতেই অবস্থান করছে।

১৮৬৫ সালের প্রথম সংস্করণের পর থেকে এখন পর্যন্ত ‘অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’ বেস্টসেলার বইটি একবারের জন্যও আউট অব প্রিন্ট হয়নি। অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড এর পরে ক্যারল লিখেছেন, ‘থ্রু দ্য লুকিং গ্লাস’, ‘দ্য হান্টিং অব দ্য স্নার্ক’ ও ‘সিলভি অ্যান্ড ব্রুনো’র মতো বই। ছোটদের জন্য তৈরি করেছেন অঙ্কের টেক্সট বই, বহু মজার খেলা, নানা ধরনের ধাঁধা, লজিক গেম ও শব্দ দিয়ে তৈরি নানা মজার খেলা।

১৮৯৮ সালে বোনের বাড়িতে মানুষটি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

লুইস ক্যারল ১৮৩২ সালের আজকের দিনে (২৭ জানুয়ারি) ইংল্যান্ডের চেশায়ার কাউন্টির ডেরসবেরিতে জন্মগ্রহণ করেন।

লেখক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

Leave A Reply

Your email address will not be published.