Take a fresh look at your lifestyle.

জন্মদিনে স্মরণঃ নরেন্দ্রনাথ মিত্র

0

বাবলু ভট্টাচার্য :

তিনি সেই গুটিকয়েক পারদর্শী লেখকদের একজন যাঁর লেখার মধ্যে একই সঙ্গে স্থান করে নিয়েছে ঔপনিবেশিক মধ্যবিত্ত-মন, উপনিবেশ-উত্তর মধ্যবিত্ত ও বিশ্বায়ন পরবর্তী মধ্যবিত্ত বাঙালীর কাল-পর্ব। তিনি নরেন্দ্রনাথ মিত্র।

সাধারণ মানুষের অতিসাধারণ কথা ও মুহূর্তগুলো ছিল তাঁর গল্পের উপাদান। সহজ ভাষায় জীবনের কঠিন অথচ বাস্তবকে তুলে ধরাই ছিল তাঁর গল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

নরেন্দ্রনাথ মিত্রের পিতা মহেন্দ্রনাথ মুন্সেফ কোর্টের নকলনবিস ছিলেন। মা বিরাজবালা দেবী ছিলেন গৃহিণী।

শৈশবে সদরদী এম. ই স্কুল শেষ করে ভাঙ্গা হাই স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৩৩ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ক্লাস নাইনে পড়ার সময় কয়েক সহপাঠীর সঙ্গে মিলে প্রকাশ করেন হাতে লেখা দুটি পত্রিকা ‘আহ্বান’ ও ‘মুকুল’।

১৯৩৫-এ ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে আইএ পাস করেন। এই কলেজের আর এক কৃতী ছাত্র নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রকাশ করেন হাতে লেখা মাসিক পত্রিকা ‘জয়যাত্রা’।

উত্তাল চল্লিশের দশকে কুড়ি বছরের যুবক নরেন্দ্রনাথ মিত্র ফরিদপুর ছেড়ে বিএ পড়তে চলে যান কলকাতায়। পেশাগত জীবনে অনিশ্চয়তা, মেস থেকে ভাড়া বাড়ি- স্থায়ী ঠিকানার খোঁজে বার বার স্থান বদল, অন্যদিকে কলকাতা-বাংলাদেশ- ভারত, সামাজিক-রাজনৈতিক-ইতিহাসের পটপরিবর্তন- দেশভাগ, স্বাধীনতা, উদ্বাস্তু সমস্যা- এর সবই নরেন্দ্রনাথ মিত্রের কলকাতায় আসার প্রথম দেড় দশকের মধ্যকার ঘটনা।

এ কারণে দাঙ্গা-দুর্ভিক্ষ-মন্বন্তর-মহামারি-মিছিল- শ্লোগান- কবিতা-প্রতিবাদে তাঁর সাহিত্য হয়ে উঠেছে কালোত্তীর্ণ। সেখানে যেমন বিধৃত হয়েছে ইতিহাস, তেমনি স্পষ্ট হয়েছে এর শ্রেণীবৈচিত্র্য। আর একই ধারাবাহিকতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পরিবর্তন এসেছে শহরটি মেট্রোপলিটন ছাউনিতে। এর কোন কিছুই বাদ যায়নি তাঁর কথাসাহিত্য থেকে।

সব লেখকই কমবেশি নিজের চেনা-জানা গণ্ডির ভেতর থেকে গল্পের উপাদান খুঁজে নেন। এর ভেতরেই খুঁজে পাওয়া যায় স্বয়ং লেখকের অস্তিত্বের নানা দিক। নরেন্দ্রনাথ মিত্রও কথাসৃজনের বিস্তৃত ক্ষেত্রে আশার প্রদীপশিখা প্রজ্জ্বলন করেছেন তাঁর ছোটগল্পে। তাঁর ‘চাঁদমিঞা’, ‘কাঠগোলাপ’, ‘চোর’, ‘রস’, ‘হেডমাষ্টার’, ‘পালঙ্ক’, ‘ভুবনডাক্তার’, ‘সোহাগিনী’, ‘আবরণ’, ‘সুহাসিনী’, ‘তরল আলতা’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য গল্প অর্থনৈতিক-সামাজিক-মানসিক টানাপোড়েন সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠেছে ইতিবাচক জীবনের আলেখ্য।

তাঁর সাহিত্যকর্ম অবলম্বন করে বিশ্বখ্যাত চিত্রনির্মাতারা চলচ্চিত্র তৈরি করেছেন। এই তালিকায় আছে সত্যজিৎ রায়ের ‘মহানগর’, অগ্রগামীর ‘হেডমাষ্টার’, ‘বিলম্বিতলয়’, রাজেন তরফদারের ‘পালঙ্ক’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

অমিতাভ বচ্চন অভিনীত ‘রস’ গল্প অবলম্বনে নির্মিত হিন্দি চলচ্চিত্রের নাম ‘সওদাগর’। তাঁর অনেক গল্পই হিন্দি, মারাঠি, রুশ, ইংরেজি, ইতালীয় ভাষায় অনুদিত হয়েছে। কর্মজীবনে অনেক ঘাত-অভিঘাত শেষে তিনি আনন্দবাজার পত্রিকায় যোগদান করেন এবং আমৃত্যু সেখানে কর্মরত ছিলেন।

১৯৬২ সালে তিনি আনন্দ পুরস্কার পান। বাংলা সাহিত্যের অনালোচিত-অনালোকিত এই লেখক পৃথিবী ছাড়েন ১৯৭৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর।

নরেন্দ্রনাথ মিত্র ১৯১৯ সালের আজকের দিনে (৩০ জানু) ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার সদরদী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

লেখক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

Leave A Reply

Your email address will not be published.