Take a fresh look at your lifestyle.

শুভ জন্মদিন ওয়াহিদা রেহমান

0

বাবলু ভট্টাচার্য :

পঞ্চাশ, ষাট এমনকি সত্তরের দশকজুড়ে ভারতীয় চলচ্চিত্রের দাপুটে অভিনেত্রী ওয়াহিদা রেহমান। বলা হয়, ভারতীয় সিনেমার সোনালি সময়ের উজ্জ্বলতম নক্ষত্রের নাম ওয়াহিদা রেহমান। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এক বিদেশি বন্ধুর নামও ওয়াহিদা রেহমান।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের রাতে পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকায় যে গণহত্যা শুরু করেছিল, ২৭ মার্চ মুম্বাইয়ের অধিকাংশ সংবাদপত্রেই সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। সেই সময়ের মুম্বাই শহরের বিভিন্ন পেশাজীবী সচেতন মানুষেরা এর প্রতিবাদে একত্র হওয়া শুরু করেছিলেন। বাংলাদেশকে সহায়তা করার লক্ষ্যে একাত্তরের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের দিকে মুম্বাইয়ের প্রখ্যাত সাংবাদিক সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাসায় উপস্থিত হন সাংবাদিক সলিল ঘোষসহ (সাগরময় ঘোষের ছোট ভাই) শহরের বিভিন্ন পেশার গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন ব্যক্তি। সেই আলোচনার একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, মহারাষ্ট্রে বাংলাদেশ এইড কমিটি গঠনের।

মুক্তিযুদ্ধ আর বাংলাদেশের সংগ্রামরত মানুষের সহমর্মী বন্ধু সাংবাদিক সলিল ঘোষ শুরুতে মহারাষ্ট্রে বাংলাদেশ এইড কমিটির অনারারি সেক্রেটারি নির্বাচিত হয়েছিলেন। মুম্বাইয়ের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মহেন্দ্র অ্যান্ড মহেন্দ্র গোষ্ঠীর প্রধান হরিষ মহেন্দ্রকে সভাপতি করে যাত্রা শুরু করেছিল মহারাষ্ট্রের বাংলাদেশ এইড কমিটি। সলিল ঘোষ মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে যেভাবে অকুণ্ঠ সহায়তা করেছিলেন, তাঁর সম্মান আমরা না দিতে পারলেও ভারত সরকার তাঁকে ১৯৭২ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে সহায়তা করার জন্য ‘পদ্মশ্রী’ সম্মাননা দিয়ে স্বীকৃতি জানিয়েছিল।

১৯৭১ সালের ৯ জুলাই ওয়াহিদা রেহমানের বাড়িতে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলেন বার্তাবাহক কাদির। সকালের নাশতার টেবিলে মুখোমুখি বসে তাঁকে শুনিয়েছিলেন বাংলাদেশের অগণন নিরস্ত্র মানুষের ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার বিবরণ। বাংলাদেশের নিরস্ত্র নারী-শিশু-বৃদ্ধের ওপর নির্মম নির্যাতনের কথা।

মুম্বাইয়ের ওই সময়ের ব্যস্ততম অভিনেত্রীর সেদিন আরকে স্টুডিওতে ঠিক আটটার মধ্যে পৌঁছানোর কথা থাকলেও কাদিরের এই মর্মস্পর্শী বর্ণনায় আবেগাপ্লুত হয়ে ওয়াহিদা ফোন করে শুটিং পর্যন্ত বাতিল করে দিয়েছিলেন।

দুপুরের খাবারের শেষে মহারাষ্ট্রের সেই সময়ের গভর্নর নবাব আলী ইয়ার জংয়ের সঙ্গে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় সাক্ষাতের ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলেন তিনি। গভর্নর আলী ইয়ার জং ছিলেন একজন বিদ্যানুরাগী পণ্ডিত মানুষ। মহারাষ্ট্রে বাংলাদেশ এইড কমিটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের সময় বিভিন্নভাবে বাংলাদেশকে সহায়তা করেছিলেন তিনি।

ওয়াহিদা রেহমান স্বল্পতম সময়ে একে একে মুম্বাই চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি, মুম্বাই হাইকোর্ট বারের ব্যারিস্টার, প্রখ্যাত ইংরেজি সাপ্তাহিক ব্লিৎজসহ মুম্বাইয়ের নামকরা সব সংবাদপত্রের সম্পাদকদের কাছে ফোন করে ও সশরীরে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত তৈরির জন্য ছুটে গিয়েছিলেন।

অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গড়ে তোলার বিষয়টি ছাড়াও ওই সময়ে মুম্বাইয়ের চলচ্চিত্রাঙ্গনের সবাইকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সহায়তায় এগিয়ে আসতেও অনুপ্রাণিত করেছিলেন তিনি।

ওয়াহিদা রেহমান চলচ্চিত্রে শুরুতে জুটি বেঁধেছিলেন গুরু দত্তের সঙ্গে। গুরু দত্তের ক্ল্যাসিক বলে বিবেচিত ‘কাগজ কা ফুল’ (১৯৫৯), ‘সাহেব বিবি আউর গোলাম’ ছবির পরে ওয়াহিদা হয়ে উঠেছিলেন চলচ্চিত্র-দর্শকদের মানস-প্রতিমা। অভিনয় আর সৌন্দর্যে বিমোহিত চলচ্চিত্রবোদ্ধারা তাঁকে বলতেন ‘ক্ল্যাসিকাল বিউটি’। এরপর ‘গাইড’ (১৯৬৬) ছবিতে দেব আনন্দ-ওয়াহিদা জুটির রসায়ন পরবর্তী সময়ে যেসব ছবির জন্ম দিয়েছিল, তা আজও এ উপমহাদেশের চলচ্চিত্র-দর্শকের মনে এক অবিস্মরণীয় প্রভায় শাশ্বত হয়ে আছে।

সত্যজিৎ রায়ের ‘অভিযান’ চলচ্চিত্রে ওয়াহিদা রেহমান বিখ্যাত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে অভিনয় করেন।

ওয়াহিদা রেহমান ১৯৭১ সালে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। অন্যান্য পুরস্কারের মধ্যে ১৯৬৬ ও ১৯৬৮ সালে ফিল্ম ফেয়ার, ১৯৯৪ সালে ফিল্ম ফেয়ার আজীবন সম্মাননা পুরস্কার, ১৯৭২ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কার এবং ২০১১ সালে পদ্মভূষণ পুরস্কার লাভ করেন।

ওয়াহিদা রেহমান ১৯৩৮ সালের আজকের দিনে (৩ ফেব্রুয়ারি) অন্ধ্রপ্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন।

লেখক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

Leave A Reply

Your email address will not be published.