Take a fresh look at your lifestyle.

ইস্তানবুলের পথে

0

অধ্যাপক মোঃ আব্দুল হাই :

যে সমুদ্র সব থেকে সুন্দর
তা আজও আমরা দেখিনি।
সব থেকে সুন্দর শিশু
আজ ও বেড়ে ওঠে নি
আমাদের সব থেকে সুন্দর দিনগুলো
আজও আমরা পাইনি।
মধুরতম যে-কথা আমি বলতে চাই
সে কথা আজও আমি বলিনি।
(জেলখানার চিঠি-নাজিম হিকমত)
অনুবাদ-সুভাষ মুখোপাধ্যায়)
যৌবনে এই কবিতা পড়ে স্বপ্নাবিষ্ট অসংখ্য যুবকের মত আমিও কল্পনায় নাজিম হিকমতের ইস্তানবুলে নিজেকে প্রতিস্থাপন করেছি। সুলতান সুলেমান সিরিয়াল দেখে অটোম্যান স্বপ্নে বিভোর হয়ে কল্পনায় ইস্তানবুলের পথে ইতিহাসের ধুলো উড়িয়েছি। আর অতিসম্প্রতি নোবেলজয়ী ওরহান পামুকের উত্তর আধুনিকতায় মুগ্ধ হয়ে পামুকের স্পর্শ পেতে ইস্তানবুলে যেতে চেয়েছি। তাই ইস্তানবুল ভ্রমণের আমন্ত্রণ পেয়ে বিনা বাক্য ব্যায়ে তা গ্রহণ করলাম।
ডিসেম্বরের কুয়াশামাখা একরাতে আমাদের ভ্রমণের শুরু। হযরত শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে দোহা বিমানবন্দরের ট্রানজিট হয়ে কাতার এয়ারের বিমানটি যখন ইস্তানবুলের সাবিহা গোকিন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে পৌঁছালো, স্থানীয় সময় তখন সকাল ১১ টা। কাস্টমস- ইমিগ্রেশনের ঝামেলা শেষ করে যখন বেরোলাম, বাইরে তখন ঝকঝকে মেঘমুক্ত আকাশ। কিন্তু কনকনে ঠাণ্ডা মনে করিয়ে দিল আমরা স্বদেশ থেকে অনেক দূরে অন্যরকম আবহমন্ডলে এসে পড়েছি। কোথায় যাব ভাবতেই দেখলাম প্ল্যাকার্ড হাতে গাইড মেহমেত দাঁড়িয়ে আছে। সূচালো নাক, আয়তাকার চিবুক, উজ্জ্বল বাদামি গাত্রবর্ণের দীর্ঘদেহী সুদর্শন গাইডের চেহারা তুর্কিদের শারীরিক সৌন্দর্যের কথা মনে করিয়ে দিল। আপাতত আমাদের গন্তব্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মার্সিডিজ বেঞ্জ বাসে করে হোটেল টাইটানিক। বিমানবন্দর থেকে হোটেল পর্যন্ত দু’পাশের ফুল শোভিত পরিচ্ছন্ন রাস্তা, অনুচ্চ অথচ পরিকল্পিত আবাসনের সাড়ি, উচু নিচু ল্যান্ডস্কেপিং যে কাওকে মুগ্ধ করার মত। যাত্রাপথে বসফরাস ব্রিজের মাধ্যমে এশীয় অংশ থেকে ইউরোপীয় অংশে প্রবেশের গাইডের ঘোষণায় সবাই উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল। বলে রাখা ভাল বসফরাস প্রণালী ইস্তানবুল শহরকে এশীয় ও ইউরোপীয় অংশে বিভক্ত করেছে। আর এই চ্যানেলটিই ইস্তানবুলকে মারমারা সি ও ব্ল্যাক-সি’র সঙ্গে সংযুক্ত করেছে।
ইতিহাস ঐতিহ্যের শহর ইস্তানবুল। তুরস্কের বৃহত্তম শহর ইস্তানবুল। তুরস্কের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র ও ইস্তানবুল। পুরনো নাম কনস্টান্টিনোপল। অতীতে এটি ওসমানীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল। তাই ইতিহাস ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক কারনে ইস্তানবুল শহর সবসময় পর্যটকদের কাছে স্বপ্নের গন্তব্য। আর সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের তুলনায় টার্কিশ লিরার দরপতনের কারণে ইস্তাম্বুলে যেন পর্যটকের ঢল নেমেছে।
হোটেলে চেক ইন ও লাঞ্চ শেষে দীর্ঘ ভ্রমণ ক্লান্তি কে উপেক্ষা করে বিকেলটাকে রাঙাতে গাইড মেহমেতের সঙ্গে আমরা নগর দর্শনে বেরিয়ে পড়লাম। প্রথম গন্তব্য টাকসিম স্কয়ার। ইস্তানবুলের ব্যস্ততম এলাকা। যা কিনা বুলেভার্ড এর কেন্দ্রে অবস্থিত। দেশী-বিদেশী পর্যটকদের পদভারে সারাক্ষণ মুখরিত থাকে। টাকসিম স্কয়ারের খ্যাতি তার ট্রাডিশনাল খাবারের দোকান, ফুলের দোকান, সর্বোপরি শপিং মলের জন্য। এখানে বাস স্টপ থেকে এস্কেলেটারে স্কয়ার অভিমুখে যাওয়ার সময় সফরের প্রথম বিপত্তিটা ঘটলো। জনাকীর্ণ এস্কেলেটারে সহযাত্রী সহকর্মীর ডলারসহ পাসপোর্ট খোয়া গেল। এস্কেলেটারের দুপাশে দণ্ডায়মান রুশ ললনাদের মোহময় রূপে চোখ আটকে যাওয়ার কারণে এমনটা হয়েছিল কিনা বোঝা গেল না। তবে এখানে এটা স্বাভাবিক ঘটনা। উল্লেখ্য যে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো থেকে কাজের খোঁজে অনেক অভিবাসী তরুন-তরুনীর আগমন ঘটে এখানে। তাই এখানে আপনাকে সাবধানে চলতে হবে। তবে মূল স্কয়ারে গিয়ে সবার মন ভাল হয়ে গেল। নানা বর্ণ ও ভাষাভাষী পর্যটকদের ভিড়ে এখানে নিজেকে বিশ্বনাগরিক মনে হলো। স্কয়ারটির মূল আকর্ষণ প্রশস্ত চত্বরের মাঝখানে স্থাপিত তার ভাস্কর্যের জন্য। তুরস্কের স্বাধীনতাযুদ্ধের স্মৃতিতে বিখ্যাত ভাস্কর পিট্রো ক্যানোনিকা এই স্মৃতিস্তম্ভটি স্থাপন করেন। টাকসিম স্কয়ারের অম্ল মধুর স্মৃতি নিয়ে আমরা রাতে হোটেলে ফিরলাম।
ইস্তানবুল ভ্রমণের দ্বিতীয় সকাল শুরু হলো ইস্তানবুল তথা তুরস্কের সম্ভবত সবচেয়ে বিখ্যাত এবং আইকনিক ভবন আয়া সোফিয়া (Hagia Sophia) দর্শনের মধ্য দিয়ে। টিকেট সংগ্রহ ও ভিতরে প্রবেশের দীর্ঘ সারি অতিক্রম করে ভিতরে প্রবেশ করলে যে কোন দর্শনার্থী এখানে অভিভূত হবেন। অভিভূত হওয়ার কারণ দু’টি। প্রথমতঃ এর বিশালত্ব; দ্বিতীয়তঃ একই ভবনে চার্চ এবং মসজিদের প্রতীক সংবলিত কারুকার্যের জন্য। সম্রাট বাইজেন্টাইন অনুমোদিত এই ভবন ৫৩৭ সাল পর্যন্ত চার্চ হিসেবে পরিচিত ছিল। ১৪৫৩ সালে কনস্টান্টিনোপল পতনের পর অটোম্যান শাসক ফাতিহ সুলতান মেহমেদ গির্জাকে মসজিদে রূপান্তর করেন। নামকরণ হয় Imperial Mosque । এই ভবনের সমৃদ্ধ ইতিহাস, ধর্মীয় গুরুত্ব, স্থাপত্য কৌশল ও অসাধারণ সৌন্দর্যের জন্য ১৯৩৫ সালে মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক এই মসজিদকে মিউজিয়াম ঘোষণা করেন। তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ২০২০ সালে এটিকে আবার মসজিদ হিসেবে ঘোষণা করেন। তবে নামাজের জন্য সংরক্ষিত এলাকা ব্যতিরেকে ভবনের অন্যান্য স্থানে নামাজের সময় ব্যতীত দর্শনার্থীদের জন্য এখনো উন্মুক্ত থাকে। পুরো ভবনটি পর্যটকদের দেখার জন্য তিন ভাগে বিভক্ত। নিচের তলা, উপরের তলার গ্যালারি ও বাইরের ভবন। গ্যালারি থেকে পুরো মসজিদটি (ক্যাথেড্রাল) দৃশ্যমান হয়। নিচের তলায় মসজিদ ও ক্যাথেড্রালের প্রধান অংশ এবং সোনা, রুপা, মার্বেল, টেরাকোটা খচিত মোজাইক, পর্যটকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ। বাইরের ভবনে সুলতান সুলেমান এর স্ত্রী হুররাম সুলতানের স্নানাগার ও আপনার মনোযোগ কাড়বে। গ্রীষ্মে সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা এবং শীতে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। দর্শনী প্রায় ৯ ইউরো।
পরবর্তী গন্তব্য আয়া সোফিয়া থেকে হাঁটা দূরত্বের আরেকটি আইকনিক স্থাপত্য সুলতানমেট মসজিদ বা নীল মসজিদ যা Blue Mosque নামে পরিচিত। সুলতান প্রথম আহমেদের সময় ১৬০৯ সালে মসজিদটির নির্মান শুরু হয়। গ্রানাইট ও মার্বেলের তৈরি কলাম দ্বারা নির্মিত মসজিদের অভ্যন্তরে যে টাইলসগুলো ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলোর জন্য মসজিদের অভ্যন্তরভাগ কে অনেকটা নীল বর্ণের দেখায় । এজন্য মসজিদটির নামকরণ হয়েছে Blue Mosque। জাঁকজমকপূর্ণ ও ইসলামিক নিদর্শনে পরিপূর্ণ মসজিদটি ইস্তানবুলের অবশ্য দ্রষ্টব্য। সকাল ন’টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যে কেউ এখানে প্রবেশ করতে পারেন । কোন দর্শন ফি নেই। প্রবেশপথে আপনার জুতা খুলতে ভুলবেন না । মহিলাদের ক্ষেত্রে হিজাব পরিধেয় এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে থ্রি-কোয়ার্টার জাতীয় পোশাক বর্জনীয়। সুলতানমেট স্কয়ারের বিস্তীর্ন চত্বর থেকে শুরু করে মসজিদটি সব সময় পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত থাকে।
শেষ বিকেলের তৃতীয় গন্তব্য টপকাপি প্রাসাদ। প্রায় ৪০০ বছর ধরে অটোম্যান শাসনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল এই প্রাসাদ। চারটি পৃথক উঠোনের সমন্বয়ে গঠিত প্রাসাদ কমপ্লেক্সটি Blue Mosque এর অদূরে অবস্থিত। বিশাল প্রাসাদ তোরণ দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলে প্রথমভাগে প্যারেড কোর্ট ও আয়া ইরানি নামের গির্জা চোখে পড়বে। দ্বিতীয়ভাগে একটি সুন্দর পার্ক, কিছু প্যাভিলিয়ন , রাজকীয় কিচেন, বড় কিছু হলরুম, বিচারকক্ষ, সুলতানের শয়ন কক্ষ ও হেরেম রয়েছে। তৃতীয় ভাগে সুলতানের রাজকীয় ট্রেজারি ও সভা কক্ষ রয়েছে। চতুর্থ ভাগে বাগান ও টেরাস চোখে পড়বে । তবে আরো একটি কারণে টপকাপি প্রাসাদ তুরস্ক তথা মুসলিম বিশ্বের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুলতান সুলেমান পবিত্র কাবা শরীফ সংস্কার করেছিলেন। তাই সেই সময়ের কাবা শরীফের গুরুত্বপূর্ণ কিছু নিদর্শন ও চাবি সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত আছে। এছাড়া এখানে হযরত মুহাম্মাদ (সা:) এর দন্ত মোবারক , পায়ের ছাপ , হযরত ফাতেমা (রা:) ও হযরত হুসাইন (রা:) এর ব্যবহৃত পোশাক, হযরত মুসা (আ:) এর অলৌকিক লাঠি ও সাহাবীদের তলোয়ার সংরক্ষিত রয়েছে। স্বল্পালোকিত কক্ষে এসব দেখতে গিয়ে আপনি শিহরিত হবেন। নিরাপত্তাজনিত কারণে এখানে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার ও ছবি তোলার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। গ্রীষ্মে সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যে ৭টা এবং শীতকালে সকাল ৯’টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রাসাদটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। প্রবেশ মূল্য প্রায় চার ইউরো।
আমাদের মত আপনাদেরও পরবর্তী গন্তব্য হতে পারে বসফরাস স্ট্রেইট। ইস্তানবুল আসবেন অথচ বসফরাস ভ্রমণ করবেন না এটি হতেই পারেনা । গাইড মেহমেতের ঠিক করা বাসে করে এক ঝলমলে সকালে Eminonu Jetty তে আমরা চলে আসলাম । একটি দ্বিতল লঞ্চে আমাদের বসফরাস ক্রুজ শুরু হল। গাইড মেহমেতের ধারাবর্ণনা, নীল জলের হাতছানি, অ্যালবাট্রস ও সি বার্ডস এর চঞ্চল বিচরণ, ডলফিনের ডাইভ, দু’পাশের অনুচ্চ পাহাড়ি ঢালে গড়ে ওঠা সারি সারি আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য আপনাকে মোহাবিষ্ট করবেই। গুগলে ইস্তানবুল লিখে সার্চ দিলে যে দুটি সেতু আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠবে , বসফরাস ক্রুজে এসে সে দুটো সেতুকে চোখের সামনে দেখে আপনি আবেগ তাড়িত হবেন। উল্লেখ্য বিশ্বের ইতিহাসে তুরস্ক হলো সেই দেশ যা দুটি মহাদেশকে ধারণ করেছে। আর এটি সেই জলরাশি যার এক পাশে ইউরোপীয় ভূখণ্ড ও অন্যপাশে এশিয়া। এটি মূলত একটি ন্যারো সি চ্যানেল যা মারমারা ও ব্ল্যাক সি তে গিয়ে মিশেছে। তবে রাতের বসফোরাসের সৌন্দর্য আপনাকে একটা অপার্থিব অনুভূতি এনে দিবে। বসফরাস ক্রুজ শেষে সাগরের পাশে উন্মুক্ত রেস্তোরাঁয় হরেক রকমের সী ফিস ও কাবাব সহযোগে দুপুরের ভোজন সেরে আমরা গ্র্যান্ড বাজার অভিমুখে রওনা দিলাম।
আপনার স্যুভেনির ক্রয়ের নতুন দিগন্ত হতে পারে গ্র্যান্ড বাজার। পৃথিবীর সব বাজারের থেকে ব্যতিক্রমি এই বাজারের সম্পূর্ণ ছাদ টাইলসে ঢাকা। বাজারের ভিতরে ধূমপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ১৪৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বাজারে ২২ টি প্রবেশ পথ রয়েছে। ৬১টি গলিতে দোকানের সংখ্যা চার হাজার। শপিং শেষে নির্ধারিত প্রবেশ পথ খুঁজে পেতে এখানে আপনাকে ঘামতে হবে। তাই দলছুট হবেন না। গ্র্যান্ড বাজারের প্রধান আকর্ষণ তার রং বেরঙের সিরামিকের তৈজসপত্র । এছাড়াও কার্পেট, সিল্কের কাপড়, অলংকার , চা এবং মসলার জন্য ও বিখ্যাত। এই বাজারের বিশালত্ব, অভিনবত্ব, বর্ণিল আয়োজন এবং দোকানিদের আতিথেয়তা আপনাকে মুগ্ধ করবেই। তবে ক্রয়ের পূর্বে দাম দর করতে ভুলবেন না। সোম থেকে শনিবার সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত খোলা থাকলেও, ছয়টার পর এখানে প্রবেশের অনুমতি নেই। তাই গাইডের বেঁধে দেওয়া সময় মেনে অতৃপ্ত মনে এই শপিং স্বর্গ থেকে আমরা বের হলাম।
প্রকৃতপক্ষে পুরো ইস্তাম্বুল শহর যেন ইতিহাসের জীবন্ত মিউজিয়াম। তাই হাতে সময় থাকলে আপনার জন্য আরও যেসব গন্তব্য অবশ্য দর্শনযোগ্য হতে পারে সেগুলো হলো: সুলেমানিয়া মসজিদ, বেসিলিকা সিস্টার্ন, ডোলমাবাহসে প্যালেস, ইসতিকলাল এভিনিউ, গ্যালাটা টাওয়ার, হিপোড্রম স্কয়ার, পেরা মিউজিয়াম প্রভৃতি। এইসব ঐতিহাসিক স্থাপনা দর্শনের সুখস্মৃতি পরবর্তী সারা জীবন আপনাকে জীবনীশক্তি জোগাবে।
কীভাবে যাবেন ইস্তানবুল
বাংলাদেশ থেকে সৌদি, টার্কিশ ,এমিরেটস বা কাতার এয়ারে যেতে পারেন তুরস্কের ইস্তানবুলে। বিমান ভাড়া মৌসুম ও চাহিদা ভেদে ৩৫,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে।
কখন যাবেন
জুন থেকে আগস্ট মাস এখানে পিক সিজন। এসময়ের ভীড় এড়াতে চাইলে শরৎকালে (সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর) অথবা বসন্তকালে (মার্চ থেকে মে) ইস্তানবুল থেকে ঘুরে আসতে পারেন। এই দুই সময়ে আবহাওয়া অনেক সুন্দর থাকে। শরত ও বসন্তের গড় তাপমাত্রা ১০ থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করে।
কি ধরনের পোশাক সঙ্গে নিবেন
শরৎ ও বসন্তে হালকা শীতের পোশাক সঙ্গে নিতে পারেন। তবে শীতকালে (ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) গেলে ভারী শীতের পোশাক সঙ্গে নিতে ভুলবেন না।
কিভাবে ভিসার আবেদন করবেন
ভিসার জন্য বারিধারায় অবস্থিত টার্কিশ এম্বাসিতে যোগাযোগ করতে হবে। সরকারি চাকরিজীবী হলে অবশ্যই এনওসি লাগবে। তবে ইস্তানবুলে যাওয়ার জন্য ই- ভিসার ব্যবস্থা আছে। সেক্ষেত্রে সাথে সেনজেন ভিসা বা ভ্যালিড ইউ এস ভিসা লাগবে। এখানে যাদের রেসিডেন্স পারমিট নেই, তাদের ক্ষেত্রে বিমানের রিটার্ন টিকেট ও হোটেল বুকিং এর প্রমাণপত্র সাথে দিতে হয়। এক্ষেত্রে খরচ হতে পারে ৯০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা। অনলাইনে মাস্টার কার্ড বা ভিসা কার্ড থাকলে তখনই পেমেন্ট করে দেয়া যাবে। আর ফিরতি মেইলে ভিসা চলে আসবে। সেটা ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিলেই হবে। ভিসার মেয়াদ থাকে ১৮০ দিন। তবে একনাগাড়ে ৩০ দিনের বেশি থাকা যায়না।
কোথায় থাকবেন
সুলতানমেট স্কয়ার, তাকসিম স্কয়ার ও বেয়োগলুতে থাকার জন্য বেশ কিছু হোটেল রয়েছে। একটু খুঁজলে ঢাকা-কক্সবাজারের চেয়ে সস্তায় হোটেল পেয়ে যাবেন। অ্যাপার্টমেন্ট হোটেল ও পাওয়া যায় । যেখানে নিজে রান্না করে খেতে পারবেন।
কি খাবেন
খাবারের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিতি আছে ইস্তানবুলের। খাবারের দাম বেশ কম। আর মুসলিম দেশ হওয়ার কারণে হালাল খাবার পেতে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। টাকসিম স্কয়ার, ইসতিকলাল স্ট্রিটে বেশকিছু ভালো মানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের কাবাব, বাকালাভা ও টার্কিশ বিভিন্ন ডিলাইট খেতে ভুলবেন না। গ্র্যান্ডবাজারে চা খাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করবেন না।
অন্যান্য প্রয়োজনীয় টিপস
#টুরিস্টদের জন্য ইস্তানবুল কার্ড নামে একটা ট্রান্সপোর্ট কার্ড পাওয়া যায়। যা দিয়ে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে অনেক কম খরচে ঘুরে বেড়াতে পারবেন।
#ট্যাক্সিতে মিটার চালু আছে কিনা চেক করে নিতে ভুলবেন না। মিটার বিহীন ট্যাক্সিতে উঠবেন না।
#প্রতি শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত টিকেট ও কোনরকম ফি ছাড়াই পেরা মিউজিয়ামে ঘুরে বেড়াতে পারবেন।
#বসফরাস স্ট্রেইটের উস্কুদার থেকে সূর্যাস্ত দেখার দৃশ্য মিস করবেন না।
#মুসলিম দেশ হিসেবে তুরস্কের নিজস্ব সংস্কৃতি, আচরণ ও পোশাকের ব্যাপারে সংবেদনশীল আচরণ বজায় রাখুন।

 

লেখক: অধ্যাপক মোঃ আবদুল হাই
ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ
সরকারি আজিজুল হক কলেজ
বগুড়া।

Leave A Reply

Your email address will not be published.