Take a fresh look at your lifestyle.

প্রশংসায় ভাসছেন অদম্য তামান্না

0

প্রতিবেদক
এক পায়ে লিখে টানা চতুর্থবার জিপিএ-৫ পাওয়ায় তামান্না আক্তার নূরাকে অভিনন্দনপত্র পাঠিয়েছেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। বুধবার সন্ধ্যায় যশোর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক অসিত কুমার সাহার মাধ্যমে মন্ত্রীর সাক্ষরিত অভিনন্দনপত্রটি তামান্নার হাতে তুলে দেওয়া হয়। তামান্নার উচ্চশিক্ষা ও পরবর্তী স্বপ্ন পূরণে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সবসময় পাশে থাকবে বলে অভিনন্দন পত্রে উল্লেখ করেছেন মন্ত্রী। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ফোন করে তামান্নাকে অভিনন্দন জানান। একই সাথে পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দেন। এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের পর মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান তামান্নার বাড়িতে গিয়ে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য শুভেচ্ছায় সিক্ত করছেন। তার বাড়িতে অতিথিদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
তামান্না নূরা বলেন, আমার জীবনে বড় প্রাপ্তি যে; সরকারের এতো বড় পদের মন্ত্রী আমাকে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। আমার অনেক ভালো লাগছে। আগে নিজেকে অসহায় মনে হলেও এখন নিজেকে একা মনে হচ্ছে না। দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সবাই আমার পাশে রয়েছে। আমাকে শুভেচ্ছা পত্র পাঠানোর জন্য মাননীয় মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
তামান্নার বাবা রওশন আলী বলেন, তামান্নার অদম্য ছুটে চলার পথে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দিপু মনিসহ সরকারের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী খোঁজ খবর নেওয়ায় পাশাপাশি তামান্না স্বপ্ন পূরণের প্রতিশ্রুতিতে মেয়ের মতো আমিও খুশি। মেয়ে খুব কষ্ট করেছে। তার স্বপ্ন পূরণে সবাই এগিয়ে আসছে। যা আমি জীবনে কল্পনাও করিনি। খুশিতে আমার বুকটা ভরে যাচ্ছে। তামান্না যেন তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে। সেই জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।
জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক অসিত কুমার সাহা বলেন, তামান্না নূরা আমাদের সমাজের অনুকরণীয়। সেইসঙ্গে অনুপ্রেরণার অনন্য উদাহরণ। তামান্নার স্বপ্ন পূরণে পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এবার সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ মহোদয় তাকে ফুলের শুভেচ্ছা জানানোর সাথে তার পক্ষে অভিনন্দনপত্র দেওয়া হয়েছে। পত্রটি পেয়ে তামান্নাসহ তার পরিবার খুব খুশি ও আনন্দিত। তামান্নার এই প্রতিবন্ধীকতা দূর করতে আগেও সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা, হুইল চেয়ার, বিভিন্ন আর্থিক সহায়তা এবং শিক্ষাবৃত্তিও দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, বুধবার সন্ধ্যায় তামান্নাকে দেখতে যান মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড যশোরের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আহসান হাবীবের নেতৃত্বে বোর্ডের সচিব অধ্যাপক মো. আবদুল খালেক সরকার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মাধব চন্দ্র রুদ্র, কলেজ পরিদর্শক কে এম গোলাম রব্বানি। তারা তামান্নাকে ফুলের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি টানা চতুর্থবার জিপিএ-৫ পাওয়ায় তাকে মিষ্টিমুখ করান।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া আলীপুরের রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন শিল্পী দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে বড় তামান্না নূরা। তামান্না যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। রোববার প্রকাশিত ফলাফলে এসএসসির মতো এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি। এর আগে তামান্না ২০১৯ সালে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া জনাব আলী খান মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। একই ফল করেছিলেন পিইসি ও জেএসসিতেও। বাবা রওশন আলী ঝিকরগাছা উপজেলার ছোট পৌদাউলিয়া মহিলা দাখিল মাদরাসার (ননএমপিও) শিক্ষক। মা খাদিজা পারভীন গৃহিণী। ছোট বোন মুমতাহিনা রশ্মি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ভাই মুহিবুল্লা তাজ প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। গত ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করাসহ দুটি স্বপ্নের কথা জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন তামান্না। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ ফেব্রæয়ারি সোমবার বিকেল ও সন্ধ্যায় পৃথক দুটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে অডিওকলে ফোন দিয়ে তামান্নাকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহেনা। একইসঙ্গে দুই বোন তামান্নার স্বপ্ন পূরনে যেকোনো সহযোগিতার আশ্বাস দেন। একই সাথে প্রধানমন্ত্রী তামান্নাকে তার স্বপ্ন পুরনে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে আবেদন করার পরামর্শ দেন। সেই পরামর্শে বুধবার সকালে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে আবেদন করেছেন তিনি। এছাড়া মঙ্গলবার বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি তামান্নার সঙ্গে দীর্ঘ ২৪ মিনিট ৩০ সেকেন্ড কথা বলেন। শিক্ষামন্ত্রী তামান্নাকে ভার্সিটিতে মাইক্রোবায়োলোজি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করার পরামর্শ দেন এবং খুব তাড়াতাড়ি শিক্ষামন্ত্রী তামান্নার সাথে দেখা করতে যশোরে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.