Take a fresh look at your lifestyle.

জন্মদিনে স্মরণ : ফজলে লোহানী

মিডিয়ার ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের জনক তিনি, আজও তার গড়ে তোলা কাঠামোতেই ঘুরপাক খাচ্ছে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের সব ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান

0

বাবলু ভট্টাচার্য :

দেখতে লোকটা মোটেও সুদর্শন ছিলেন না। চেহারা এবড়ো-থেবড়ো, মাথায় পরচুলা। কিন্তু আশ্চর্য মায়াকাড়া ছিল তার চাহনি। তারচেয়ে চমৎকার ছিল তার কথা বলার ভঙ্গি আর অভিব্যক্তি। তিনি ফজলে লোহানী।

সাংবাদিক-সাহিত্যিক-চলচ্চিত্র প্রযোজক এতসব পরিচয় ঢাকা পড়ে গিয়েছিল তার ‘যদি কিছু মনে না করেন’-এর আড়ালে। হ্যাঁ, টিভি মিডিয়ার ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের জনক তিনি। বাংলাদেশের টিভি মিডিয়ার প্রথম জনপ্রিয় উপস্থাপক। আজও তার গড়ে তোলা কাঠামোতেই ঘুরপাক খাচ্ছে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের সব ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান।

তিনি ফজলে লোহানী।

তার বাবা আবু লোহানী ছিলেন সেই সময়ের সুপরিচিত সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। মা ফাতেমা লোহানী ছিলেন কলকাতা করপোরেশন স্কুলের শিক্ষিকা।

ফজলে লোহানী সিরাজগঞ্জ বিএল স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএসসি পাস করেন। ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে এমএসসিতে ভর্তি হলেও চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেননি।

ভারত বিভাগের পর তিনি অন্য কয়েকজনের সাথে ঢাকা থেকে সাপ্তাহিক পূর্ববাংলা নামে একটি পত্রিকা প্রকাশের সাথে যুক্ত হন। ১৯৪৯ সালে তার সম্পাদনায় ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয় সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক মাসিক পত্রিকা ‘অগত্যা’।

পঞ্চাশের দশকে ফজলে লোহানী ইংল্যান্ড চলে যান এবং লন্ডনের বিবিসি’র ওয়ার্ল্ড সার্ভিসে চাকরি করেন।

ষাটের দশকের শেষ দিকে বাংলাদেশে ফিরে এসে ফজলে লোহানী সাংবাদিকতা ও লেখালেখিতে আত্মনিয়োগ করেন। এ সময় মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন এবং মওলানা ভাসানীর সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৭ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ টেলিভিশনে শিক্ষা ও বিনোদনমূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপস্থাপনা ও পরিচালনা করে সুপরিচিত হয়ে উঠেন। তবে তুমুল জনপ্রিয়তা পান নিজের পরিকল্পনা ও পরিচালনায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘যদি কিছু মনে না করেন’ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করে। অনুষ্ঠানটি ১৯৭৯ সালে থেকে তার মৃত্যুর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত ছিল জনপ্রিয়তার শীর্ষে।

ফজলে লোহানীর এই টিভি রিপোর্টিং দেখার জন্য লক্ষ লক্ষ টিভি দর্শক বিপুল আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতেন। বিশ্বখ্যাত টিভি রিপোর্টারদের মতোই গভীর অভিব্যক্তি নিয়ে হৃদয়ছোঁয়া ভঙ্গিমায় তার করা টিভি রিপোর্টিং মানুষকে কখনো হাসাতো, কখনো কাঁদাতো, কখনোবা করে তুলতো বেদনা ভাড়াক্রান্ত কিংবা ক্ষুব্ধ।

এসিড-নিক্ষেপের ভয়াবহতা নিয়ে সচেতনতার শুরুটা তাঁর হাত ধরেই। বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধেও তিনি জনমত তৈরি করেন। ফজলে লোহানী লেখক হিসেবে গল্প আর প্রবন্ধ লিখতেন। ‘পেনশন’ নামে একটি সৃজনশীল চলচ্চিত্রও তিনি প্রযোজনা করেন।

ফজলে লোহানী ১৯২৮ সালের আজকের দিনে (১৩ মার্চ) সিরাজগঞ্জ জেলার কাউলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

লেখক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

Leave A Reply

Your email address will not be published.