Take a fresh look at your lifestyle.

জন্মদিনে স্মরণ : শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়

0

বাবলু ভট্টাচার্য :
বিংশ শতাব্দীর দুইয়ের দশকের শুরুতে একঝাঁক তরুণ কবি ও কথাকারের প্রচণ্ড আবির্ভাবের সময়কালটি ‘কল্লোল যুগ’ নামে চিহ্নিত হয়ে আছে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে। ‘কল্লোল’ একটি সাহিত্য পত্রিকার নাম।

কল্লোলের প্রধান বৈশিষ্ট্যই ছিল রবীন্দ্র-বিরোধিতা। কারণ, তখন মনে করা হতো ‘রবীন্দ্রনাথই বাংলা সাহিত্যের শেষ, তাঁর পরে আর পথ নেই। তিনিই সবকিছুর চরম পরিপূর্ণতা’। কল্লোলের কবি-সাহিত্যিকেরা এই ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে খুঁজেছিলেন নতুন এক সাহিত্য, যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে বাঙালি সমাজের যন্ত্রণা আর হতাশাকে ফুটিয়ে তুলবে। তৎকালীন পাশ্চাত্য সাহিত্যের প্রভাবও ছিল এই ভাবনার পিছনে।

শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় সেই তরুণ বিদ্রোহী সাহিত্যিকদের সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁর লেখা ‘কয়লাকুঠি’ গল্পে বাঙালি পাঠক প্রথম জেনেছিল আসানসোল, রানিগঞ্জ অঞ্চলের কয়লাখনিতে কর্মরত কুলিকামিন, সাঁওতাল, বাউড়িদের নিয়তিতাড়িত মর্মান্তিক জীবনচিত্র। যাদের কথা বাংলা সাহিত্যের পাতায় আর কোনও সাহিত্যিক ঠাঁই করে দেননি এতকাল। নামহীন, অন্ত্যজ এই মানুষগুলিকে নিয়েও যে কালজয়ী সাহিত্য রচনা করা যায়, তা প্রমাণ করে দিয়েছিলেন শৈলজানন্দ।

শৈলজানন্দের ডাকনাম ছিল শৈল, ভালো নাম শৈলজা। বাবা ধরণীধর, মা হেমবরণীদেবী ডাকতেন শ্যামলানন্দ বলে। অনেক পরে শৈলজা থেকে শৈলজানন্দ নামকরণ করেছিলেন ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকার সম্পাদক জলধর সেন।

শৈলজানন্দের শিক্ষাজীবন শুরু হয় বোলপুর হাইস্কুলে। তারপর তিনি ভর্তি হন উখরা এন্ট্রান্স স্কুলে। ১৪ বছর বয়সে তাঁর মাতামহ তাঁকে রানিগঞ্জ হাইস্কুলে নিয়ে যান। বছরখানেক সেখানে পড়াশোনার পর দেশের বাড়ি রূপসপুরে ফিরে যান। সেখানে নাকড়াকোঁদা হাইস্কুলে ভর্তি হন। এন্ট্রান্স পরীক্ষা দেওয়ার সময়ে তিনি ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন। সেই অবস্থাতে পরীক্ষা দিয়ে তৃতীয় বিভাগে পাশ করেন।

কাজী নজরুল তখন সিয়ারসোল হাই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র। শৈলজার প্রিয় বন্ধু ছিলেন তিনি। তখন শৈলজানন্দ লিখতেন কবিতা আর নজরুল গল্প। পরে নজরুলের লেখা কবিতা পড়ে আশ্চর্য হয়ে শৈলজানন্দ ঠিক করেন, তিনি লিখবেন গল্প আর নজরুল কবিতা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে নজরুলের সঙ্গে শৈলজানন্দও চেয়েছিলেন সামরিক বাহিনীতে চাকরি নিতে। কিন্তু বাড়ির আপত্তিতে তা আর হয়ে ওঠেনি।

কুমারডুবি কয়লাখনিতে কাজ করার সময়েই একের পর এক গল্প লেখেন শৈলজানন্দ। কয়লাখনির শ্রমিকদের শোষিত জীবন উঠে আসে ওই সব গল্পে। এরপর তিনি কলকাতায় আসেন। শৈলজানন্দ উপন্যাস ও গল্পসহ প্রায় ১৫০টি বই লিখেছেন। এর মধ্যে রয়েছে, ‘বাংলার মেয়ে’, ‘ঝড়ো হাওয়া’, ‘মানুষের মত মানুষ’, ‘ডাক্তার’, ‘রূপং দেহি’, ‘সারারাত’, ‘কয়লাকুঠির দেশ’, ‘নিবেদনমিদং’, ‘চাওয়া পাওয়া’, ‘বন্দী’, ‘ক্রৌঞ্চমিথুন’ ও ‘অপরূপা।’ নজরুলকে নিয়ে লেখেন ‘কেউ ভোলে না কেউ ভোলে’।

এছাড়া রেডিও এবং চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন তিনি। ১৯৪০ সাল থেকে শৈলজানন্দ চলচ্চিত্র পরিচালনা করতে শুরু করেন এবং ১৯৫৭ সাল অবধি দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে মোট ১৬টি ছবি নির্মাণ করেন।

তৎকালীন সাহিত্যনির্ভর বাণিজ্যিক বাংলা ছবির জগতে শৈলজানন্দের মতো গল্প লিখিয়ে পরিচালকেরা সফল হয়েছিলেন অনায়াসে। তাঁর তৈরি ছবিগুলি প্রায় সব ক’টিই ছিল বাণিজ্যসফল, একাধিক বার পুরস্কৃত। যার মধ্যে সবচেয়ে সমাদৃত হয়েছিল ‘নন্দিনী’, ‘বন্দী’, ‘শহর থেকে দূরে’, ‘অভিনয় নয়’ ও ‘মানে না মানা’। যদিও কেবল ‘শহর থেকে দূরে’ ছবিটি ছাড়া আর কোনও ছবির অস্তিত্বই আজ আর নেই।

১৯৭৬ সালের ২ জানুয়ারি, বেলা দুটোয় ইন্দ্র বিশ্বাস রোডের বাড়িতে ৭৫ বছর বয়সে মৃত্যু হয় শৈলজানন্দের।

শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় ১৯০১ সালের আজকের দিনে (১৯ মার্চ) বীরভূম জেলার রূপসীপুরের হাটসেরান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

লেখক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

Leave A Reply

Your email address will not be published.