Take a fresh look at your lifestyle.

জন্মদিনে স্মরণঃ হেনরিক ইবসেন

0

বাবলু ভট্টাচার্য

বিংশ শতকের নাট্যকারদের কাছে তিনি অগ্রদূত। তাদের অনুপ্রেরণা। নাটকের প্রাচীনত্বকে ভেঙে নাটকের গঠনশৈলীতে এনেছেন সারল্য। তাই তাকে আধুনিক নাটকের জনক হিসেবে অভিহিত করা হয়। হেনরিক ইবসেনকে বলা হয় ন্যাচারালিজম বা বাস্তবতাবাদের প্রবক্তা। বার্নার্ড শ প্রথম তার নাটকের সার্থক মূল্যায়ন করে বলেছিলেন– ‘Modern Drama begins with Ibsen’।

ইবসেনের বাবা নুড ইবসেন ছিলেন একজন সফল ব্যবসায়ী এবং মা ম্যারিচেন অ্যাটেনবার্গ ছিলেন চিত্রকলা ও পিয়ানোতে বিশেষ পারদর্শী। থিয়েটার দেখার ব্যাপারে তার বেশ উৎসাহ ছিল। চার সন্তানের মধ্যে ইবসেন ছিলেন সবার বড়।

সাহিত্যচর্চার প্রতি মনোযোগী হয়ে উঠলেন ইবসেন। এইসময় তার হাতে আসে গ্রিক নাট্যকারদের লেখা নাটকের সম্ভার। নাটকগুলো পড়ে ইবসেনের সামনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। ফলে নাটকের প্রতি ধীরে ধীরে তার অনুরাগ বাড়তে থাকে। মনোনিবেশ করলেন নাট্যচর্চায়। তার সাহিত্য বন্ধুদের সহায়তায় প্রকাশিত হলো তার প্রথম নাটকের বই ‘কাতিলিনা’। অল্প কিছুদিনের মধ্যে রচিত হলো দ্বিতীয় নাটক ‘দ্য ভাইকিংস টোম্ব’।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও পড়াশোনায় খুব একটা নিয়মিত ছিলেন না ইবসেন। পড়াশোনার পরিবর্তে সাহিত্যচর্চায় যেন তার উৎসাহ সবচেয়ে বেশি। সাহিত্য চর্চায় মনোনিবেশ করতে গিয়ে পড়াশোনায় ছেদ পড়া শুরু হলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগুলোতে অকৃতকার্য হন। সংসার চালানোর জন্য সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত হন। এসময় সাংবাদিকতার পাশাপাশি নাট্যজগতের সাথেও পরিচিত হয়ে উঠতে শুরু করেন ইবসেন।

এসব অভিজ্ঞতা ও তার সার্থক প্রয়োগ তাকে সাহিত্য জগতে অন্যতম প্রধান নাট্যকার হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে। এ সময় সুসলা থোরমেন নামের এক সুন্দরী নরওয়েজীয় রমণীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ইবসেন। ইবসেনের লেখালেখি জীবনের সাথে যোগ্য সঙ্গিনী হিসেবে স্বামীর পাশে ছিলেন সুসলা।

ইবসেন তার ৩৫ বছর পর্যন্ত ৮টি নাটক লিখেছেন। তার এই নাট্যকর্মে শৈল্পিক ছোঁয়া থাকলেও পরিণত শিল্প সৃষ্টির প্রস্ফুরণ ঘটেনি বলে অনেক শিল্পবোদ্ধার অভিমত। আর তাই অনেকটা হতাশ হয়েই ১৮৬২ সালে ইবসেন নরওয়ে থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসন নিয়ে ইতালিতে বসবাস করতে শুরু করেন। ইতালিতে বসে লেখেন নাটক ‘ব্র্যান্ড’। একজন যাজকের বিয়োগাত্মক ঘটনা নিয়ে নাটকটি রচিত।

দু’বছর পর প্রকাশ করেন নাটক ‘পিয়ার গিন্ট’। এই নাটকটি ইবসেনের নাট্য জীবনের অন্যতম সেরা কাজ বলে অনেকের অভিমত। গ্রিক মহাকাব্যের আধুনিক উপস্থাপন করা হয় নাটকটিতে, মঞ্চে নাটকটিতে সুরারোপ করেন জনপ্রিয় সুরকার এডভার্ড গ্রেগ। পরপর দুটি নাটকই ভীষণ খ্যাতি অর্জন করে। তিনি থিয়েটার পাগল মানুষদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠলেন।

১৮৬৮ সালে ইবসেন চলে গেলেন জার্মানিতে। মিউনিখের এক মঞ্চে তার লেখা ‘দ্য পিলারস সোসাইটি’ নামে সমাজ জীবনের চালচিত্র নিয়ে একটি নাটক মঞ্চস্থ করেন- যা দর্শক মহল থেকে শুরু করে শিল্প মহলে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়। এই নাটকটি পরবর্তীকালে তার নাট্যচর্চায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।

এর ধারাবাহিকতায় তিনি পরবর্তীতে নির্মাণ করেন তার সাড়া জাগানো তিন অঙ্কের নাটক ‘অ্যা ডলস হাউস’। এটি বিশ্বে রচিত বিভিন্ন নাটকগুলোর মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাটক হিসেবে স্থান পেয়েছিল।

১৯৭৯ সালে প্রকাশিত হয় নাটকটি এবং ঐ বছরের ২১ ডিসেম্বর বড়দিন উপলক্ষে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনের রয়েল থিয়েটারে প্রথম মঞ্চস্থ করা হয়। এই নাটকের মধ্য দিয়ে তিনি তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার অন্ধকার দিকগুলোকে তীব্র ভাষায় নিন্দা করেছেন এবং অপূর্ব শৈলীতে নারীদের অবস্থা ও তাদের অধিকারের কথা তুলে ধরেন।

২০০৬ সালে ইবসেনের শততম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশিবার প্রদর্শিত নাটকের সম্মান লাভ করে ‘অ্যা ডলস হাউস’। ২০০১ সালে ইবসেনের স্বাক্ষর সংবলিত ‘অ্যা ডলস হাউস’ নাটকের পাণ্ডুলিপিকে ইউনেস্কো এক ঐতিহাসিক দলিল বিবেচনায় ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার’-এর অন্তর্ভুক্ত করে।

এই নাটকের সাফল্যধারা তার পরবর্তী নাটকগুলোতেও প্রতিফলিত হয়। ১৮৮১ সালে ‘গোস্টস’ এবং ১৮৮২ সালে ‘অ্যান এনিমি অব দ্য পিপল’ নাটক দুটিও দর্শকমহল ও সুধীমহলে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা পায়। এর পরপরই হেনরিক ইবসেনের সাড়া জাগানো নাটকগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হতে থাকে।

১৯০৬ সালের ২৩ মে হেনরিক ইবসেন মৃত্যুবরণ করেন।

হেনরিক ইবসেন ১৮২৮ সালের আজকের দিনে (২০ মার্চ) নরওয়ের উপকূলীয় স্কিয়েন শহরে জন্মগ্রহণ করেন।

লেখক: সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

Leave A Reply

Your email address will not be published.