Take a fresh look at your lifestyle.

জন্মদিনে স্মরণঃ অক্টাভিও পাজ

0

বাবলু ভট্টাচার্য :

দীর্ঘ জীবন একজন কবির ক্ষেত্রে আশির্বাদ এবং অভিশাপ– উভয়ই হতে পারে। আমাদের সমকালে দীর্ঘজীবী কবিদের অভিশাপ আমরা দেখেছি, আমরা চেয়েছি তারা এবার নিজেদের জায়গাটা ছেড়ে দিয়ে সরে দাঁড়ান, কিন্তু তা আমাদের ভুলিয়ে দিতে পারেনি একজন কবির ১৮৬১ থেকে ১৯৪১ অবধি জীবনপথ।

অক্টাভিও পাজ একজন দীর্ঘজীবী কবি। ৮৪ বছর বেঁচে ছিলেন। এর ফল হিসেবে উইলিয়াম ওয়র্ডসওয়র্থ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বা টি. এস. এলিয়টের সঙ্গে তাঁর একটা সমআসন তৈরি হয়ে যায়, শুধু বাঁচার কারণেই।

দীর্ঘ জীবনের ফলেই পাজ সুযোগটা পেলেন ছোট-ছোট গীতিকবিতায় শুরু করে দীর্ঘতর সুররিয়াল কাজগুলোর দিকে যাওয়ার, সেখান থেকে আবার পুনরায় কাজ করার সেইসব গদ্য নিয়ে যেগুলোকে কবিতা বলাই চলে না পরম্পরার দিক থেকে। তাঁর শৈলীর বিবর্তন রীতিমতো আগ্রহোদ্দীপক।

প্রকৃত অর্থেই আত্মসচেতন একজন কবি অক্টাভিও পাজ। কবিতা নিয়েই লিখেছেন প্রচুর কবিতা। হয়তো তিনি ভাবতেন কবিতার ব্যাপারে একটা দার্শনিক হেস্তনেস্ত করতে পারলেই বিশ্বচরাচরে মানুষ নিজের স্থানটা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবে।

ক্যাথলিক বিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবেই তার ধর্মীয় শিক্ষা- ব্যবস্থাকে মেনে না নেয়ার সূচনা। পরে তো বিদ্যায়তনকেই মানতে না পেরে মেহিকোর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করলেন কোনো ডিগ্রী না নিয়ে।

তিনি একজন ডিপ্লোম্যাট ছিলেন। এমনকি ভারতেও কর্মরত ছিলেন। কিন্তু তার ক্ষেত্রে সম্ভবত শেষ প্রশ্নটা প্রাতিষ্ঠানিক সংহিতা ও অনুশাসন মেনে না নেওয়ার।

অক্টাভিও পাজ একজন দ্রোহী, এবং তার কবিতার সামাজিকতা ও একাকীত্ব তার এই স্বভাবে নিহিত। সেইসঙ্গে আছে বৈপরীত্য। যুক্তি এবং আবেগ, সমাজ এবং ব্যক্তি… তার কবিতায় সর্বদাই একে অন্যকে প্রশমিত করে।

পাজের কবিতা এবং গদ্যগুলো তার ব্যক্তিত্বের মতোই অনুপ্রভ। রাজনীতির গন্ধে ভুরভুর। তীব্র আবেগময়। জটিল। নৈতিক এবং নিঃসঙ্গ। ইন্দ্রিয়প্রবণতাকে তিনি মিলিয়ে দেন সুররিয়ালের সঙ্গে এক আশ্চর্য গভীরতায়। সেখানে আবার ফিসফাস দেয় অস্তিত্ববাদ, বৌদ্ধধর্ম, হিন্দুধর্ম, আজটেক শিল্প, এমনকি ফরাসি কিউবিজম।

মেহিকো— এই নামের দেশে জন্মেছিলেন অক্টাভিও পাজ। আর বুঝতে চেষ্টা করেছিলেন নিজের স্বদেশবাসীর মানসিক যন্ত্রণাকে— যা জন্ম নিয়েছিল হিংসা আর অতীতচারিতার সঙ্গমে।

নৈঃশব্দের সঙ্গে মৈত্রী করেননি অক্টাভিও পাজ। করা সম্ভবও নয়। আত্মসমর্পণ করে লোকরঞ্জক কবিতা লেখা যায়। আসলে নৈঃশব্দকে আপনি হয়তো পক্ষপাতশূন্য ভাবেন, কিন্তু সে স্বয়ং এই চরাচরের প্রতিনিধি হতে চায়, কবিকে কোনো সাহায্য দেয় না, কোনো প্রবোধবাক্য শোনায় না। একেবারে তার প্রথমের দিকের লিরিকগুলো থেকেই পাজ যুদ্ধ করেছেন নৈঃশব্দের সঙ্গে। The Bird কবিতায় যেমন আমরা পাই :

A silence of air, light and sky
In this transparent silence
Day was resting :
The transparency of space
Was silence’s transparency.

এই কয়েকটি লাইন বুঝিয়ে দেয় পাজ তার উচ্চারণের কাছে উপশম আশা করেননি, শুধু চেয়েছেন তার নিজের কন্ঠস্বর তার নশ্বরতাকে স্পর্শ করুক। প্রেমের নীরবতা, নির্জনতার নীরবতা, মৃত্যুর নীরবতা… একটু চুরমার হোক তার গলার আওয়াজে। তার গলাই একমাত্র সেটা পেরেছে তার নিজের ভুবনে।

অসামান্য সব কাজের জন্য তিনি ১৯৮১ সালে মিগুয়েল ডি সার্ভেন্তেস পুরস্কার, ১৯৮২ সালে নিওয়েসড্যাট ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ফর লিটারেচার ও ১৯৯০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

পাজ ১৯৯৮ সালের ১৯ এপ্রিল ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

অক্টাভিও পাজ লোজানো ১৯১৪ সালের আজকের দিনে (৩১ মার্চ) ম্যাক্সিকোতে জন্মগ্রহণ করেন।

লেখক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

Leave A Reply

Your email address will not be published.