Take a fresh look at your lifestyle.

পবিত্র রমজানের ইবাদত প্রসঙ্গ 

0
বিল্লাল বিন কাশেম 
রমজান হচ্ছে আরবি বারো মাসের মধ্যে নবম মাস। মুসলিম বিশ্ব তথা মুসলাম সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে এটি সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে সম্মানিত মাস। রোজা শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে দিন। আর আরবিতে এর নাম সাওম বা সিয়াম। যার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে কোনো কাজ থেকে বিরত থাকা। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার এবং সেই সাথে যাবতীয় ভোগ-বিলাস থেকেও বিরত থাকার নাম রোজা। ইসলামের বিধান অনুসারে, প্রতিটি সবল মুসলমানের জন্য রমজানে রোজা রাখা ফরজ বা অবশ্য পালনীয় ইবাদত। পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহপাক এরশাদ করেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের জন্য রোজা/সিমাম ফরজ করা হলো, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তিদের উপর; যাতে করে তোমরা মুত্তাকি/তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ -সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৩।
রমজান রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস। আজ পবিত্র রমজানের প্রথম দিন। রমজানে বান্দার ইবাদত-বন্দেগি প্রার্থনা সহজেই মঞ্জুর হয় আল্লাহর দরবারে। রমজানে পৃথিবীর বুকে আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের ঢল নামে। প্রথম রমজানের এই দিনে আমরা বেশি বেশি এই দোয়া পড়ি। ‘আল্লাহুম্মাঝআ’ল সিয়ামি ফিহি সিয়ামিস সায়িমিন; ওয়া ক্বিয়ামি ফিহি ক্বিয়ামিল ক্বায়িমিন; ওয়া নাব্বিহনি ফিহি আন নাওমাতিল গাফিলিন; ওয়া হাবলি ঝুরমি ফিহি ইয়া ইলাহিল আলামিনা ওয়াফু আন্নি ইয়া আফিয়ান আনিল মুঝরিমিন।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ ! আমার রোজাকে প্রকৃত রোজাদারদের রোজা হিসেবে গ্রহণ করুন। আমার নামাজকে প্রকৃত নামাজিদের নামাজ হিসেবে কবুল করুন। গাফিলতির ঘুম থেকে আমাকে জাগিয়ে দিন। হে জগত সমূহের প্রতিপালক! এদিনে আমার সব গোনাহ ক্ষমা করে দিন। হে অপরাধীদের অপরাধ ক্ষমাকারী, আমার যাবতীয় অপরাধ ক্ষমা করে দিন।’
মনে রাখতে হবে, রোজা বা সাওম তাদের ওপর ফরজ; যারা প্রাপ্তবয়স্ক, স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন ও শারীরিকভাবে রোজা পালনে সক্ষম। যদি কোন ব্যক্তি সফর অবস্থায় থাকেন অথবা অসুস্থতার কারণে রোজা পালনে অক্ষম হন; তবে তিনি রোজা পরে কাজা আদায় করতে পারবেন। আর যদি কোনো ব্যক্তি সুস্থ হয়ে কাজা আদায় করার সুযোগ বা সামর্থ্য ফিরে না পাওয়ার আশঙ্কা করেন, তবে তিনি রোজার ফিদইয়া বা একজন গরীবকে  এক ফিতরার সমান খাবার খাওয়াবেন অথবা প্রদান করবেন।
সুরা-২ বাকারা ১৮৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ এরশাদ করেন,
“রোজা নির্দিষ্ট কিছু দিন। তাই তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অসুস্থ থাকে, বা সফরে থাকে, তাহলে পরে একই সংখ্যক দিন পূরণ করবে। আর যাদের জন্য রোজা রাখা ভীষণ কষ্টের, তাদের জন্য উপায় রয়েছে; তারা একই সংখ্যক দিন একজন গরিব মানুষকে খাওয়াবে। আর যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাড়তি ভালো কাজ করে, সেটা তার জন্যই কল্যাণ হবে। রোজা রাখাটাই তোমাদের জন্যই ভালো, যদি তোমরা জানতে। [আল-বাক্বারাহ ১৮৪]
 রহমত, ইবাদত আর মাগফিরাতের এ রমজান মাসে বেশকিছু ইবাদতে ব্যাপক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রমজানের তারাবি হলো সন্ধ্যাকলীন বিশেষ ইবাদত তথা নামাজ। বিশ্বব্যাপী দীর্ঘ সময়ে পবিত্র কুরআন খতমের মাধ্যমে এ নামাজ আদায় করা হয়। তারাবিহ নামাজের সময় মসজিদে ব্যাপক জনসমাগম হয়। গত দুই বছর বিশ্বব্যাপী লকডাউন পরিস্থিতি অতিবাহিত করছে মানুষ। আল্লাহর রহমতে এ বছর পবিত্র রমজান যথাযথভাবে পালন করতে পারবে বাংলাদেশ তথা বিশ্বের মুসলমানরা। তারাবির যে ঐতিহাসিক ঐতিহ্য তা আবার ফিরে পাবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমান। এ জন্য এখন থেকেই প্রত্যেক মুমিন মুসলমানকে প্রস্তুতি নিতে হবে।
পবিত্র রমজানে ব্যাপক জনসমাগমের মাধ্যমে অনেক ধর্মীয় আলোচনা কিংবা দোয়া অনুষ্ঠান উদযাপিত হয়। বিভিন্ন সংগঠন রমজান শীর্ষক আলোচনা ও ইফতার মাহফিল আয়োজন করে। অনেকে সেহরি রাত্রি নামের অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। এবারের রমজানে এসব অনুষ্ঠান আবারও ফিরে পাবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে রমজানে রোজা রাখা ও আমল করার তৌফিক এনায়েত এনায়েত করুন।
বিল্লাল বিন কাশেম : উপ-পরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, bellal_quashem@yahoo.com

Leave A Reply

Your email address will not be published.