Take a fresh look at your lifestyle.

রোজায় শরীরকে সতেজ রাখা

0

ডা. সাদিয়া মনোয়ারা ঊষা :
শুরু হয়েছে পবিত্র মাহে রমজান। এবার রোজার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ ঘন্টা। কাঠফাটা গরমে শরীরকে সতেজ রাখা বেশ চ্যালেঞ্জিং। আসুন লক্ষ্য রাখি কয়েকটি বিষয়ের প্রতি :
♦️ রোজায় খাওয়া-দাওয়া নিয়ে যে ভুল ধারণাটি সর্বাধিক তা হলো- সেহরি ও ইফতারে বেশি করে খেলে ক্ষুধা দেরিতে লাগবে।
ভাত রুটির মতো ভারী খাবারগুলো আমাদের দেহে হজম হতে ৬-৮ ঘণ্টা সময় লাগে। পরিমান যাইহোক হজমের সময়কাল প্রায় এক। অর্থাৎ পাহাড়প্রমাণ খেলেও নির্দিষ্ট সময় পর আপনার ক্ষুধা লাগবেই। তাই বেশি খেলে ক্ষুধা দেরিতে লাগবে এই বিষয়টি একেবারেই সঠিক নয় ।
♦️ খাবার অন্ত্রে শোষণ ও হজম হতে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। তাই আপনি সেহরিতে যত খাবেন সেই খাবার শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে পানি টেনে এনে হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করার চেষ্টা করবে। বিশেষ করে সেহরিতে আতপ চালের ভাত বা খিচুড়ি খেলে হজমে মাত্রাতিরিক্ত পানি প্রয়োজন হয় । ফলে অল্প সময়ে পানিশূন্য হয়ে যায় ।
পানিশূন্যতা ইফতারের পর তীব্র মাথা ব্যথা ও এসিডিটি কারণ হতে পারে।
♦️ ইফতারের শুরুতে ঘন শরবতের পরিবর্তে পাতলা শরবত খাওয়া উচিত। আবার ইফতারে তৃষ্ণা মেটানোর জন্য একেবারে বেশি পানি ও ঠান্ডা শরবত বা ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করা পানীয় পান থেকে বিরত থাকতে হবে। ইফতার থেকে সাহ্রি পর্যন্ত অল্প অল্প করে পানি খেতে হবে।
♦️ ইফতারে তেলেভাজা খাবার পুরোপুরি এড়িয়ে চলা উচিত এই মাসে। পানিশূন্যতার পাশাপাশি ঘন ঘন বায়ুত্যাগের প্রবণতা কমে যাবে।
♦️ ডালজাতীয় প্রোটিন পেশি দ্রুত সতেজ করে তাই ইফতারে হালিম বা ডালের স্যুপ খুবই কার্যকরী। ব্যতিক্রম যাদের হজমের সমস্যা আছে ও কিডনি রোগে ভুগছেন এই জাতীয় খাবার কম খাবেন।
♦️ দুধ জাতীয় খাবার অন্ত্রে খুব ধীরে ধীরে শোষিত হয়। তাই সেহরিতে দুধ বা টকদই খেলে একটু একটু করে সারাদিন শক্তি পাওয়া যাবে।
♦️ কিছু উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত যেমন খেজুর ও ছোলা। ইফতারিতে মিষ্টিজাতীয় খাবার খুব দ্রুত শরীরে শক্তি জোগায়। খেজুরে থাকা গ্লুকোজ খুব দ্রুত শরীরে শোষিত হয়। অন্যান্য মিষ্টিজাতীয় খাবার যেমন জিলাপি খুব কম সময়ের মধ্যে শক্তি দেয়।
♦️ ইফতারির সময় অতিরিক্ত খেয়ে ফেলবেন না। সময় নিয়ে অল্প করে খেতে হবে। সারাদিন খালি পেটে থাকার পর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কম থাকে। ইফতারির সময় দ্রুত খাবার খেতে থাকলে হঠাৎ করে অতিরিক্ত খাবারের কারণে রক্তে নিঃসৃত ইনসুলিনের প্রভাবে রক্তে থাকা অবশিষ্ট গ্লুকোজও শেষ হয়ে যায়। ফলে খুব বেশি ক্লান্তিবোধ করতে পারেন।
♦️ সাহরির সময় আঁশজাতীয় খাবার বেশি করে খেতে হবে। রমজানে অনেকেই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় পড়েন। তাদের জন্য আঁশযুক্ত খাবার খুব দরকার। পানি পানের সাথে মাঝে মাঝে ইসবগুলের ভুষি খেতে পারেন।
♦️ এই মাসে ওজন বৃদ্ধি হওয়া খুবই বিপজ্জনক ঘটনা । এসময় পেশির ওজন খুব কম পরিমাণে বাড়ে। যতটুকু ওজন বৃদ্ধি পায় বুঝতে হবে তার পুরোটাই চর্বির ওজন। তাই যতটা সম্ভব সেচুরেটেড ফ্যাট এড়িয়ে চলুন।
♦️ বাড়িতে সিনিয়র সিটিজেন, ডায়াবেটিক, কিডনি, হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীরা তাদের সঠিক খাদ্যাভ্যাসের জন্য পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেবেন।
♦️ অনেকেই আছেন গভীর রাতে উঠতে পারেন না। কিন্তু রোজা রাখার কারণে সাহ্রিতে উঠতে হয়। এজন্য ঘুমের কিছুটা ব্যাঘাত ঘটে। রোজার সময় একটু আগে ঘুমিয়ে পড়ুন। কখনোই সারারাত জেগে সেহরি খেয়ে ঘুমাতে যাবেন না। এতে শারীরিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। ঘুম কম হলে হিটস্ট্রেস দেখা দিতে পারে এবং সারাদিন রোজা রাখতে কষ্ট হয়। তাই দিনের বেলায় কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে বা ঘুমিয়ে পুষিয়ে দেওয়া যায়। তাই বলে সারাদিন ঘুম নয়। যারা কর্মজীবী তারা কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিয়ে নিতে পারেন।
♦️ তারাবির নামাজ রমজানের সময় শারীরিক পরিশ্রম সুনিশ্চিত করে। এছাড়া হালকা ব্যায়াম চালিয়ে যেতে পারেন।
রমজানের প্রতিটি দিন আপনার সুস্থতা নিশ্চিত করুন।
রমজান মাস রহমতের মাস ,নাজাতের মাস, ক্ষমার মাস।
সকলকে ক্ষমা করুন।
লেখক : মেডিকেল অফিসার, সিভিল সার্জন কার্যালয়, খুলনা

Leave A Reply

Your email address will not be published.