Take a fresh look at your lifestyle.

অভয়নগরে রমজানের বাজারে আগুন

বিপাকে নিম্নআয়ের মানুষ

0

শাহিন আহমেদ, অভয়নগর :
অভয়নগরে রমজানের বাজারে জ্বলছে আগুন। নিম্নআয়ের মানুষদের কপালে তাই দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। একজনকে জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, ভাই বাজারে আগুন। গরিব মানুষের বুঝি আর বাঁচার উপায় নেই। সয়াবিন তেল কিনলে আর কিছু কিনতে টাকা থাকেনা। সয়াবিন তেলের গায়ে যেন আগুন ধরেছে। যখন তখন কোনো কারণ ছাড়াই সবধরনের জিনিসের মূল্য বেড়েই চলেছে। আর তাতে নাভিশ্বাস উঠেছে ক্রেতা সাধারণের। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষ তাদের আয়ের সাথে ব্যয় সমন্বয় করতে পারছেন না। কয়েক মাসের ব্যবধানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষেরা। বাজার মূল্যের লাগাম কিছুতেই টেনে ধরা যাচ্ছে না। পণ্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতিতে মধ্যবিত্ত শ্রেণিও বিপাকে রয়েছে।

বুধবার নওয়াপাড়া বড়বাজার, ভাঙ্গাগেট কাঁচাবাজার, চেঙ্গুটিয়া, তালতলা, ধোপাদী, ভাটপাড়া, সুন্দলী, বাঘুটিয়া কাঁচাবাজার ঘুরে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া যায়। নওয়াপাড়া কাঁচাবাজারে হুহু করে বাড়ছে সজনে, পটল, বেগুন, ঢেঁড়স, পুইশাক, করলা, টমেটো, কচুর লতি, কুমড়া, কাঁচা মরিচের দাম। সজনে কেজি প্রতি ১৪০, কুমড়া ৪০, কচুর লতি ৬০, টমেটো ৩০, মূলা ৬০, বেগুন ৫০ থেকে ৮০ টাকা, গাজর ১০০, শসা ৭০, শিম ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, লাল শাক ৪০, কাঁচামরিচ ১০০, কলার হালি (ছোট) ৫০, লেবুর হালি ৪০ ও লাউ ৫০ থেকে ৭০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া গরুর মাংস হাড় ছাড়া ৬৪০ টাকা, বয়লার মুরগি ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, কক মুরগি ২৬০ টাকা, রুই মাছ (ছোট) ২৪০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি, তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ২৮০ টাকা, মৃগেল মাছ ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা, পেঁয়াজের কেজি ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা, খাসির মাংস প্রতি কেজি ৮শ’-৯শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আমরা বাজার মনিটরিং কমিটি করেছি। বাজার নিয়ন্ত্রণে সবরকম ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নিবাহী অফিসার মেজবাহ উদ্দীন

রসুন, আদা ও গরম মশলার দামও উর্ধ্বমুখী। প্রতিকেজি ছোট আকারের মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১০৫-১১০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ১০০ টাকা ছিল। মাঝারি আকারের মসুর ডাল কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ১০০-১০৫ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ৯৫-১০০ টাকা। চালের বাজারেও দামের উর্ধ্বমুখিতা। মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৬ টাকা। ২৮ জাতের চাল প্রতি কেজি ৫৫ টাকা, মিনিকেট ৬২ ও বাসমতি চাল ৬৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ভোজ্য তেলের দামও লাগাম ছাড়া হয়ে উঠেছে। গতবছর এ সময় ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৫৮০ টাকা, যা এখন ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খুচরাবাজারে প্রতিকেজি খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ৪০-৪৫ টাকা। চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০ টাকা।

সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের মানুষ বিপাকে পড়েছেন। বাজার করতে আসা বাঘুটিয়ার আমিনুর রহমান, ধোপাদীর রহিম শেখ, চেঙ্গুটিয়ার সুমন সরদার, ভাঙ্গাগেটের বেনজির রহমানের সাথে কথা বললে তারা বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম হু হু করে বাড়ছে। যারা দিন আনে দিন খায় তারা কিভাবে চলবে? মানুষের কাজ নেই। আর কাজ না থাকলে আয় কিভাবে হবে? সরকার চাল ও তেলের দাম নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে তার কোনো প্রভাব নেই। বাজার এখন নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে পড়েছে। বাজারে ভোজ্য তেলের দাম অস্বাভাবিক, আমাদের মতো মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের পক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমাদের আয়ের সাথে ব্যয় সমন্বয় করতে পারছি না।

ধোপাদীর ভ্যানচালক সাইফুল ইসলাম সরদার বলেন, দৈনিক ৪শ’ টাকা আয় করলেও সংসার চালোনো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। চাল, ডাল, তেলসহ জিনিসের দাম দ্বিগুণ, আমরা সাধারণ মানুষ কি করে সংসার চালাব? রোজার মাস হওয়ায় সব জিনিসের দাম বেশি। আমরা চলবো কিভাবে? অটোবাইক চালক রশিদ হোসেন বলেন, রমজান মাসে সব জিনিসের দাম বৃদ্ধি পায়। কাপড় ব্যবসায়ী রাসেল উদ্দিন বলেন মানুষের ভেতরে হাহাকার চলছে। খেতে পারে না, জামা কাপড় কিনবে কী দিয়ে? দিনের পর দিন দোকানে এক টাকাও বিক্রি হয় না। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই কীভাবে চলছি। তিনি আরও বলেন, নিম্নআয়ের মানুষ তাও হাত পাততে পারে। আমাদের পক্ষে তো তা সম্ভব না।

পাইকারি বিক্রেতা আনিচুর রহমানসহ কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা জানান, আড়তদার প্রতিনিয়ত চাপ দিচ্ছে টাকার জন্য। প্রতিদিনই দেনার বোঝা বাড়ছে। নওয়াপাড়া কাঁচাবাজারের পাইকারি বিক্রেতা বিশ্বাস ভান্ডারের মাহাজন হালিম উদ্দিন বলেন, এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার নওয়াপাড়া বাজার। সেখানে বাজার দরে ওঠানামাটা আমাদের এলাকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। গত তিনমাসে বেশ কয়েকভার টানা বৃষ্টি হয়েছে। এ বৃষ্টির কারণে তরি-তরকারি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নতুন রোপন করা গাছে এখন ফসল হয়েছে। আস্তে আস্তে দাম কমবে।

উপজেলা নিবাহী অফিসার মেজবাহ উদ্দীন বলেন, আমরা বাজার মনিটরিং কমিটি করেছি। বাজার নিয়ন্ত্রণে সবরকম ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.