Take a fresh look at your lifestyle.

স্বপ্ন জয়ে নয়নের ব্রাজিল যাত্রা

0

প্রতিবেদক :

প্রাথমিকের গণ্ডি পার হয়েই একাডেমিক পড়াশোনায় অনিয়মিত। ফুটবলকে ধ্যান-জ্ঞান করেন যশোরের বাঘারপাড়ার উপজেলার ভাঙ্গুড়া গ্রামের শহীদ মোল্লার ছেলে নয়ন হোসেন। স্বপ্ন দেখেন একদিন জাতীয় দলের হয়ে খেলার। খেলতে চান ভারতের ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক ফুটবল লিগ ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল)। সেই স্বপ্ন পূরণের পথে ১৬ বছরের কিশোরের বড় একটা ধাপ উন্নত প্রশিক্ষণ নিতে প্রিয় ফুটবলার মার্সেলোর দেশ ব্রাজিলে যাওয়ার সুযোগ।

বাংলাদেশের কিশোর ফুটবলারদের প্রশিক্ষণ নিতে ব্রাজিলে পাঠানোর উদ্যোগটা নেন ২০১৮ সালে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত জোয়াও তাবাজারা দি অলিভিয়েরা জুনিয়র। তাঁর সহযোগিতা ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের চেষ্টায় দ্বিতীয়বারের মতো ব্রাজিলে যাচ্ছে বাংলাদেশের কিশোর ফুটবলারদের একটা দল। ২০১৯ সালে গিয়েছিল চারজন। এবার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১১। সেই দলেরই একজন এই রনি।

সব ঠিক থাকলে আগামী মে মাসে ব্রাজিল যাবে ফুটবলাররা। বিকেএসপির চূড়ান্ত বাছাই শেষে নয়ন যশোরে অবস্থান করছেন। বর্তমানে জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তার মাধ্যমে পাসপোর্ট তৈরির প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যস্ত নয়ন। পুরো ব্যাপারটাই নয়নের জন্য স্বপ্নের মতো।

মিশর প্রবাসী বাবার অনুপ্রেরণায় ফুটবল আসা বলে জানান নয়ন। নয়ন বলেন, ‘আমার বাবা এলাকার বিভিন্ন স্থানে ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলতো। বাবার এই খেলা দেখে আমার খেলার প্রতি আগ্রহ জন্মায়। পরে মা দিয়েছেন বড় অনুপ্রেরণা’।

যশোর জেলা ক্রীড়া অফিসের এক প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচিতে নয়নকে প্রথম দেখে ফুটবল কোচ আজিজুল ইসলাম শুকুর। এই ক্যাম্পে ফুটবলের প্রাথমিক পাঠ নেন নয়ন। পরে বসুন্দিয়া খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির মাঠে প্রশিক্ষণ নেন। বাড়ি থেকে ১৫ কিলোমিটার বাইসাইকেল চালিয়ে নিয়মিত বসুন্দিয়া আসতো নয়ন।

বিভিন্ন স্থানে প্রশিক্ষণ শেষে নয়ন বর্তমানে থিতু হয়েছেন যশোর শামস্-উল-হুদা ফুটবল একাডেমিতে। এই একাডেমির প্রধান কোচ কাজী মারুফ হোসেন, সিনিয়র সহকারি কোচ ইমাদুল হক খান ও উপ-পরিচালক (প্রশিক্ষন) মাসুদুর রহমান টনির কাছ থেকে পেয়েছেন উচ্চতর ফুটবল প্রশিক্ষণ।

যশোর দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবল লিগের দল বসুন্দিয়া খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে পথা চলা শুরু করেন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনুর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্ট খেলার সুযোগ হয়। বিভিন্ন পর্যায়ের ভাল করার পর সুযোগ হয় খুলনা বিভাগীয় দলে। চূড়ান্ত পর্যায়ে খুলনা প্রথম ম্যাচে হেরে বিদায় নিলেও নয়নের খেলা চোখে পড়ে নির্বাচকদের। নয়নসহ টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত পর্ব থেকে ৪০ জন খেলোয়াড় বাছাই করা হয়। তাদের নিয়ে বিকেএসপিতে দুই মাসের ক্যাম্প করা হয়। সেখান থেকে সেরা ১১ জনকে বাছাই করে ব্রাজিলে পাঠানোর জন্য চুড়ান্ত করা হয়।

শামস্-উল-হুদা ফুটবল একাডেমির প্রধান কোচ কাজী মারুফ হোসেন বলেন, লেফট ও রাইট দুই ফুল ব্যাক পজিশনে খেলতে পারেন নয়ন। দুই পায়ের এই পারদর্শিতার কারণে অনেকের থেকে এগিয়ে নয়ন।’

তিনি আরও বলেন, ব্রাজিল থেকে প্রশিক্ষণ শেষে দেশে এসে যদি ধারাবাহিকতা বজায় রাখে তাহলে সে নিশ্চয় ভালো মানের ফুটবলার হবে। পাশাপাশি বয়স ভিত্তিক খেলা শেষে জাতীয় পর্যায়ে সুযোগ পাবে।

নয়ন বলেন, ব্রাজিলে প্রশিক্ষণে যাওয়ার ব্যাপারে তার মা-বাবা সহ এলাকার সকলে অনেক খুশি হয়েছে। এই পর্যন্ত আসার আগে মানসিক ভাবে সাপোর্ট করেছেন তন্ময় আহমেদ ও রকি। এছাড়া বিভিন্ন সময় আর্থিকভাবে সহায়তা দিয়েছেন চাচাতো ভাই রাশেদুল ইসলাম রিয়াজ। এই দুজনের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান নয়ন।

বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা আ ন ম আবুজর গিফারি বলেন, নয়ন বাঘারপাড়ার মুখ উজ্জল করেছে। তাকে নিয়ে আমরা গর্বিত। ব্রাজিলে যাওয়ার আগে তাকে উপজেলা প্রশাসন ও ক্রীড়া সংস্থার পক্ষে সংবর্ধনা দেয়া হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.