Take a fresh look at your lifestyle.

জন্মদিনে স্মরণঃ পটুয়া যামিনী রায়

0

বাবলু ভট্টাচার্য :

নাগরিক জীবনের রূপকার বলতে যা বোঝায়, যামিনী রায় তা নন, নগর সেই অর্থে তাঁর শিল্পের বিষয়ও নয় হয়তো। কিন্তু কলকাতার ইতিহাসের সঙ্গে জুড়ে থাকা কালীঘাটের পটচিত্রের আঙ্গিককে তিনি যেভাবে ভেঙেচুরে আধুনিক করে নিয়েছিলেন, তাতে তাঁর ছবিকে ‘নগর-পট’ নাম দিলে অত্যুক্তি হয় না… যামিনী ররায় বাস্তবিক অর্থেই আমাদের নগর লোকজীবনের রূপকার।

বাঙালির শিল্পকলা চর্চার অর্থাৎ লোকশিল্পকলার পদ্ধতির শিল্পরসিক ও প্রচারক এবং এই ধারার সম্ভবত শ্রেষ্ঠ শিল্পী যামিনী রায়। তার পিতার নাম রামতরণ রায়। শৈশব-কৈশোর গ্রামেই কেটেছিল তার। শিল্পী হওয়ার স্বভাবজাত প্রেরণা ছিল মনের মধ্যে, ফলে নিজের গ্রামাঞ্চলের মূর্তিশিল্পীদের মূর্তি তৈরি করা অত্যন্ত মনযোগ দিয়ে দেখতেন, বুঝতে চেষ্টা করতেন। বাঁকুড়া মাটির মূর্তি গড়ার কাজে চিরকালই বিখ্যাত জায়গা হিসেবে গণ্য হতো।

১৯০৩ সালে কলকাতায় এসে আর্ট স্কুলে ভর্তি হলেন যামিনী রায়। সময়টা তখন এমন ছিল যখন ভারতীয় শিল্পীরা ছবি আঁকার ক্ষেত্রে ইউরোপের অনুকরণ ছেড়ে স্বদেশের শিল্পকলার ঐতিহ্য বুঝতে চেষ্টা করছেন, প্রাচ্য রীতিতে ছবি আঁকছেন। যামিনী রায় কিন্তু তার শিল্পসাধনার প্রথম পর্যায়ে ইউরোপীয় টেকনিক আয়ত্ত করেছিলেন, তারপর খুঁজতে শুরু করেছিলেন তার নিজস্ব ছবি আঁকার রীতি কী রকম হবে। খুঁজে পেয়েও ছিলেন তিনি। তা হলো, বঙ্গদেশের গ্রামাঞ্চালের লোকশিল্পের পথ ও পদ্ধতি। বাংলার এই শিল্পচর্চার ইতিহাস সুপ্রাচীন। প্রাচীন পটের গায়ে আঁকা ছবি, পটচিত্র, আল্পনার ঢং, মাটির তৈরি হরেক রকমের খেলনা, পুতুল-ঘোড়া, মানুষ ইত্যাদি সব কিছু থেকেই তিনি তার নিজের স্টাইল তৈরি করে নিয়েছিলেন।

তার আঁকা ছবি দেখামাত্রই চেনা যায়— যেমন চেনা যায় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিংবা নন্দলাল বসুর ছবি দেখলে। প্রত্যেকেরই শিল্প রচনার বিষয় ভারতীয়, অথচ আঁকার ধরন একেবারে আলাদা। ফোক আর্ট বা লোকশিল্প থেকেই যামিনী রায় তার নিজস্ব অঙ্কনশৈলী আবিষ্কার করেছিলেন। ততদিনে তার বয়স প্রায় ৩৫ বছর।

চিত্রকর হিসেবে যামিনী রায় বিত্ত ও যশ দুটোই দেরিতে পেয়েছিলেন। নির্দিষ্ট বিখ্যাত কিছু কলারসিক ছাড়া তার ছবি প্রথম দিকে কেউ পছন্দ করতেন না। পরে অবশ্য ভারতবিখ্যাত তো বটেই, বিশ্ববিখ্যাত হয়েছেন। বহু আমন্ত্রণ সত্ত্বেও কখনো বিদেশে যাননি। নিজের আঁকা ছবি এবং দেশের শিল্পকলা বিষয়ে শিল্পীর অহঙ্কার ছিল তার; বলতেন— ‘আমরা গরিব দেশের মানুষ, এত পয়সা খরচ করে ওদের দেশে যাব কেন? ওদের অনেক পয়সা, ওরা এসে আমাদেরটা দেখে যাক।’

যামিনী রায় ১৯৫৫ সালে ভারতের রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ‘পদ্মভূষণ’ লাভ করেন।

যামিনী রায় ১৮৮৭ সালের আজকের দিনে (১১ এপ্রিল) বাঁকুড়া জেলার বেলিয়াতোড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

লেখক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

Leave A Reply

Your email address will not be published.