Take a fresh look at your lifestyle.

অভয়নগরের শশা হাত বদলে দাম চারগুণ

কৃষকের পকেটে ২০, খুচরা বাজারে ৭০ টাকা!

0

শাহিন আহমেদ, অভয়নগর :
যশোরের অভয়নগর উপজেলার সবজির স্বর্গরাজ্য খ্যাত ভৈরব উত্তর জনপদের শশা চাষিরা সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে নিঃস্ব হতে বসেছে। পাইকার ও ফড়িয়ারা এ অঞ্চলে এমন ফাঁদ পেতেছে যা কাবলিওয়ালাদেরও যেন হার মানায়। জোঁকের মতো কৃষকের উপর জেকে বসেছে তারা। ফলে একজন কৃষক সারাবছর রক্তপানি করে ফসল ফলালেও ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ঘাম ঝরিয়ে উৎপাদন করা ফসলের দামের সিংহভাগ গিলে ফেলছে পাইকার ও ফড়িয়ারা।

রমজান মাসে সারাদেশের মতো অভয়নগরেও বেড়েছে শশার কদর। উপজেলায় শশার সর্ববৃহৎ পাইকারি হাট রাঙ্গারহাটে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে শত শত মণ শশা। এখানে স্থানীয় ফড়িয়ারা কৃষকের কাছ থেকে প্রতি মণ (৪২ কেজি) শশা ক্রয় করছে ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকায়। পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বিক্রেতারা এ শশা কিনছেন প্রতি মণ (৪০ কেজি) ১৮শ’ থেকে ২ হাজার টাকায়। আর খুচরা বাজারে প্রতি মণ (৪০ কেজি) শশার দাম ২৫শ’ টাকা থেকে ২৭শ’ টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ কেজিপ্রতি কৃষকরা শশার দাম পাচ্ছেন ১৬ থেকে ২০ টাকা। বাজারে খুচরা বিক্রেতার কাছ থেকে প্রতিকেজি শশা কিনতে ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। ফলে প্রতি কেজি শশায় ফড়িয়া ও পাইকার হজম করছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা।

সরেজমিনে অভয়নগর উপজেলার শশার সর্ববৃহৎ পাইকারি বাজার রাঙ্গারহাট ও নওয়াপাড়া বাজারে খোঁজ নিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে। রাঙ্গারহাট বাজারে দেখা যায়, শতশত কৃষক তাদের উৎপাদিত শশা এ বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছেন। আর তাদের কাছ থেকে মণপ্রতি ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকায় কিনে নিচ্ছেন স্থানীয় ফড়িয়ারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সময় এ বাজারে যশোর, খুলনাসহ দুর-দুরান্ত থেকে পাইকাররা সরাসরি এসে কৃষকদের কাছ থেকে পণ্য কিনে নিয়ে যেতেন। কিন্তু হঠাৎ গত কয়েক বছর স্থানীয় ফড়িয়াদের কাছেই তাদের পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে। অজ্ঞাত কারণে এ বাজারে গত ৩-৪ বছর পাইকাররা আসা বন্ধ করে দেয়ায় এ অবস্থায় পড়তে হয়েছে তাদের। যদিও স্থানীয় ফড়িয়া ও বাজারের ব্যবসায়ীদের দাবি, বাজারে যাতায়াতের রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হওয়ায় পাইকাররা এ বাজারে আসতে চাননা। তবে কৃষকদের মাঝে এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাদের প্রশ্ন রাস্তার কারণে পাইকাররা না এলে ফড়িয়ারা কিভাবে একই রাস্তায় এ পণ্য যশোর-খুলনাসহ দুর-দুরান্তের পাইকারদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন?

পুড়াখালী গ্রামের শশাচাষি সাইফুল ইসলাম, আব্দুর রহমান, হাসানুর রহমান, বাবুল মোড়ল, মোশাররফ হোসেন, মামুনসহ রাঙ্গারহাটে শশা বিক্রি করতে আসা কৃষকরা জানান, নিজেদের প্রতিদিনের ৮-১০ ঘন্টা শ্রম বাদে বিঘাপ্রতি শশা চাষে খরচ হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। উৎপাদন ভালো হলেও বাজারে সঠিক দাম না পাওয়ায় তাদের উৎপাদন খরচ উঠবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। দিঘিরপাড় গ্রামের কৃষক ইখতিয়ার সরদার, আবুল হাসান, ইয়াসিন আলী, আজিবর মোল্যা, জাকির হোসেন বলেন, খুচরা বাজারে এক কেজি শশা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। অথচ আমরা এত কষ্ট করে শশা উৎপাদন করে কেজিতে পাচ্ছি মাত্র ১৬ থেকে ২০ টাকা। অথচ একবিঘা জমিতে নিজেদের শ্রম বাদেও খরচ হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। কিভাবে এ খরচ উঠবে এমন প্রশ্ন তাদের।

এদিকে স্থানীয় ফড়িয়ারা হঠাৎ করে লস হচ্ছে বলে দাম আরও কমিয়ে দেয়ার পায়তারা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। চাঁপাতলা গ্রামের কওছার আলী রাঙ্গারহাট শশা বাজারের বড় পাইকারি ক্রেতা। তিনি বলেন, গত তিনদিন খুলনা, বরিশাল, শরিয়তপুর ও মাদারীপুর বাজারে পাইকারি দরে শশা বিক্রি করে মণপ্রতি ২শ’ থেকে আড়াইশ’ টাকা লস হয়েছে। এ কারণে কৃষকদের কাছ থেকে আরও কম দামে শশা না কিনতে পারলে ব্যবসা টিকবেনা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাস্তার সমস্যার কারণে সরাসরি পাইকারি ব্যবসায়ীরা এ বাজারে আসে না। আমরাই এ বাজারের প্রধান ক্রেতা।
এ ব্যাপারে রাঙ্গারহাট বাজার কমিটির সভাপতি মো. সেকেন্দার আলী বলেন, এ বাজারে দুর-দুরান্ত হতে এক সময় অনেক পাইকাররা সরাসরি এসে কৃষকদের কাছ থেকে পণ্য কিনে নিয়ে যেত। তখন কৃষকও মোটামুটি ভালো দাম পেত। কিন্তু বাজারে বাইরের পাইকাররা প্রবেশ না করায় স্থানীয় মধ্যসত্বভোগীদের দ্বারস্ত হতে হচ্ছে কৃষকদের।

Leave A Reply

Your email address will not be published.