Take a fresh look at your lifestyle.

মাহে রমজান

0

বিল্লাল বিন কাশেম :

২২তম রমজানের দোয়া

اَللّـهُمَّ افْتَحْ لى فيهِ اَبْوابَ فَضْلِكَ، وَاَنْزِلْ عَلَيَّ فيهِ بَرَكاتِكَ، وَوَفِّقْني فيهِ لِمُوجِباتِ مَرْضاتِكَ، وَاَسْكِنّي فيهِ بُحْبُوحاتِ جَنّاتِكَ، يا مُجيبَ دَعْوَةِ الْمُضْطَرّينَ .

হে আল্লাহ ! আজ তোমার করুণা ও রহমতের দরজা আমার সামনে খুলে দাও এবং বরকত নাজিল কর। আমাকে তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের তৌফিক দাও। তোমার বেহেশতের বাগানের মাঝে আমাকে স্থান করে দাও। হে অসহায়দের দোয়া কবুলকারী।

আল-কুরআনে নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি লাইলাতুল কদর কোন রাত। তবে কুরআনের ভাষ্য হলো লাইলাতুল কদর রমজান মাসে। কিয়ামত পর্যন্ত রমজান মাসে লাইলাতুল কদর অব্যাহত থাকবে। এবং এ রজনি রমজানের শেষ দশকে হবে বলে সহি হাদিসে এসেছে। এবং তা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে হাদিসে এসেছে,

تَحَرُّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِي الْعَشْرِ الأوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ

রমাযানের শেষ দশদিনে তোমরা কদরের রাত তালাশ কর। [বুখারি : ২০২০; মুসলিম : ১১৬৯]

এবং রমজানের শেষ সাত দিনে লাইলাতুল কদর থাকার সম্ভাবনা অধিকতর। যেমন হাদিসে এসেছে,

تَحَرُّوْا لَيْلَةُ الْقَدْرِ فِي الْوِتْرِ مِنَ الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ

তোমরা রমাযানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত খোঁজ কর। [বুখারি : ২০১৭]

অধিকতর সম্ভাবনার দিক দিয়ে প্রথম হলো রমজান মাসের সাতাশ তারিখ। দ্বিতীয় হলো পঁচিশ তারিখ। তৃতীয় হলো ঊনত্রিশ তারিখ। চতুর্থ হলো একুশ তারিখ। পঞ্চম হলো তেইশ তারিখ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ রাতকে গোপন রেখেছেন আমাদের উপর রহম করে। তিনি দেখতে চান এর বরকত ও ফযিলত লাভের জন্য কে কত প্রচেষ্টা চালাতে পারে।

লাইলাতুল কদরে আমাদের কর্তব্য হলো বেশি করে দুআ করা। আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা নবী করিম রাসূলুলুল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, লাইলাতুল কদরে আমি কি দুআ করতে পারি? তিনি বললেন, বলবে :

اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

হে আল্লাহ, আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে ভালোবাসেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করুন। [তিরমিযি : ৩৫১৩]

ইতেকাফ :
ইতেকাফ হলো সকল কাজ থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর ইবাদতের জন্য মসজিদে অবস্থান করা। এটা হলো সুন্নত। আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা বলেন :

«أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، كَانَ يَعْتَكِفُ العَشْرَ الأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ حَتَّى تَوَفَّاهُ اللَّهُ، ثُمَّ اعْتَكَفَ أَزْوَاجُهُ مِنْ بَعْدِهِ»

রাসূলুল্লাহ রাসূলুলুল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসের শেষ দশকে মসজিদে ইতেকাফ করতেন। যতদিন না আল্লাহ তাকে মৃত্যু দান করেছেন ততদিন তিনি এ আমল অব্যাহত রেখেছেন। তার ইন্তেকালের পর তার স্ত্রী-গণ ইতেকাফ করেছেন। [বুখারি : ২০২৫]

ইতেকাফের উদ্দেশ্য :
মানুষের ঝামেলা থেকে দূরে থেকে আল্লাহ তাআলার ইবাদতে একাগ্রচিত্তে নিয়োজিত হওয়া। এ লক্ষ্যে কোনো মসজিদে অবস্থান করে আল্লাহর তরফ থেকে সওয়াব ও লাইলাতুল কদর লাভ করার আশা করা। ইতেকাফকারীর কর্তব্য হলো অনর্থক কথা ও কাজ পরিহার করে সালাত, কোরান তিলাওয়াত, জিকির-আজকার, ইস্তিগফার, দুআ ইত্যাদি ইবাদত-বন্দেগিতে লিপ্ত থাকা। তবে পরিবার পরিজন বা অন্য কারো সাথে অতিপ্রয়োজনীয় কথা বলতে দোষ নেই। ইতেকাফকারী নিজ অন্তরকে সর্বদা আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত রাখতে চেষ্টা করবে। নিজের অবস্থার দিকে খেয়াল করবে। আল্লাহর আদেশ-নিষেধ পালনের ব্যাপারে নিজের অলসতা ও অবহেলা করার কথা মনে করবে। নিজের পাপাচার সত্ত্বেও আল্লাহ যে কত নেয়ামত দিয়েছেন তা স্মরণ করে তার প্রতি কৃতজ্ঞ হবে। গভীরভাবে আল্লাহর কালাম অধ্যয়ন করবে। খাওয়া-দাওয়া, নিদ্রা ও গল্প গুজব কমিয়ে দেবে। কেননা এ সকল কাজ-কর্ম আল্লাহর স্মরণ থেকে অন্তরকে ফিরিয়ে রাখে। অনেকে ইতেকাফকে অত্যধিক খাওয়া-দাওয়া ও সাথিদের সাথে গল্প-গুজব করে সময় কাটানোর সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন। এতে ইতেকাফের ক্ষতি হয় না বটে তবে আল্লাহর রাসূলের ইতেকাফ ছিল অন্য রকম।

ইতেকাফ অবস্থায় স্ত্রী সহবাস, চুম্বন, স্পর্শ নিষেধ। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন :
وَلَا تُبَٰشِرُوهُنَّ وَأَنتُمۡ عَٰكِفُونَ فِي ٱلۡمَسَٰجِدِۗ #البقرة: ١٨٧

তোমরা মসজিদে ইতেকাফরত অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মিলিত হবে না। [সূরা আল-বাকারা : ১৮৭]

শরীরের কিছু অংশ যদি মসজিদ থেকে বের করা হয় তাতে দোষ নেই। নবী করিম রাসূলুলুল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতেকাফ অবস্থায় নিজ মাথা মসজিদ থেকে বের করতেন। তখন আম্মাজান আয়েশা রা. তাঁর মাথার চুল বিন্যস্ত করে দিতেন।

ইতেকাফ অবস্থায় মসজিদ থেকে বের হওয়ার বিধান :
ইতেকাফ অবস্থায় মসজিদ থেকে বের হওয়া তিন ধরনের হতে পারে :
এক. মানবীয় প্রয়োজনে বের হওয়ার অনুমতি আছে। যেমন পায়খানা, প্রস্রাবের জন্য, খাওয়া-দাওয়ার জন্য, পবিত্রতা অর্জনের জন্য। তবে শর্ত হলো এ সকল বিষয় যদি মসজিদের গণ্ডির মাঝে সেরে নেয়া যায় তবে মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবে না।

দুই. এমন সকল নেক আমল বা ইবাদত-বন্দেগির জন্য বের হওয়া যাবে না যা তার জন্য অপরিহার্য নয়। যেমন রোগীর সেবা করা, জানাজাতে অংশ নেয়া ইত্যাদি।

তিন. এমন সকল কাজের জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবে না যা ইতেকাফের বিরোধী। যেমন ক্রয়-বিক্রয়, চাষাবাদ ইত্যাদি। ইতেকাফ অবস্থায় এ সকল কাজের জন্য মসজিদ থেকে বের হলে ইতেকাফ বাতিল হয়ে যায়।

লেখক : উপপরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়

Leave A Reply

Your email address will not be published.